রফিকুল ইসলাম,উখিয়া::
মোঃ সাইদ(২৮), মিয়ানমারের রাখাইনের মংডু জেলার ফকিরা বাজার এলাকায় বসবাস করতো। গত ২০১২ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচারে সেখান থেকে বাংলাদেশ হয়ে সপরিবারে ভারতের জম্মু চলে যায়।
সেখানে দিনমজুরের কাজ করতো। ওখানে আরও প্রায় ৩ শ টি রোহিঙ্গা পরিবার আছে।
সম্প্রতি ভারত সরকারের পুলিশী নিযার্তন ও জেল- জুলুম অমানবিক হয়ে উঠায় রোহিঙ্গাদের সেখানে থাকা খুব কঠিন হয়ে পড়ছে। এছাড়াও বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ভাল অবস্থায় থাকার কারণে সে পরিবার পরিজন নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসার মনস্থ করে বলে সাইদ জানায়।
ভারতের জম্মু থেকে সাইদ দালালের মাধ্যমে শুক্রবার উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে তার শাশুড়ের কাছে চলে আসে। সাথে তার স্ত্রী সহ পরিবারের মোট সদস্য ৬ জন। সে জানালো, তারা জম্মু থেকে ট্রেনযোগে দিল্লি আসে। দিল্লি থেকে বাসে আসামের গৌহাটি হয়ে বাংলাদেশের কুমিল্লা সীমান্তের গোলাবাড়ী দিয়ে প্রবেশ করে। সেখানে তার কাটার ঘেরা আছে।
জম্মু থেকে বাংলাদেশের সীমান্ত পর্যন্ত একজন ভারতীয় দালালের মাধ্যমে আসে। সীমান্ত পার হওয়ার সময় বিএসএফ এর হাতে ধরা পড়ে। বিএসএফ এর সদস্যরা তাকে পিটিয়ে জম্মুতে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর প্রদত্ত রিফুউজি কার্ডটি কেড়ে নেয়।
সাইদ জানায়, ভারতের জম্মু থেকে বাংলাদেশের বর্ডার পার হওয়া পর্যন্ত দালালের সাথে পুরো পরিবারের জন্য ৩০ হাজার রুপিতে কন্ট্রাক্ট হয়। সে অনুযায়ী পুরো টাকা পাওয়ার পর দালাল তাদেরকে কুমিল্লা সীমান্ত পার করে দেয় এবং সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে জনৈক দালালকে ঠিক করে দেয়। পায়ে হেঁটে সীমান্তের কাটা তার পেরিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছে। সেখানে থেকে সিএনজি করে কুমিল্লা রেলস্টেশনে আসে।
কুমিল্লা রেল স্টেশন থেকে ট্রেনে করে চট্টগ্রাম আসে। চট্টগ্রাম থেকে বাসে কক্সবাজার ও কক্সবাজার থেকে কুতুপালং পর্যন্ত বাসে আসে। কুমিল্লা সীমান্ত থেকে কুতুপালং পর্যন্ত সাথে এক বাঙ্গালী দালাল নিয়ে আসে। সে পুরো পথের ভাড়া দেয়। তার বাড়ী কুমিল্লা সীমান্তে বলে জানতে পারে।
উক্ত দালাল তার মোবাইলের যাবতীয় সব তথ্যাদি মুছে দেয়। যাতে পুলিশের কাছে ধরা পড়লেও পুলিশ কোন তথ্য উদঘাটন করতে না পারে। ইন্টারন্যাশনাল রোমিং ফাংশন চালু না থাকার তার মোবাইল ফোন থেকে অন্য কোনভাবে তথ্য পাওয়া যায়নি। সে জানায় ওখানকার সব রোহিঙ্গা পরিবার বাংলাদেশে চলে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক পরিবার চলে এসেছে ও অনেক পরিবার পথে রয়েছে।
উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে আটক রোহিঙ্গা মোঃ সাইদের মতে ভারতের জম্মু ও অনান্য এলাকায় বসবাসরত অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসার জন্য প্রস্তুত। গত কয়েকদিনের অবস্থায় তাই পরিলক্ষিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার উখিয়ার ক্যাম্পে ভারত থেকে এসে গোপনে অবস্থান নেয়া ২ পরিবারের ১১ জন ও শুক্রবার কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্প থেকে এক পরিবারের ৬ জনকে আটক করেছে এপিবিএন পুলিশ।
তাদেরকে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী কুতুপালং ট্রানজিট ক্যাম্পে হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে ১৪ এপিবিএন পুলিশের অধিনায়ক নাইমুল হক জানান। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুরে মৌলভীবাজার বাস টার্মিনাল থেকে ১৮ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে এরা কুলাউড়া সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানা গেছে। আটক রোহিঙ্গাদের অধিকাংশ নারী ও শিশু।