শিরোনাম ::
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মঞ্জু ও সম্পাদক ফুয়াদ রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিয়ে ভোলায় জিয়া মঞ্চের লিফলেট বিতরণ  আবারও গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাইলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা দুই সপ্তাহের জন্য মুম্বাই যাচ্ছেন শাকিব চকরিয়ায় ফিল্মিস্টাইলে গাড়িতে তুলে প্রবাসিকে অপহরণের চেষ্টা- মারধর, পথচারীকে গাড়ি চাপা মেঘনায় বাল্কহেড-স্পিডবোট সংঘর্ষে নিহত অন্তত ২, একাধিক নিখোঁজ লন্ডনে সস্ত্রীক মির্জা আব্বাস, জানালেন কবে দেশে ফিরবেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে আবার অবসরের ঘোষণা তামিমের লন্ডনে যাওয়ার সময় চিত্রনায়িকা নিপুণ আটক ঢাকায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে দেশে বিদেশে সম্পাদক নজরুল মিন্টোর সাক্ষাৎ
শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৪৪ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

মাদক ও স্বর্ণ চোরাচালানের গডফাদার সাইফুল ধরাছোঁয়ার বাইরে!

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: বুধবার, ২২ মে, ২০২৪

মায়ানমার থেকে অবৈধভাবে প্রবেশ করা সিগারেট, স্বর্ণের বার, ইয়াবাসহ বিভিন্ন চোরাইপন্যের গডফাদার হিসাবে নিজেকে দীর্ঘদিন যাবত আড়ালে রেখেছিল সাইফুল নামে এক যুবক। সম্প্রতি এই যুবকের আলিশান ও বেপরোয়া জীবনযাপন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে নজরে আসে গণমাধ্যম কর্মীদের। পরে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে তার ভয়ংকর তথ্য।

কক্সবাজারের উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের দরগাহ বিল এলাকায় একলাখ ৬০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার মামলার এজাহারভুক্ত ২নং আসামি সাইফুল ইসলামের পিতার তথ্য ও এই কাজে সংশ্লিষ্ট পাওয়া যায়নি বলে চার্জশিট থেকে বাদ দিয়েছিল তদন্ত কর্মকর্তা। যদিও সে ওই মাদককের প্রকৃত মালিক ১ নং আসামী সাদ্দামকে দিয়া পাচার করার উদ্যোশ্যে দিয়েছিল সাইফুল ইসলাম। এমন অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী

জানা গেছে, ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর উখিয়া থানায় সাইফুলসহ তিনজনের বিরুদ্ধে প্রায় চার কোটি আশি লক্ষ টাকা দামের মাদক উদ্ধারে মামলা করেছিলেন কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির নায়েক মো. রেজাউল করিম। যার মামলা নং: ৮৮/৭৭১

২০২১ সালের ২৪শে নভেম্বর সেই মামলার পুলিশী চার্জশিট দেওয়ার সময় কৌশলে ২নং আসামি সাইফুল ইসলাম বাদ পড়ে যায়।
তৎকালীন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উখিয়া থানার সাবেক উপ-পরিদর্শক আজমীর হোসেন অন্যত্রে বদলি জনিত কারণে তার মোবাইল নাম্বারে কল এবং তার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করার সুযোগ হয়নি।

ওই মামলার অপর দুজন ছিলেন পাচারকারী মাত্র। মো. সৈয়দ আলমের পুত্র মো. সাদ্দাম হোসেন ও বদিউর রহমামের ছেলে মো. রফিক মিয়া। তারা দুজনই সাইফুলের বিশ্বস্ত এর আগে উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের দরগাহ বিল এলাকার ঠান্ডা মিয়ার বাগান এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে একলাখ ৬০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে বিজিবি।

স্থানীয়রা জানান, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউপির আজ্যুখাইয়া গ্রামের মো. আবদুর রহমানের ছেলে সাইফুল। সে একজন চিহ্নিত মাদক, স্বর্ণ, সিগারেট, বিভিন্ন কালোবাজারি ব্যবসায়ীর বড় মাফিয়া। অল্প বয়সে সে মায়ানমার গড়ে তুলেছে বিশাল সিন্ডিকেট। প্রশাসনের চোঁখ দিয়ে সে দীর্ঘদিন যাবৎ এসব অবৈধ উপায়ে অর্জন করেন অটেল সম্পদ ।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রায় ১৫ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে অভিযোগপত্র থেকে নিজের নাম বাদ দিয়েছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে ইয়াবা ছাড়াও চট্টগ্রামে আরেকটা সিগারেটের মামলা ছিল। এসব মামলায়ও একই কায়দায় পার পেয়ে গেছেন সাইফুল।

তারা আরো জানায়, সাইফুল অত্যান্ত চালাক প্রকৃতির ছেলে। সে যাকে পাচারের জন্য দায়িত্ব দেন তাকেসহ তার পুরো পরিবার জিম্মি করে রাখেন। যদি তার মাদক আটক হয় তাহলে তার নাম যেন না আসে সেই ব্যবস্থা ঠিক রেখেই পাচারকারীদের সাথে কন্ট্রাক্ট করেন। ২০২১ সালে ১ লাখ ৬০ হাজার পিস ইয়াবা পাচারের ঘটনায় ১নং আসামী সাদ্দামের সাথেও তাই ঘটেছে। তার পুরো পরিবারকে এখন পর্যন্ত জিম্মি করে রেখেছেন।

অভিযানে অংশ নেওয়া বিজিবির নায়েক মো. রেজাউল করিম বলেন, আমরা আমাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাদক কারবারিদের আটক করি। কিন্তু অপরাধীরা উপযুক্ত শাস্তি না পেলে আমাদের পরিশ্রম ব্যর্থ হয়।

এদিকে তার পারিবারিক সূত্রে জানা যায় , অভাবের তাড়নায় তার বাবা প্রবাসে পাড়ি জমান, কিন্তু সেখানে গিয়ে জীবনের মোড় ঘোরাতে পারেননি। পরিবারের ভরণপোষণ দিতে পারতেন না। ফিরে আসেন খালি হাতে-ই। পরবর্তীতে পরিবারের খরচ জোগাড় করতে না পেরে তার মায়ের সাথে বিভিন্ন কিছু নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় উখিয়ার হাজি পাড়া থেকে আরেকটা বিয়েও করেন। ওই পরিবারের আরেকটি সন্তান জন্ম নেয়। তাই ওই পরিবারের একমাত্র ভরণপোষণের দায়িত্বভার এসে পড়ে সাইফুলের হাতে। অল্প বয়সে পরিবারের দায়িত্ব কাধে চলে আসায় জড়িয়ে পড়েন কালো জগতে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সময় সীমান্তবর্তী বাড়ি হওয়ায় সারা দেশব্যাপী একটি মাদকের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেন সাইফুল। সে দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে ইয়াবা চোরাইমালের ব্যবসা নিয়ন্ত্রনে নেন। পাশাপাশি চালিয়ে যান স্বর্ণ ব্যবসাও। এইসবের পাশাপাশি জড়িয়ে পড়েন বার্মিজ সিগারেট ব্যবসায়। অথচ রোহিঙ্গা আসার আগে মিয়ানমার থেকে বিভিন্ন অবৈধ বার্মিজ পণ্য এনে বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করতেন। নির্বিঘ্নে চলতে থাকা এই মাদককারবারে কেউ বাঁধা হয়ে দাঁড়ালে অস্ত্রসহ প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করতে দেখা যায় বলেও জানিয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা।

সূত্র জানান, সাইফুলের রয়েছে একাধিক রোহিঙ্গা মাদক পাচারকারী দল। তারাই উখিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক মাদক প্রবেশ করায়। পরবর্তীতে সাইফুল মাদকগুলো তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কিছু মাল নিজ হেফাজতে এবং অন্য কিছু মালামাল রাজাপালং ইউনিয়নের উত্ত্র পুকুরিয়া তার শাশুড় বাড়ি বাড়িতে স্টক করে। পরবর্তীতে তারই আপন শালা রায়হানসহ মিলে সু-কৌশলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাইকারি ও খুঁচরা ব্যবসায়ীদের হাতে সুকৌশলে পৌঁছে দেন।

মাদকগুলো বহন করার কাজে বিলাসী চাহিদা সম্পন্ন উঠতি বয়সী যুবক-যুবতী, এনজিও কর্মী ও বেকারদের সহ কমপক্ষে শতাধিক লোকজনকে তার এই কাজে সহযোগী হিসেবে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। মাঝেমধ্যে ওই পাচারকারী দলের কেউ আটক হলেও বরাবরেই অধরা থেকে যান সাইফুল।

প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা এসব অবৈধ ব্যবসায় বর্তমানে সফল হয়ে নামে বেনামে গড়ে তুলেন অনেক সম্পদ। সম্প্রতি সাইফুল উপজেলার ব্যস্ততম স্টেশন কোটবাজারে দুইটি দোকান ক্রয় করেছেন প্রায় ৭০ লক্ষ টাকায়। নামে-বেনামে কক্সবাজারসহ উখিয়ার বিভিন্ন জায়গায় জমি ক্র‍য় করেছেন কোটি টাকার। এই দুই যুবকের বয়স হবে সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ২৬ বছর। তারা এত অল্প বয়সে এসব অবৈধ ব্যবসা করে উখিয়াসহ পুরো কুতুপালং রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তাছাড়া ২০২২ সালে সাইফুল ইসলাম ২৩ বছর বয়সে অবৈধ টাকায় নিজেকে পাপমুক্ত করতে ওমরা হজ্ব পালন করেন।

এ অনুসন্ধানে আরো উঠে আসে, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে ২টি সিএনজি ভর্তি সিগারেট ও ৫০ হাজার পিস ইয়াবা নিয়ে পাচারকালে বিজিবি ধাওয়া করলে কামারিয়াবিল এসে জনগনের হাতে লুটপাট হয়ে যায় প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার অবৈধ মালামাল। এছাড়া ২০২৩ সালের আরো একটি ঘটনা স্বর্ণের বার মোটরসাইকেলযোগে পাচারের কালে রেজুখাল ব্রিজে বিজিবির চেকপোস্ট তল্লাশীতে প্রায় কোটি টাকার অবৈধ স্বর্ণের বারসহ এক পাচারকারীকে আটক করছিল বিজিবি। এসব পৃথক পৃথক ঘটনা নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় সিন্ডিকেট প্রধানরা ধরাছোঁয়ার বাহিরে বলে ছবি দিয়ে গণহারে সংবাদ প্রচার হয়ছিল।

এসবের পর থেকে তারা সু কৌশলে অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেন। সম্প্রতি মায়ানমারের অভ্যান্তরে পরিস্থিতি উত্তাল থাকায় প্রায় ৬ মাস যাবত দেশে বড় কোন চালান না আসলে এসব অবৈধ কালো টাকাকে সাদা করতে হাতে নিচ্ছেন নতুন নতুন দোকান ব্যবসা। সেখানে খাবার হোটেল, কসমেটিক, কাপড়সহ বিভিন্ন ব্যবসায় তারা বিনিয়োগ করতেছেন।

স্থানীয়রা দাবি করছেন, তারা প্রকাশ্যে এসব অবৈধ ব্যবসা করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রশাসন বা গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ইনভেস্টিগেশন করতে দেখা যায়নি। তারা এত অল্প বয়সে এত টাকার উৎস কি জানতে চেয়ে দুদুকসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন জবাবদিহিতায় আনলে সকল গোঁমর ফাস হবে। তাছাড়া তাদের বিষয়ে কুতুপালংসহ অনেক প্রশাসন ও অবগত রয়েছেন। কিন্তু সকলেই নিরব দর্শকের ভুমিকায় তারা দিনপার করেন। অনেকে বলছেন প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে রেখেছেন। পুরো আজ্যুখাইয়া এলাকায় খবর নিলে-ই তার ফিরিস্তি বেরিয়ে আসবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তরপুকুরিয়ার এক ব্যাক্তি জানায়, সাইফুল হচ্ছে রায়হানের মামাতো ভাই। কিছুদিন আগে রায়হানের ছোট বোন সাইফুলের সাথে আকদ হওয়ায় তাই এখন তারা শালা-দুলাভাই। আর এ বিয়ের অনুষ্ঠান কক্সবাজারের বিলাসবহুল হোটেল সায়মনে লাখ লাখ টাকা খরচ করে করা হয়। আবার সামনে বিবাহের অনুষ্ঠান হবে।

অবৈধ ব্যবসায় রায়হান জড়িত আছে কি না জিজ্ঞেস করলে তিনি জানায়, রায়হান এসব কম বেশি করে এলাকায় সকলের জানা। তার বাড়িতে র‍্যাব বিজিবি নিয়মিত আসা যাওয়া করতেও দেখা যায়। মানুষে বলে ইনফরমেশন ছিল তাই তাদের বাড়ি তল্লাশী করতে আসে প্রশাসন । আপনি এলাকার মানুষের কাছে জিজ্ঞেস করলে বিস্তারিত পেয়ে যাবেন।

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ শামীম হোসেন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন অপরাধীদের কোন ছাড় নেই। সময়ের অপেক্ষা আজ না হয় কাল তারা ধরা পড়বেই। পুলিশের টিম নিয়মিত কাজ করছে।


আরো খবর: