গাজীপুর, ২১ মে – গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান তার ২৮ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।
রোববার (২১ মে) সকালে গাজীপুর জেলা শহরের প্রকৌশল ভবনের হলরুমে তিনি এই ইশতেহার ঘোষণা করেন।
এ সময় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডল, আওয়ামী লীগ নেতা কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিন, অ্যাডভোকেট ওয়াজউদ্দিন মিয়া, আফজাল হোসেন সরকার রিপন, অ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খান, ইলিয়াস আহমেদ, মজিবুর রহমান, আব্দুল হাদী শামীম, অ্যাডভোকেট রিনা পারভীন, মাসুদ রানা এরশাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আজমত উল্লা খানের ২৮ দফা ইশতেহারের মধ্যে রয়েছে-
সেবার মান বৃদ্ধিকরণ: অভিজ্ঞ নগরবিদ ও প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে বিশ্বমানের একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে জনগণের সেবা নিশ্চিত করা হবে। হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স, নাগরিক সনদসহ
বিভিন্ন সনদের ফি, ইউটিলিটি বিল ইত্যাদি অনলাইনের মাধ্যমে পরিশোধের ব্যবস্থা এবং ওয়ার্ডগুলোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা ও ফ্রি ওয়াই-ফাই জোন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
হোল্ডিং কর: হোল্ডিং করের হার না বাড়িয়ে রিভিউ বোর্ডের মাধ্যমে সহনশীল পর্যায়ে চূড়ান্ত করা হবে।
অধিগ্রহণকৃত ভূমির জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদান: সরকার কর্তৃক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ভূমি অধিগ্রহণে যে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা যথাযথভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে প্রদান করা হবে।
স্বাস্থ্যসেবা: সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সকল নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা, বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের জন্য সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। স্বল্পমূল্যে অ্যাম্বুলেন্স। সার্ভিস সেবা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া, দুস্থ ও অসহায় মানুষদের মৃত্যুর পর প্রয়োজন অনুযায়ী কাফনের কাপড়ের ব্যবস্থা করা এবং সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিসহ ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর সাথে সমন্বয় করে শ্রমিক, বস্তিবাসী ও দরিদ্র মানুষের জন্য বিনামুল্যে স্বাস্থ্য কার্ড/ লাল কার্ড প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন: সরকারি ও বেসরকারি সেবাদানকারী স্থানীয় এবং আর্ন্তজাতিক উন্নয়ন সহায়তা প্রতিষ্ঠানসমুহের সাথে সমন্বয় করে সকল নাগরিকদের সুপেয় পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও বৃষ্টির পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার জন্য ‘জি আই এস’ পদ্ধতি অবলম্বন করে সার্ভের মাধ্যমে ড্রেন ও খালগুলো অবৈধ দখলমুক্ত করে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে উপযোগী করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রতিবন্ধী নাগরিক এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য পর্যাপ্ত আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে।
গুরুত্ব বিবেচনায় সড়ক উন্নয়ন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট জনের নামে রাস্তার নামকরণ ও নির্মাণ কাজের গুণগতমান নিরীক্ষার জন্য শক্তিশালী মনিটরিং টিম গঠন করা হবে।
যানজট নিরসন, পার্কিং, ফুটপাতসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ: পথচারীবান্ধব ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের জন্য ফুটপাত নেটওয়ার্ক, যানজট নিরসনের জন্য বিআরটিএ, ট্রাফিক পুলিশ এবং পরিবহন মালিক সমিতি, শ্রমিক সংগঠন সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে সাথে নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে বহুতল ও আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং কমপ্লেক্স নির্মাণ, নতুন ফুটওভার ব্রিজ, আধুনিক বাসস্ট্যান্ড ও বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ এবং রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করে নাগরিকদের রেলে যাতায়াত সহজীকরণে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
সংযোগ সড়ক নেটওয়ার্ক: অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে জয়দেবপুর রেলক্রসিংয়ের ওপর ফ্লাইওভার নির্মাণসহ সরকারের সহযোগিতায় সমগ্র গাজীপুরে সংযোগ সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
শিক্ষা: শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রয়োজনে জিসিসি’র অধীনে কারিগরি ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। নগরীতে অবস্থিত স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও এতিমখানাসমূহে সাহায্য প্রদান করা হবে। এছাড়াও অনাথ, গরিব, যোগ্যতাসম্পন্ন মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। সিটি করপোরেশনের নিজস্ব পাঠাগারের আধুনিকীকরণ, নতুন পাঠাগার প্রতিষ্ঠা এবং ব্যক্তি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত পাঠাগার সমূহকে সহয়তাপ্রদান করা হবে।
শ্রমিক-কর্মচারী ও বস্তিবাসীদের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতকরণ: পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারী ভাই-বোনদের অধিকার সংরক্ষণে ও নির্যাতন প্রতিরোধে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নিয়মিত মনিটরিং করা হবে। শ্রজীবী মায়েদের শিশুদের পরিচর্যার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে ‘ডে-কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠা এবং বিকেল ৫টার পর তাঁরা যেন টিসিবি’র সরবরাহকৃত খাদ্যসামগ্রী পেতে পারেন সেই উদ্যোগসহ সরকার ও মালিক পক্ষের সহযোগিতায় বেতন-ভাতাদি, নিরাপত্তা, বাসস্থান ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে সহয়তা প্রদান করা হবে। গাজীপুর মহানগরীর সকল বস্তিবাসীর প্রাপ্ত নাগরিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ী সমাজের ভোগান্তি কমাতে জিসিসির আঞ্চলিক কার্যালয়ে হেল্প ডেক্স তৈরি করা হবে।
শিল্পকলা ওয়ার্ড সেন্টার ও ডিজিটাল কমান্ড সেন্টার নির্মাণ: তরুণদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি ও উন্নত ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের লক্ষ্যে এবং একইসাথে বয়স্ক ও শিশুদের মিলনস্থল ও বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ড সেন্টার’ নির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।সেগুলোতে কমিউনিটি সেন্টার, সেবাদান কেন্দ্র, আত্মরক্ষাসহ বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, শিক্ষা কেন্দ্র,পাঠাগার প্রতিষ্ঠাসহ বহুমূখী ব্যবহার উপযোগী করা হবে। ডিজিটাল কমান্ড সেন্টার তৈরির মাধ্যমে নাগরিক সেবা ও নিরাপত্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং স্মার্ট নেইবারহুড কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। পারস্পরিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিয়মিত পাড়া উৎসবসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হবে ।
বর্জ্য ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ: বর্জ্য পরিশোধন কেন্দ্র স্থাপন এবং থ্রিআর পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে বর্জকে জ্বালানি শক্তিতে রূপান্তরিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে বর্জ্য সংরক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে বর্জ্য ও দুর্গন্ধমুক্ত করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রসারের উদ্যোগ: নগরীর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে নতুন অডিটোরিয়াম এবং কালচারাল কমপ্লেক্স, মুক্তমঞ্চ নির্মাণসহ মিলনায়তনগুলো সংস্কার, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে সহযোগিতার পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে শিল্পকলা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং মেয়র নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করা হবে।
ক্রীড়া উন্নয়ন: ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার জন্য উপযুক্ত মাঠ তৈরি করা, মেয়র গোল্ডকাপ ফুটবল ও ক্রিকেট প্রতিযোগিতার উদ্যোগ গ্রহণ এবং কারাতে, সাঁতারসহ বিভিন্ন খেলার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
সংবাদকর্মীদের সহায়তা: গাজীপুরে অবস্থিত প্রেসক্লাবসমূহের উন্নয়ন ও সংবাদকর্মীদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হবে। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকগণ যেন কোন হয়রানির শিকার না হন, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ও সুবিধাবঞ্চিতদের সহায়তা প্রদান: বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সামাজিক সুযোগ- সুবিধা প্রদান, প্রতিবন্ধী ও বিশেষ শিশুদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, হতদরিদ্র, ছিন্নমূল, ভবঘুরে ভিখারিদের পুর্নবাসন ও সুবিধা বঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী যুবক/যুব মহিলাদের অত্মকর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
পার্ক ও উদ্যান নির্মাণ ও উন্নয়ন: গাজীপুর মহানগরীতে বিদ্যমান পার্ক ও উদ্যানগুলোর প্রয়োজনীয় সংস্কার ও উন্নয়ন করাসহ নতুন পার্ক নির্মাণ, শিশুদের জন্য বিশেষায়িত পার্ক নির্মাণ এবং নদী সংলগ্ন স্থানকে নান্দনিক, পায়ে হাঁটা ও বিনোদন উপযোগী করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ঈদগাহ, কবরস্থান ও শ্মশানের উন্নয়ন এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহায়তা: প্রতিটি ওয়ার্ডে ঈদগাহ ও কবরস্থান নির্মাণ, শ্মশানগুলোর উন্নয়ন ও নির্মাণ, নগরীর উপযুক্ত স্থানে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্য সমাধিক্ষেত্র তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ, আলেম-মাশায়েখসহ সকল ধর্মীয় নেতাদের সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে মসজিদ, মাদরাসা, মন্দির, গির্জায় সহায়তা প্রদান করা হবে।
জলাশয় দখলমুক্তকরণ, নদী ও পরিবেশ রক্ষা, মশক নিধন: পরিবেশ অধিদপ্তর, সংশ্লিষ্ট শিল্প- কলকারখানা, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও স্থানীয় অধিবাসীদের সহযোগিতায় নদী ও জলাশয়কে দখলমুক্ত, দোষণমুক্ত ও সংস্কারের লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ এবং নগরীর উপযুক্ত স্থানে বৃক্ষ রোপনের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। নিয়মিত মশক নিধনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
জিসিসির কাঁচাবাজার ও মার্কেট আধুনিকীকরণ ও হকারদের পুর্নবাসনের ব্যবস্থা: সকল কাঁচাবাজার ও মার্কেটগুলোর আধুনিকায়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং হকারদের পূর্নবাসন ও কর্মসংস্থানের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ফ্রাইডে মার্কেট স্থাপন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।পরিবেশবান্ধব আধুনিক কসাইখানা নির্মাণ করা হবে। নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হবে।
বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়: গাউক, রেলওয়ে, বিটিআরসি, তিতাস গ্যাস, পল্লী বিদ্যুৎ, ডেসকোসহ গাজীপুর মহানগরীতে বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সমূহের সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহণ: বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য, ভাতৃত্ববোধ, সম্প্রীতি রক্ষা ও সুসসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য জিসিসি কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
গাজীপুরের ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ: গাজীপুরের ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য জাদুঘর ও আর্ট গ্যালারি স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
মাদকমুক্ত নগর গড়ে তোলা: গাজীপুরকে মাদকমুক্ত মহানগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংগঠন, যুব সংগঠন, ক্লাব ও প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় মাদকসেবীদের সুচিকিৎসার ও সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে এনে কর্মসংস্থানের এবং মাদক বিরোধী সামাজিক আন্দোলনকে আরও গতিশীল করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
নতুন আয়ের উৎস সৃষ্টি: আধুনিক বিপনী বিতান তৈরি এবং যুব নারী ও পুরুষ উদ্যোক্তা, দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান এবং প্রবাসীদের সাথে যোগাযোগ করে গাজীপুরে বিনিয়োগে উৎসাহিত করাসহ নতুন আয়ের উৎস তৈরি করা হবে।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা: সিটিজেন চার্টার বা নাগরিক সনদ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে। সিটি করপোরেশনের প্রতিটি বিভাগকে দুর্নীতিমুক্ত রেখে জিসিসির সার্বিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। ‘জনতার মুখোমুখি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মহানগর ও ওয়ার্ড ভিত্তিক সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
আজমত উল্লাহ খান বলেন, আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচন আমাদের সকলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর ওপর নির্ভর করছে আমাদের ভবিষ্যৎ নগর জীবন। যেকোন প্রতিষ্ঠান থেকে যথাযথ সেবা পেতে হলে সে প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে সৎ, যোগ্য ও অভিজ্ঞ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা অনিবার্য। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত নেতৃত্বের অদক্ষতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে আমরা তা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকে বর্তমান সরকার গাজীপুর সিটির উন্নয়নে বহু সহায়তা প্রদান করেছে। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা, সততা ও স্বচ্ছতার অভাবে সরকারি বরাদ্দকৃত অনেকাংশ অর্থের ব্যয় না হওয়ায় শহরের সমস্যাগুলোর সমাধান করা সম্ভব হয়নি। অনেক সমস্যা বিদ্যমান রয়েছে, যা সমাধানে প্রয়োজন সৎ ও যোগ্য প্রতিনিধি, যিনি জনগণকে সম্পৃক্ত করে সরকারের বিভিন্ন দফতর ও অধিদফতরের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে নাগরিকদের এসব সমস্যার সমাধান করবেন।
তিনি বলেন, শৈশবকাল হতে আমি মানবসেবায় নিয়োজিত থেকে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গাজীপুর মহানগরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। প্রায় ৫৮ বছর যাবত আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত আছি। আপনারা জানেন যে, ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আমি টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান ও মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। সে সময় টঙ্গী পৌর এলাকার অভূতপূর্ব উন্নয়নের প্রেক্ষিতে আমি ৪ বার বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান/ মেয়র হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছি ও টঙ্গী পৌরসভা ৪ বার শ্রেষ্ঠ পৌরসভার স্বীকৃতি লাভ করেছে। আপনারা জেনে খুশি হবেন, আমি জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রায় ২৮টি দেশে স্থানীয় সরকার পরিচালনা বিষয়ক বিভিন্ন সভা, সেমিনার ও কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে সিটি কর্পোরেশনকে কিভাবে আধুনিক নগরী রূপে গড়ে তোলা যায় সে বিষয়ে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করেছি। আপনাদের মূল্যবান ভোটে মেয়র নির্বাচিত হলে আমি একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধমে রাস্তা, ড্রেন, কালভার্ট, ব্রিজসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি সেবামূলক খাতগুলোকে আরো শক্তিশালী করে সেবার মানকে সুনিশ্চিত করতে এক বৎসর, দুই বৎসর ও পাঁচ বৎসর মেয়াদি তিন স্তর বিশিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করবো।
আজমত উল্লা খান বলেন, গাজীপুর বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ শিল্পশহর। এ নগরীতে রয়েছে অসংখ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ডুয়েট, ইসলামিক ইউনির্ভাসিটি অব টেকনোলজি, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজ, শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ, রয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, সমবায় কারখানা, টাকশাল, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারসহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু জাতীয় প্রতিষ্ঠান, আছে সিরামিক, ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিসহ অসংখ্য পোশাক ও অন্যান্য শিল্প কারখানায় কর্মরত তাই- বোনেরাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত লাখো মানুষের বসবাস। আমি বিশ্বাস করি, আপনারা যদি আমাকে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করেন তাহলে প্রশাসনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সিটি মাস্টারপ্ল্যান এবং জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনকে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত একটি সমৃদ্ধ সুষম নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারবো ।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তাদের পরামর্শ ও সুপারিশের ভিত্তিতে সিটি করপোরেশনের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়ন এবং বাস্তবয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সূত্র: দেশ রূপান্তর
আইএ/ ২১ মে ২০২৩