রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৭ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

ভূমিকম্পের উচ্চঝুঁকির মধ্যে ঢাকার ৫৬% ভবন

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

ভূমিকম্পের উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে এমন শীর্ষ ২০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়। জনসংখ্যার ঘনত্ব, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বিল্ডিং কোড লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণ, অপ্রশস্ত সড়ক অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির অভাবই এ ঝুঁকি তৈরি করেছে। মাঝারি থেকে প্রবল মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে পড়ার শঙ্কায় রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী। হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এইচবিআরআই) এক গবেষণায় উঠে এসেছে, ঢাকা শহরে যত কংক্রিটের ভবন বিদ্যমান তার ৫৬ দশমিক ২৬ শতাংশ রয়েছে ভূমিকম্পের উচ্চঝুঁকির মধ্যে। মাঝারি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ৩৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ ভবন। রিখটার স্কেলে ৪ বা তার চেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্পে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে এসব ভবন। আর তুরস্ক ও সিরিয়ায় সম্প্রতি যে মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে, তাতে ঢাকার ৮০ শতাংশ ভবন ধসে পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) জিআইএস ডাটাবেজ থেকে ১ লাখ ৬ হাজার ৯৩টি ভবনের তথ্য নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করেছে এইচবিআরআই। বাংলাদেশ সরকার ও জাপানের অর্থায়নে ‘টেকনিক্যাল ডেভেলপমেন্ট টু আপগ্রেড স্ট্রাকচারাল ইন্টেগ্রিটি অব বিল্ডিংস ইন ডেনসলি পপুলেটেড আরবান এরিয়াস অ্যান্ড ইটস স্ট্র্যাটেজিক ইমপ্লিমেন্টেশন টুওয়ার্ড রেজিলিয়েন্ট সিটিস ইন বাংলাদেশ (টিএসইউআইবি)’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। এইচবিআরআইয়ের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়, ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও তোহোকু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।

গবেষণায় উঠে এসেছে, বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ঝুঁকিতে থাকা ৭ শতাংশ ভবন ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে ৩১ শতাংশ ভবনের। অন্যদিকে প্রায় ৪০ শতাংশ ভবনের ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে। যেসব ভবনের উচ্চতা বেশি, সেগুলো রয়েছে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে।

বড় ধরনের ভূমিকম্পে ধসে পড়ার উচ্চঝুঁকি রয়েছে, এমন ভবনের পরিমাণ ১৮ দশমিক ৯২ শতাংশ। এসব ভবনকে ‘ই’ ক্যাটাগরিতে চিহ্নিত করা হয়েছে এইচবিআরআইয়ের গবেষণায়। ‘ডি’ ক্যাটাগরিতে ধসে পড়ার মাঝারি ঝুঁকিতে রয়েছে ২১ দশমিক ৬২ শতাংশ ভবন। ক্ষতি হলেও ধসে পড়বে না এমন ভবনকে চিহ্নিত করা হয়েছে ‘সি’ ক্যাটাগরিতে। এমন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের পরিমাণ ৪৩ দশমিক ২৪ শতাংশ।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৪৮টি ওয়ার্ডে ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা ভবনের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে গবেষণায়। এর মধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) ‘খুব উচ্চঝুঁকি’র মধ্যে রয়েছে ১, ৩, ৭, ১২, ১৪, ২২, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৪ ও ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড। আর ‘উচ্চঝুঁকি’র মধ্যে রয়েছে ২, ৫, ১১, ১৩, ১৬, ১৮, ১৯, ২১, ২৩, ২৫, ২৬ ও ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড। একইভাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ‘খুব উচ্চঝুঁকি’র মধ্যে রয়েছে ১, ১২, ১৩, ১৬, ১৭, ২৩, ২৫, ২৬, ২৮, ২৯, ৩০ ও ৪৪ নম্বর ওয়ার্ড। আর ‘উচ্চঝুঁকি’র মধ্যে রয়েছে ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৯, ১৫, ১৯, ২৭, ৩৯, ৪৫, ৪৭ ও ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড।

‘কিছুদিন আগে সিলেট ও ময়মনসিংহ এলাকায় মৃদু ভূমিকম্পের ফলে অনেক ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। ৭ বা ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকা শহরের ৮০ শতাংশ ভবন ধসে পড়তে পারে’—এমন মন্তব্য করেছেন এইচবিআরআইয়ের মহাপরিচালক আশরাফুল আলম। গবেষণার বিষয়টি উল্লেখ করে ঢাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২০১৬-২২ মেয়াদে বাস্তবায়িত জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) মাধ্যমে বাস্তবায়িত একটি প্রকল্পের মাধ্যমে গবেষণাটি করা হয়েছে। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ঢাকাসহ দেশের ভূমিকম্প ঝুঁকিতে থাকা শহরগুলোর ভবনের বর্তমান অবস্থার একটি চিত্র তুলে আনা। দেশ-বিদেশের গবেষকরা আমাদের এ কাজে সহায়তা করেছেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেটের ভূমিকম্পের রেড জোনে থাকা এলাকাগুলোয় বিদ্যমান ভবনগুলোয় আমরা সমীক্ষা চালিয়েছি।’

‘ঢাকায় ভবনগুলো খুব একটা পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠেনি। আবার একটা বড় অংশের ভবন তৈরি করা হয়েছে জাতীয় বিল্ডিং কোড লঙ্ঘন করে। ঘনবসতিপূর্ণ এসব ভবনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশস্ত রাস্তাও নেই। ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধার তত্পরতায় এ বিষয়টিও বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়াতে পারে। ঢাকায় ভূমিকম্প হলে এসব কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হবে অনেক বেশি’—যোগ করেন আশরাফুল আলম।

এ গবেষণা প্রকল্পের মাধ্যমে পাঁচটি ম্যানুয়াল তৈরি করেছে এইচবিআরআই। এসব ম্যানুয়ালের একটি হলো ভূমিকম্প ঝুঁকিতে থাকা ভবনের শ্রেণী বিভাজন। এ শ্রেণী বিভাজন অনুযায়ী, কিছু ভবন একেবারে ভেঙে ফেলতে হবে। কিছু ভবনে বড় ধরনের সংস্কার করে ভূমিকম্পের ঝুঁকি কমিয়ে আনা যাবে। আর কিছু ভবন সাধারণ সংস্কারের মাধ্যমেই ভূমিকম্প ঝুঁকিমুক্ত রাখা সম্ভব। একইভাবে ভিজুয়াল রেটিং ম্যানুয়ালের মাধ্যমে তাত্ক্ষণিক দেখে একটি ভবন কী অবস্থায় রয়েছে, তা নির্ধারণ করা যাবে। সিসমিক ইভ্যালুয়েশন ম্যানুয়ালে বিস্তারিত মূল্যায়ন করে ভবনের মান নির্ধারণ করা যাবে। সিসমিক রেট্রোফিটিং ম্যানুয়ালে তুলনা কম ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোকে ঝুঁকিমুক্ত হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

গবেষণাটি সম্পর্কে জানতে চাইলে টিএসইউআইবি প্রকল্প পরিচালক ও এইচবিআরআইয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষণা প্রকৌশলী শফিউল ইসলাম বলেন, ‘গবেষণার মাধ্যমে প্রণয়ন করা ম্যানুয়ালগুলো একদিকে যেমন বাংলাদেশে ভূমিকম্প সহনশীল ভবন নির্মাণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে, তেমনি ঝুঁকিতে থাকা ভবনগুলো সম্পর্কেও নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।’

সূত্র: বণিক বার্তা

,

 


আরো খবর: