সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১৩ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

‘বিএম ডিপোর অগ্নিকাণ্ডে ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি’

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: রবিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৩


চট্টগ্রাম, ০৯ এপ্রিল – চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও আগুনে প্রায় ২০০ কোটি টাকার রপ্তানি পণ্যের ক্ষতি হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশে গঠিত কমিটি দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে এই ক্ষতির তথ্য পেয়েছে। কমিটির তথ্য অনুযায়ী, অগ্নিকাণ্ডের সময় ডিপোটিতে ৫০০ কোটির বেশি টাকার রপ্তানি পণ্য ছিল। যার অধিকাংশই তৈরি পোশাক। রপ্তানির জন্য জাহাজীকরণের উদ্দেশ্যে এগুলো ডিপোতে রেখেছিলেন রপ্তানিকারকরা।

এসব পণ্যের কিছু সম্পূর্ণরূপে ও কিছু আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং কিছু অক্ষত ছিল। সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতি হয়েছে এমন পণ্যের মূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা। কমিটির সদস্যরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কমিটি এরই মধ্যে রপ্তানি পণ্যের ক্ষতির খসড়া প্রতিবেদন তৈরি করেছে। শিগগরিই তা চূড়ান্ত করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনারকে দেওয়া হবে। এরপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পাঠানো হবে।

অগ্নিকাণ্ডের পরপরই তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছিল। বিজিএমইএ’র এই দাবির সঙ্গে প্রকৃত চিত্রের (অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য) ফারাক ‘আকাশ-পাতাল’।

কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সচিব রুহুল আমিন শিকদার শনিবার বলেন, ৪ এপ্রিল প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল। আশা করছি দু’এক দিনের মধ্যে দেওয়া সম্ভব হবে। তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানি পণ্যের বেশির ভাগই তৈরি পোশাক। বিদেশি ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এগুলো ডিপোতে এনে রাখা হয়েছিল।

ডিপো থেকে পণ্যগুলো বন্দরে নিয়ে জাহাজে তোলা হতো। কিন্তু তার আগেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ক্ষতি নিরূপণ হলেও তা পাওয়া যাবে কিনা বা কারা ক্ষতিপূরণ দেবে- এ নিয়ে কোনো তথ্য নেই প্রতিবেদনে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রুহুল আমিন শিকদার বলেন, ক্ষতিপূরণ কারা কীভাবে দেবে তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। এটা আমাদের কমিটির কর্মপরিধির মধ্যে নেই। আমাদের শুধু রপ্তানি পণ্যের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে বলা হয়েছে।

এ ক্ষেত্রে রপ্তানিকারকরা কোন প্রক্রিয়ায় ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন জানতে চাইলে বিকডা সচিব বলেন, কোনো কোনো পণ্যের টাকা এরই মধ্যে দিয়ে দিয়েছে বায়ার (বিদেশি ক্রেতা)। এটা বায়ারের সঙ্গে রপ্তানিকারকদের চুক্তির ওপর নির্ভর করে। অনেকের চুক্তিটা এরকম-ডিপোতে পণ্য এনে বুঝিয়ে দেওয়া মানে বায়ারকে বুঝিয়ে দেওয়া।

কারণ ডিপোতে বুঝিয়ে দেওয়া মানে ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারকে বুঝিয়ে দেওয়া। ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বায়ার মনোনীত। তাই ডিপোতে পণ্য বুঝিয়ে দেওয়া মানে ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারকে বুঝিয়ে দেওয়া, আর ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারকে বুঝিয়ে দেওয়া মানে বায়ারকে বুঝিয়ে দেওয়া। এমন অবস্থায় বায়ার টাকা দিতে বাধ্য। তাই বায়াররা ক্ষতিপূরণ দেবে, এটা আমরা জানি। অনেক ক্ষেত্রে দিয়ে দিয়েছে বলেও শুনেছি।

ডিপো কর্তৃপক্ষের কোনো দায়িত্ব আছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডিপো কর্তৃপক্ষের এত বড় ইনস্যুরেন্স আমি যতদূর জানি ছিল না। তাছাড়া এসব ঘটনাকে ভূমিকম্প বা বন্যার মতো দৈব-দুর্বিপাক হিসাবে ধরা হয়। যে কোনো চুক্তিতে এমন বিষয় উল্লেখ থাকে। ডিপো কর্তৃপক্ষ এর আগে এমন কোনো ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দেয়নি। তাই বলা যায়, রপ্তানিকারকরা বায়ারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পাবে অথবা কারো যদি পণ্যের ইনস্যুরেন্স থাকে, সে সেভাবে পাবে।

গত বছরের ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। এরপর সেখানে বিস্ফোরণ হয়। এ ঘটনায় ৫১ জনের মৃত্যুর খবর প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। আহত হয়েছিলেন শতাধিক।

এ ঘটনায় রপ্তানি পণ্যের ক্ষতি নিরূপণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশে গত বছরের ১৭ জুলাই চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ কর্তৃপক্ষ সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। যেখানে কাস্টম, বিজিএমইএ, ডিপো কর্তৃপক্ষ ও বিকডা প্রতিনিধি রয়েছেন। কমিটিকে ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানি পণ্যের পরিমাণ ও মূল্যসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ডিপো পরিদর্শন এবং ডিপোতে থাকা তথ্য, কাস্টমস সার্ভারের তথ্য ও রপ্তানিকারকদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ক্ষতির খসড়া প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ফলে ডিপোতে রক্ষিত কিছু কনটেইনার সম্পূর্ণ ও কিছু আংশিক পুড়ে যায়। কিছু কনটেইনার আগুনের মধ্যেও সুরক্ষিত ছিল। কিছু পণ্যবাহী কাভার্ডভ্যান ওই রাতেই বেরিয়ে যেতে সক্ষম হয়। অন্যদিকে, ডিপোর সিএফএস-১ শেডে রক্ষিত সব পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ২ নম্বর শেডের পণ্য অক্ষত ছিল। সেই অক্ষত পণ্যের মধ্যে কিছু অংশ পরবর্তী সময়ে রপ্তানি করা হয়েছে। তবে বেশির ভাগ পণ্য জানুয়ারিতেও মজুত ছিল। যেসব কনটেইনার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলোর ভেতরে কিছু পণ্য সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কিছু পণ্য অক্ষত থাকলেও ধোঁয়ার গন্ধ থাকায় সেগুলো রপ্তানি অযোগ্য হয়ে পড়ে।

সূত্র মতে, সিএফএস-১ শেডে ৮১৯টি শিপিং বিলের বিপরীতে এক লাখ ২৬ হাজার ৬২৪টি রপ্তানি কার্টন সম্পূর্ণরূপে পুড়ে গেছে, যাতে এক কোটি সাত লাখ ৭৮ হাজার ১০৩ মার্কিন ডলারের পণ্য ছিল। স্টাফ্ড কনটেইনারের ৪১৩টি শিপিং বিলের বিপরীতে এক লাখ পাঁচ হাজার ৭৬৮টি কার্টন পুড়ে গেছে। এতে ৭৮ লাখ ১৫ হাজার ৫১৭ মার্কিন ডলারের পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দুর্ঘটনায় আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া কনটেইনারগুলোতে ৩৮টি শিপিং বিলের বিপরীতে ১০ হাজার ৭৮৫টি কার্টন পুড়ে সাত লাখ ৭০ হাজার ৮৪২ ডলারের পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানি পণ্যের মোট মূল্য এক কোটি ৯৩ লাখ ৬৪ হাজার ৪৬৮ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২০০ কোটি টাকারও বেশি।

কমিটির খসড়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অগ্নিকাণ্ডের সময় ডিপোতে মোট দুই হাজার ৬৮৯টি শিপিং বিলের বিপরীতে ছয় লাখ ৮৪ হাজার ৭৭৭ কার্টন পণ্য ছিল, যার মূল্য পাঁচ কোটি সাত লাখ ১৪ হাজার ৩৪ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৫০০ কোটি টাকার বেশি। অর্থাৎ প্রায় ৩০০ কোটি টাকার পণ্য অক্ষত ছিল।

সূত্র: যুগান্তর
এম ইউ/০৯ এপ্রিল ২০২৩


আরো খবর: