সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫২ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

বিএনপি-জামায়াতের এ দেশে রাজনীতি করার অধিকার নাই-হানিফ

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ, ২০২২

এম.এ আজিজ রাসেল::

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, ‘বিএনপি জামায়াত প্রতিদিন মিথ্যাচার করছে। মির্জা ফখরুল প্রতিদিন দুর্নীতির কথা বলছে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন ৫ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। খালেদা জিয়া দুর্নীতির কারণে দণ্ডিত হয়েছে। তারেক রহমান পলাতক রয়েছে। আপনারা কিভাবে কোন লজ্জায় দুর্নীতির কথা বলেন?’ তাই বিএনপির মুখে দুর্নীতির কথা মানায় না। জিয়াউর রহমান দেশকে অন্ধকারে ডুবিয়েছিল। রাজারকারদের পুনর্বাসন করে পাকিস্তানের ভাবধারা প্রতিষ্ঠা করেছিল। এছাড়া জামায়াত ৭১ এ রাজাকার ছিল, পাকিস্তানি সৈনিক ছিল। তারা যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির সময় পাকিস্তানে নিন্দা প্রস্তাব করা হয়। তাই বিএনপি-জামায়াতের এই দেশে রাজনীতি করার অধিকার নাই। আজ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের শপথ নিতে হবে। সরকারের উন্নয়নের বার্তা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পাকিস্তানী অপশক্তিকে রুখতে হবে।’

বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) সকাল ১০টায় কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উম্মুক্ত মাঠে পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কাউন্সিলের প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

হানিফ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মাধ্যমে এ দেশের মানুষ উজ্জীবিত হয়ে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধে জয়লাভ করে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বহু ত্যাগ স্বীকার করেছেন বঙ্গবন্ধু। তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশেছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বাঙালি জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি বারবার কারাবরণ করেছেন। মাত্র সাড়ে ৩ বছরে তিনি দেশকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেন। বঙ্গবন্ধু যেমন কোমল মনের মানুষ ছিলেন তেমনি ছিলেন দৃঢ়চেতা। আর তার মনোবল সবসময়ই ছিল অটুট।’

তিনি আরও বলেন, ‘অন্ধকারে নিমজ্জিত বাংলাদেশকে আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গর্ব ও মর্যাদার জায়গায় নিয়ে গেছেন। তাঁর নেতৃত্বে এখন দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। দেশের মানুষের ভাগ্য বদলে যাচ্ছে। দেশের মানুষ ভালো থাক আপনারা কি তা চান না? এই দেশ তো আপনাদেরও। আপনারা উন্নয়ন করতে পারেননি, আমরা করছি ধ্বংসাত্মক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে আপনাদেরও এই উন্নয়নের ধারায় শামিল হওয়া উচিত।’

পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নজিবুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল করের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত প্রথম অধিবেশনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা ও উপ—প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।

জাতীয় সংগীত, জাতীয়—দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলন ও কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী।

সম্মেলনে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান।

সম্মেলনে জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি বলেন, ‘সেলফিবাজি রাজনীতিকে ধ্বংস করছে। যারা ছবি ও টকশো নিয়ে রাজনীতি করে তাদের দলে দরকার নাই। পদ নমিনেশন বিক্রি করে রাজনীতি করছে তাঁরা দালালের চেয়ে খারাপ। এখন বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা নিয়ে শ্লোগান নাই। এখন শুধু অমুক ভাই আর তমুক ভাই। তাঁদের আমরা প্রাণভরে ঘৃণা করি।’

তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারের ইতিহাস সমৃদ্ধ। এখানে আছে ১২০ কিলোমিটার বিশাল সমুদ্র সৈকত আছে। সমুদ্রের মতো বিশাল মনের অধিকারী কক্সবাজারের মানুষের। আপনারা সারা বাংলাদেশকে ধারণ করে আছেন। যদি টাকা কামাই করতে চান ছোট একটি হোটেল করেও টাকা কামাই করা যায় না। দয়া করে রাজনীতিকে পুঁজি করে টাকা কামাই করবেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাখে আল্লাহ মারে কে। তিনি গরীব ও মেহনতি মানুষের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন। গরীবের আলহামদুলিল্লাহর বরকতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকবে। তাই জননেত্রী শেখ হাসিনার মতো মানুষকে ভালবাসুন, মানুষের পাশে থাকুন।’

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারীতে সর্বশেষ কক্সবাজার এসেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন কক্সবাজারকে প্রাচ্যের সৌন্দর্যের পর্যটন শহর হিসেবে গড়ে তুলতে। বঙ্গবন্ধুর ন্যায় জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন তিনি কক্সবাজারকে ভালবেসে ফেলেছেন। তাই বিয়ের পর তিনি এখানেই এসেছেন। তাই কক্সবাজার অন্য জেলার চেয়ে অগ্রগামী। এখানে রেল লাইন, তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। শেখ হাসিনার বদন্যতায় অচিরেই বদলে যাবে এই কক্সবাজার।’

উপ—প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, ‘নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা মানে দ্বন্দ্ব ও হিংসা বিদ্বেষ নয়। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা মানে মেধা মননে নেতাকর্মীদের ভালবাসা। নেতৃত্বের অনন্য উদাহরণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি নিজেকে দেশের মানুষের জন্য উজাড় করে দিয়েছেন। নেতা মানে শুধু নেওয়া না, দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর নেতৃত্বে সোনার বাংলা বিনির্মানে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।’

এতে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন সাবেক সাংসদ, কক্সবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপি, কক্সবাজার সদর—রামু আসনের সংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, মহেশখালী—কুতুবদিয়া আসনের সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক, কুষ্টিয়ার সাংসদ ব্যারিষ্টার সেলিম আলতাফ আজিজ, সাংসদ কানিজ ফাতেমা আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক মুকুল, এডভোকেট রনজিত দাশ ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান চৌধুরী।

এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাবেক সাংসদ অধ্যাপিকা এথিন রাখাইন, সহ-সভাপতি রেজাউল করিম, জেলা ও পৌর আওয়ামী লীগসহ আওয়ামী অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

প্রথম অধিবেশনের আলোচনা সভা শেষে বিকেল ৩টায় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মিলনায়তনে দ্বিতীয় অধিবেশনে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এতে ২৯২ জন কাউন্সিলর পরিচ্ছন্ন ও গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন।

এদিকে নতুন নেতৃত্বে সভাপতির পদে বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েলের নাম শুনা যাচ্ছে। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সম্পাদক উজ্জ্বল কর, বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক সালাহ উদ্দিন সেতু, ও দীপক দাশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন।

উল্লেখ্যঃ সর্বশেষ ২০১৩ সালে পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। এরপর ২০১৬ সালে তৎকালীন সভাপতি পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান জেলা কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন ওই কমিটির সিনিয়র সহ—সভাপতি মো. নজিবুল ইসলাম।


আরো খবর: