শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:১০ পূর্বাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

লাখ ছুঁয়েছে রডের দাম

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: রবিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২২

দীর্ঘদিন ধরেই ক্রেতার নাগালের বাইরে রয়েছে রডের দাম। জাহাজ ও কনটেইনার ভাড়ার পাশাপাশি ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে এতদিন টনপ্রতি পণ্যটি বিক্রি হয়েছিল ৮৭ হাজার টাকায়। কিন্তু বর্তমানে টনপ্রতি রডের দাম ঠেকেছে ৯৫ হাজার টাকায়। দফায় দফায় দাম বাড়ার কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে উৎপাদন কমে যাওয়া ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিকে। শুধু রডই নয়, একই কারণকে পুঁজি করে নির্মাণকাজের মূল্যবান উপকরণ সিমেন্টের দাম বস্তাপ্রতি বেড়েছে ২০ টাকা। নির্মাণসামগ্রীর দাম আকাশছোঁয়া হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন নির্মাণ খাত সংশ্লিষ্টরা।
রড তৈরির প্রধান কাঁচামাল লোহার টুকরা এবং সিমেন্ট তৈরির অন্যতম কাঁচামাল ক্লিংকার। এই দুই উপাদানই আমদানি নির্ভর। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটন লোহার টুকরায় ৫০ ডলার এবং ক্লিংকারের দাম টনপ্রতি ১৫ ডলার বেড়েছে। বর্তমানে প্রতিটন লোহার টুকরা ৪৯০ ডলার এবং ক্লিংকার ৭৯ ডলারে কিনতে হচ্ছে বলে জানান উদ্যোক্তারা। দফায় দফায় নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ার কারণে সংকটের মুখে পড়েছে আবাসন খাত। অপরদিকে খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্পের কাজ ২০ শতাংশে নেমে এসেছে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদাররা।

শনিবার (১৩ আগস্ট) নগরের একেখান, ২ নম্বর গেইট, নাসিরাবাদসহ বেশকিছু এলাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুমাসের ব্যবধানে প্রতিটন রডে আট হাজার টাকা দাম বেড়েছে। ওই সময় প্রতিটন ৭৫ গ্রেডের রড ৮৭ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ৯৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৬০ গ্রেডের রড আগে ৭৩ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭৮ হাজার টাকায়। অন্যদিকে প্রতি বস্তা সিমেন্টে (৫০ কেজি) ২০ টাকা বেড়ে বিভিন্ন কোম্পানির সিমেন্ট ৫৩০ থেকে ৫৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নগরের দুই নম্বর গেইটের ইসলাম ট্রেডার্সের মালিক ইদ্রিস মিয়া সিভয়েসকে বলেন, রডের দাম বাড়ার পেছনে তো আমাদের কোন হাত নেই। রড প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো রডের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই আমরা বাড়তি দরে কিনে বাড়তি দরেই বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা ক্রেতার দেখা পাচ্ছি না। এ কারণে আমাদের বেচাবিক্রিও কমে গেছে।

এদিকে নগরের একেখান এলাকার শাহ আলম ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী শাহ আলম ভূঁইয়া সিভয়েসকে বলেন, রডের এমন বাড়তি দাম দেখে শুধু ক্রেতা নয়, আমরাও রীতিমত অবাক। গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে উৎপাদন কমে গেছে। ফলে রডের সরবরাহও আগের তুলনায় কম। পাশাপাশি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে আমাদেরকে বাড়তি পরিবহন খরচ দিয়ে পণ্য আনতে হয়। তাই রডের দামটা বাড়তি।

রড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কেএসআরএমের ডিরেক্টর (করপোরেট) সামশুল হক সিভয়েসকে বলেন, বিশ্ববাজারে রড তৈরির প্রধান কাঁচামাল লোহার টুকরার দাম আগে ছিল ৪৩০ থেকে ৪৪০ ডলার। এখন তা বেড়ে ৪৮০ থেকে ৪৯০ ডলার হয়েছে। পাশাপাশি রড তৈরির কাঁচামাল কারখানায় আনতে বাড়তি পরিবহন খরচ গুণতে হচ্ছে। গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট তো আছেই। এ কারণে উৎপাদনও কিছুটা কমেছে। মোট কথা, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে রডের দামটা বেড়ে গেছে।

চট্টগ্রামে বর্তমানে ১২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। এসব কাজে জড়িত রয়েছেন প্রায় চার হাজার ঠিকাদার। এখন পর্যন্ত এসব প্রকল্পের প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে রড, সিমেন্ট, পাথর সবকিছুর দাম বেড়েছে। প্রকল্পের খরচও বেড়ে গেছে। তাই প্রকল্পের কাজে কিছুটা ধীরগতি নেমে এসেছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের ঠিকাদাররা।

চট্টগ্রাম এলজিইডি ঠিকাদার সমিতির সভাপতি মহিউদ্দীন সেফুল সিভয়েসকে বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রামে সরকারের প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলমান আছে। শুধু রডের দাম নয়, একাধারে সিমেন্ট, পাথর, বালু, বিটুমিন সবকিছুর দাম বেড়েছে। আমরা এখন যে প্রকল্পগুলো নিয়ে কাজ করছি তা ২০১৮ সালের শিডিউল। তাই এসব প্রকল্পে দর পুনর্নির্ধারণ করবে না সরকার। তাই প্রকল্প ব্যয় যা আছে তাতেই খরচ সামলাতে হচ্ছে। আমরা খুব সংকটের সময় পার করছি। চার বছর আগে নির্মাণসামগ্রীর দাম এত বেশি ছিল না। তবুও আমরা নির্ধারিত বাজেটে কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি।

বেকায়দায় পড়ার একই গল্প শোনালেন চট্টগ্রামের আবাসন খাত সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি, ফ্ল্যাটের দাম বাড়া-কমা নির্মাণসামগ্রীর উপর নির্ভর করে। সবকিছুর দাম বাড়তি। কোন কিছুই নাগালের মধ্যে নেই। তাই আবাসন খাত সংশ্লিষ্টরা অনেকেই প্রকল্পের কাজ বন্ধ রেখেছেন। আবার কেউ খুব ধীর গতিতে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন।

রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি আবদুল কৈয়্যুম চৌধুরী সিভয়েসকে বলেন, যেভাবে নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ছে এতে করে আমাদের নিঃশেষ হতে আর বেশিদিন সময় লাগবে না। আমরা নিজেরাই খুব সংকটে সময় পার করছি। আমরা ক্রেতার কাছ থেকে এডভান্স টাকা নিয়ে ফ্ল্যাটের কাজ শুরু করি। তাদের কাছ থেকে যে হারে টাকা নিয়েছি তার চেয়ে আমাদের উৎপাদন খরচ এখন অনেক বেশি। কিন্তু আমরা আবার ক্রেতার কাছ থেকে বাড়তি টাকা চাইতে গেলেও দ্বন্দ্ব তৈরি হবে। একটা ফ্ল্যাটের কাজ শেষ করে ডেলিভারি দিতে আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। তাই নির্মাণসামগ্রীর দাম স্থিতিশীল রাখা সরকারের এখন নৈতিক দায়িত্ব বলে আমি মনে করি।


আরো খবর: