বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৫ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

পেঁয়াজ থেকে পতাকা: আত্মমর্যাদা বনাম নির্ভরশীলতা!

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪


পেঁয়াজ থেকে পতাকা: আত্মমর্যাদা বনাম নির্ভরশীলতা!

এক শ্রেণির বদ্ধমূল বিশ্বাস, ভারত আমাদেরকে পেঁয়াজ দেয়! খুব কম সংখ্যক মানুষ জানে, ভারত থেকে আমরা পেঁয়াজ কিনি!তারা স্রেফ বিক্রেতা আর আমরা ক্রেতা! বন্ধুত্বের চেয়ে দু’দেশের মধ্যকার ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও স্বার্থ গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য। আমরা না কিনলেও তারা অন্যখানে বেচবে আর তারা বিক্রি না করলেও, আমরা তাদের থেকে না পেলেও অন্য উৎস থেকে আনবো!

পেঁয়াজ ছাড়া যেহেতু তরকারি সুস্বাদু হয় না, সুস্বাস্থ্যের জন্যও পেঁয়াজ দরকারি সেহেতু সরকার বিকল্প ব্যবস্থা করবে। কারো জন্য কেউ ঠেকে থাকে না! পেঁয়াজ তো পিঁয়াজ!- আজকাল মানুষের শূন্যস্থানও মানুষ বিকল্প দিয়ে পূরণ করে! ভারত বাংলাদেশের সাথে গোস্বা করে কাঁচামরিচ আটকে রাখলে সেসব এমনি লমনি পচবে!  ভারতীয় কৃষক কি ভারত সরকারকে তবে এমনি এমনি ছাড়বে?

আমরা ইউক্রেন-যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম-ভূট্টা কিনি, রাশিয়া-ব্রাজিল থেকে তেল কিনি, চীন জাপান থেকে ইলেকট্রনিকস যন্ত্রপাতি কিনি! কখনোই কোন দেশ সম্পর্কে বলি না, কারা আমাদেরকে কী দেয়! জাপান আমাদের গাড়ি দেয়, চীন আমাদের মোবাইল দেয়- এসব একবারও বলি না! কখনোই বলি না। সবার থেকে কিনি। নগদে কিংবা বাকিতে সে যেভাবেই হোক কিনি, দাম শোধ করতে হয়! ফ্রিতে বন্যার পানি ছাড়া আর কিছু পাই বলে মনে হয় না! কাজেই ভারত আমাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে কিছু দেয়- এমন ভাবনায় যারা নাচেন তারা পত্রিকার আর্থ-বাণিজ্যিের খবর আরেকটুখানি নাড়াচাড়া করবেন! এতে দেশপ্রেম বাড়বে এবং ভিনদেশের প্রতি পরকীয়া কমবে! যে দেশের আলো-বাতাস গ্রহন করি সেদেশের প্রতি টান থাকা ঈমানের অংশ!

ভারত আমাদের পেঁয়াজ দেয়, চিনি দেয় কিংবা চাল দেয়!- এই যে দেখার সৌন্দর্য- এই সৌন্দর্যের কারণেই আমাদের জাতিগত মেরুদণ্ড, দেশপ্রেমের আস্তরণ আজও শক্ত হয় নি! পরনির্ভরশীলতার উপনিবেশিক ধ্যান-ধারণা থেকে এখনো বের হতে পারিনি। কারো প্রতি বিশেষ প্রীতি-ভীতি জিনগতভাবে বারবার  দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে! যার সাথে আমার সম্পর্ক কেবল ক্রেতা-বিক্রেতার সেখানে একটিমাত্র দোকানমুখিতা বুদ্ধিমান ক্রেতার ধর্ম নয়!  সে বিকল্প রাখবে। পেঁয়াজের বিশ্বচাহিদার বিপুলাংশ নেদারল্যান্ডসে উৎপাদিত পণ্য থেকে পূরণ হয়। অথচ সে হাটে আমরা হাঁটি না! অন্য উৎসগুলোতেও আমাদের আনাগোনা কম! আমরা পূর্বপুরুষের বাজারে গিয়ে ধরা খাই! সে সময় সময় সিন্ডিকেট করে! মান-অভিমান করে বিক্রি বন্ধ করে! যখন নীতি রীতি ভঙ্গ করে পণ্য আটকে দেয় তখন দেশের বাজারে আগুন লাগে!

কিনেই যদি খাব তবে দু’পয়সা বেশি গেলেও যে বিক্রেতার খাসলত ভালো তার কাছে যাওয়া উচিত! আত্মমর্যাদার চেয়ে বড় কোন বাহাদুরি নাই। যে দোকানীর ব্যবহার খারাপ তার পণ্যের দাম কম হলেও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ক্রেতা সেখানে যাবে না। ভারতে পেঁয়াজের ঘাটতি না থাকা সত্ত্বেও, সেখানকার বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসার পরেও প্রায় প্রতিবছর আগাম কোন ঘোষণা ছাড়াই তিনমাস পণ্য আটকে আমাদের জনতাকে ভোগান্তিতে ফেলে।  এদেশের মানুষের প্রতি বিদ্বেষ দেখাতে গিয়ে তারাও যে শত্রু হয় সেটা ভাবে না! এরপরে ক্রিকেটে ভারত হারলে রাস্তায় মিছিল নামবে! মাগনা নয় কিনে খাই! তার পণ্য না বেচে সব নিজেরা খাবে সে সাধ্যও তাদের নাই!

সুসম্পর্ক থাকার পরেও ভারত মাঝে মাঝে যে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আমাদেরকে পাঠায় তাতে বারবার সম্পর্কের শোচনীয় অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। প্রজন্মের মাঝে অতীতের যে-কোনো সময়ের চেয়ে ভারতের ওপর ক্ষোভ বেশি! ভারতবিরোধী মনোভাগ তুঙ্গে তোলার দায়ে ভারতের অবদান অনস্বীকার্য!  এ খেলার শেষমাথা মহাখালে নামবে! দুর্দিনে মানুষ চিনতে সুবিধে হবে! ভারত বারবার নিজেকে এবং নিজের চরিত্র বদলে আপনা স্বার্থ রক্ষা করে চলে! তাদের শিক্ষা না দিলে শোধরাবে বলে মনে হচ্ছে না! ইতোমধ্যে কিছু শিক্ষা পেয়েছে বটে। প্রতিবেশীর সাথে কেমন আচরণ করতে হয় তা দেশের জনগণ এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অনেকটাই শিখিয়ে দিচ্ছে! আর ছাড় নয়- সম্পর্ক হতে হবে ন্যায্যতাভিত্তিক। প্রভূ-দাস মনোভাবের সম্পর্কের সময় শেষ হয়েছে!

বিজেপি ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করতে শুরু করছে- ভারত নাকি অভ্যন্তরীণভাবে অশান্ত হতে চলেছে! সীমান্তে যার কোন বন্ধু নাই সেই দেশটি ভারত! একা এভাবে কতদূর যেতে পারবে? যার চারপাশ ঘেরা শত্রু সে স্বস্তিতে থাকবে কতক্ষণ? দেখা যাক! পাকিস্তান-চীন থেকে বাংলাদেশের জন্য চিনি-পেঁয়াজ-আলু জাহাজে লোড হচ্ছে। মিশর-ব্রাজিল পণ্য পাঠাতে মরিয়া। আমরা তো বাকিতে খেয়ে কারো টাকা মেরে দেই না! কাজেই সব ব্যবসায়ী বাংলাদেশের সাথে সুসম্পর্ক রাখবে এবং তাতে তাদের লাভ। যে ক্রেতা কিনে খায়, কেনার সামর্থ্য আছে সে দুনিয়ার যে কোন প্রান্ত থেকে মালামাল আনাতে পারবে! ভারত যাতে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এবং তাদের ভুলগুলো আমলে নেয়- ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের সম্পর্ক হিসেবে সে আহ্বানটুকু থাকছে। পরিপূর্ণ বিচ্ছেদের আগে সাবধান করা দরকার মনে করছি! তারা বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে সে বার্তাও বোধহয় পেয়েছে।

রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট।

[email protected]



আরো খবর: