বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৮ পূর্বাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

র‍্যাবের অভিযানে আরসার অর্থ সম্পাদক গ্রেপ্তার, অস্ত্র ও কার্তুজ উদ্ধার

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৩

কক্সবাজারের উখিয়ায় মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) ওলামা কাউন্সিল কমান্ডার ও অর্থ সম্পাদক মওলানা মোহাম্মদ ইউনুসকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট ) রাত ১০ টায় উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের তাজনিমার খোলা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশী রিভলবার ও ৬ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।

বর্তমানে তিনি উখিয়ার চেংখালীর ক্যাম্প ১৯ এর ব্লক- সি/১৩ তে শরনার্থী হিসেবে রয়েছেন।

র‌্যাব জানায়, আরসার অর্থ সম্পাদক ইউনুস মিয়ানমারে থাকাবস্থায় মংডু টাউনশীপের মেরুল্লা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। তিনি ২০১৬ সালে মৌলভী আরিফুল্লাহ এর মাধ্যমে ‘আরসা’ তে যোগ দেন। তিনি আরসার আমীর আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী, ওস্তাদ খালেদ, সমউদ্দিনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আলেম-ওলামা, হেডমাঝি, সাবমাঝি ও সাধারণ রোহিঙ্গাদের সাথে মিটিং করে আরসা সংগঠনে যোগদানের জন্য উৎসাহিত করতেন। এছাড়াও তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় আরসার অর্থ সম্পাদকের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তার আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জানা যায়, আরসার কার্যক্রমের জন্য প্রতিমাসে সৌদি আরব থেকে আবুল বশর ১ লক্ষ টাকা, মৌলভী ইসমাইল ১ লক্ষ টাকা, পারভেজ ১৫ হাজার টাকা, আমেরিকা থেকে জহুর আলম ১ লক্ষ টাকা, মালয়েশিয়া থেকে হারুন ১ লক্ষ টাকা, থাইল্যান্ড হতে হারুন ৬৫ হাজার টাকা এবং সৌদি আরব থেকে মোঃ ইসলাম প্রতিবছর ১ লক্ষ টাকাসহ সর্বমোট ৫ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা পাঠায়। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়া থেকে অজ্ঞাত রোহিঙ্গা টাকা পাঠান। তাছাড়া মায়ানমারের আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গাদের গ্রাম হাতে চাঁদা সংগ্রহ করা হয়। প্রতিমাসে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ১০-১৫ লক্ষ টাকা আরসার ক্যাম্প জিম্মাদারদের নিকট আসে। এই টাকা দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় ও দলের সদস্যদের আর্থিক সহযোগিতা/বেতন দেওয়া হয়। বর্তমানে মাওলা ইউনুসের নিকট তার বিকাশ একাউন্ট আনুমানিক ৩৩ থেকে ৩৭ হাজার টাকা রয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে ইউনুস আরও জানিয়েছেন, আরসার সংগঠনের জন্য গত এপ্রিল হতে জুন পর্যন্ত ৩ মাসে আরসা সমর্থিত বিভিন্ন গ্রুপ, ব্যক্তি ও সংগঠন হতে প্রায় ১৩ লাখ ৮১ হাজার ৬৯৫ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে।

আসামির বরাত দিয়ে র‌্যাব আরও জানায়, আরসাতে ২০০ থেকে ২৫০ জন সদস্য রয়েছে। তারা ২০১৬ সালে মায়ানমারে তারাশুখ থানায় আক্রমন করে ৭০টি একে-৪৭ অস্ত্র লুট করে। আরসা সদস্যরা অস্ত্রগুলো ক্যাম্পে নিয়ে আসার পর ক্যাম্প ৬ এর সমিউদ্দিন ও ক্যাম্প-১৭ এর হোসেনের নিকট জমা রাখা হয়। পরে তা বিভিন্ন দলে ভাগ করা হয়।

র‌্যাব-১৫ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবদুস সালাম চৌধুরী বলেন, গ্রেপ্তার আরসা কমান্ডারের কাছ থেকে আরসা সদস্যদের বিভিন্ন সাংকেতিক শব্দ পাওয়া গেছে। তাছাড়া তার দেয়া তথ্যে জানা গেছে বর্তমানে আরসার কাছে প্রায় ২০টি টাইপ-৭৪ এলজি, জেআরজি অস্ত্রসহ ও বিপুল পরিমানে হাত বোমা (হ্যান্ড গ্রেনেড) রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ইউনুসের বিরুদ্ধে হত্যা, পুলিশ এসল্ট ও আগুন লাগানোর দায়ে উখিয়া থানায় ৫ টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ২০২২ সালের ১৫ অক্টোবর হেডমাঝি আনোয়ার কুপিয়ে হত্যা, ২০২৩ সালের ৩ মার্চ রোহিঙ্গা মোহাম্মদ রফিক গুলি করে হত্যা, ১৩ মার্চ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লাগনো, ১১ এপ্রিল এবং ৯ জুন এপিবিএন’র উপর হামলা। এছাড়াও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরো কয়েকটি হত্যাকান্ডের সাথে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন বলে স্বীকার করেছেন। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ২০২১ সালে ২২ অক্টোবর রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১৮ এর একটি আবাসিক মাদ্রাসায় অবস্থানরত ৬ জন ছাত্র-শিক্ষক হত্যা, ২০২৩ সালের ৩ মার্চ ইসলামী মাহাযের নেতা রফিক এবং ১৮ মার্চ ইসলামী মাহাযের নেতা হাফেজ মাহবুবকে হত্যা।

এএসপি বলেন, আসামির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে ব্যবস্থা গ্রহন করে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।


আরো খবর: