ইসলামাবাদ, ১৪ মে – পাকিস্তানে গণতন্ত্র ‘সর্বকালের সর্বনিম্ন’ পর্যায়ে রয়েছে বলে দাবি করেছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান। যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে বিশ্বকাপজয়ী সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার এই দাবি করেন।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, আদালতের আদেশে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর দেওয়া প্রথম সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেহবাজ শরিফের সরকার ‘নির্বাচন নিয়ে আতঙ্কিত’ এবং তারা (সরকার) নির্বাচনে তার দল পিটিআইয়ের কাছে ‘ধরাশয়ী’ হওয়ার ভয় করছে।
ইমরান খান আরও বলেন: ‘সুতরাং সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, তারা কেবল তখনই নির্বাচনে যাবে যদি আমি জেলে থাকি বা হত্যাকাণ্ডের শিকার হই।’
পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, দুই দফায় তার প্রাণনাশের চেষ্টা হয়েছে এবং তাকে আটক করার সময় তার বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়েছিল। মূলত গত বছরের নভেম্বরে পাঞ্জাব প্রদেশে সমাবেশের সময় ইমরান খান তার পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। সেসময় ওই ‘হত্যা প্রচেষ্টা’ থেকে অস্ত্রসহ একজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল।
দুর্নীতির মামলায় গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদ হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে নাটকীয়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয় ইমরান খানকে। তার সেই গ্রেপ্তার পারমাণবিক অস্ত্রধারী এই দেশে মারাত্মক অস্থিরতা সৃষ্টি করে এবং এরই একপর্যায়ে বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট ইমরানের গ্রেপ্তারকে অবৈধ এবং বেআইনি বলে রায় দেয়।
মূলত গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বাইরে থেকে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরোর (এনএবি) ওয়ারেন্টে পাকিস্তানের আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্স তাকে গ্রেপ্তার করে।
পাকিস্তানের দুর্নীতি বিরোধী সংস্থার এই পদক্ষেপে দেশজুড়ে সেদিনই সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শেহবাজ শরিফের সরকার খাইবার পাখতুনখাওয়া, পাঞ্জাব, বেলুচিস্তান এবং ইসলামাবাদসহ দেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সেনাবাহিনীকে ডাকতে বাধ্য হয়।
এদিকে ইমরান খানের গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পরে কমপক্ষে দশজন নিহত এবং আরও অনেকে আহত হন। এছাড়া বিক্ষোভ দমাতে পাকিস্তানের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গণগ্রেপ্তার শুরু করে এবং এখন পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এছাড়া বিক্ষোভ চলাকালীন ইমরান খানের সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় সামরিক স্থাপনায় হামলা এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় ভবন ও সম্পদ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এমনকি পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রাওয়ালপিন্ডিতে দেশটির সেনা সদরদপ্তরে হামলা এবং লাহোরে সেনাবাহিনীর কর্পস কমান্ডারের বাসভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
স্কাই নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিক্ষোভকারীদের কথিত সহিংসতার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে ইমরান খান ‘সমস্ত সহিংসতার’ নিন্দা জানান। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের গণতন্ত্র সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। আমাদের একমাত্র ভরসার জায়গা হলো বিচার বিভাগ।’
এর আগে গত শুক্রবার ইমরান বলেন: ‘প্রথমবার যখন তারা আমাকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখাল (তখন আমি) জেলের ভেতরে। এটা জঙ্গলের আইনে হয়, সামরিক বাহিনী আমাকে অপহরণ করেছিল। কোথায় ছিল পুলিশ? কোথায় আইন? এটা জঙ্গলের আইন। মনে হচ্ছে এখানে সামরিক আইন জারি করা হয়েছে।’
এদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ শুক্রবার ইমরানের মুক্তির সমালোচনা করেন। সেদিন তিনি বলেন, ইমরান খানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটি ‘প্রকৃত দুর্নীতির মামলা’ ছিল, ‘কিন্তু বিচার বিভাগ তাকে রক্ষা করার জন্য পাথরের দেয়ালে পরিণত হয়েছে’।
বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া ৭০ বছর বয়সী পাকিস্তানের জনপ্রিয় এই বিরোধী নেতা ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
অন্যদিকে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব ইমরান খানের গ্রেপ্তারের পক্ষেই কথা বলেছেন। স্কাই নিউজের কাছে তিনি দাবি করেন: ‘যে ব্যক্তি আদালতকে অবজ্ঞা করেছেন, যিনি আইন মানেন না, যিনি আদালতকে এড়িয়ে চলেন এবং যিনি মনে করেন যে, তিনি ধরা-ছোঁয়ার বাইরে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে না। প্রত্যেক নাগরিকের সাথে যেভাবে আচরণ করা হয় তার সাথেও সেই আচরণ করা উচিত।’
অবশ্য পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রীর এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে ইমরান বলেছেন, তাকে গ্রেপ্তারের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল। তবে মরিয়ম আওরঙ্গজেবের যুক্তি, ‘আমরা যদি তাকে গ্রেপ্তার করতে চাই বা তার জনপ্রিয়তার কারণে তাকে চুপ করাতে চাই, তাহলে আমরা ১৪ মাস অপেক্ষা করতাম না।’
সূত্র: ঢাকা পোস্ট
আইএ/ ১৪ মে ২০২৩