ঢাকা, ১৯ ফেব্রুয়ারী – মঞ্চের সামনের চেয়ারে বসে কাঁদছিলেন গুণী অভিনেত্রী ডলি জহুর। এরপর মঞ্চে ডাক পড়ে তাঁর। কান্না তখন আরও বেড়ে যায়। একসময় কান্নায় ঢাকা পড়ে যায় কথা। প্রিয় অভিনেত্রীর কান্নায় মঞ্চের সামনে থাকা অভিনয়শিল্পীদের কেউ কেউ আবেগে চোখ মুছছিলেন।
মঞ্চে মাইক্রোফোন হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন অভিনেতা শাহাদাৎ হোসেন ও অভিনেত্রী দীপা খন্দকার। মঞ্চজুড়ে তখন নিস্তব্ধতা। এর মধ্যেই অভিনেতা শাহাদাৎ ঘোষণা করেন, ‘এবার আমরা এমন একজনকে মঞ্চে ডেকে নেব, যিনি আমাদের ভীষণ প্রিয়। আমরা শুটিংয়ে গেলে সচরাচর বলি অমুক আপা, ভাই আছেন। কিন্তু জন্ম না দিয়েও মা ডাক শোনার সৌভাগ্য খুব কম মানুষের হয়। যখন জিজ্ঞাসা করা হয় শুটিং সেটে কে কে আছে, তখন আমরা বলে উঠি দিলারা মা, ডলি মা। এই মানুষেরা আমাদের কাছে মায়ের মতো।’
সামনের সারিতে বসা ডলি জহুরের চোখ ভেজা। তিনি নীরবে আঁচলে চোখ মুছছিলেন। উপস্থাপিকা দীপা খন্দকার ঘোষণা করেন, এ বছর অভিনয়শিল্পী সংঘের যেসব সদস্য ২০২১ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন, তাঁদের সম্মাননা জানানো হয়। গত বছরের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন ডলি জহুর ও ইলিয়াস কাঞ্চন। ডলি জহুরকে সম্মাননা জানানোর জন্য মঞ্চে আসার আহ্বান জানানো হয়। তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি। প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ডলি জহুর।
ডলি জহুর বলেন, ‘শাহাদাৎ একটা কথা বলে আমাকে বাক্রুদ্ধ করে দিয়েছে। তরুণদের মা হতে পারা যে কত সুখ, এই সুখের কথা ব্যাখ্যা করা যাবে না। কত ছেলেমেয়ের মা আমি। কেউ আমাকে ডলি জহুর বলে ডাকে না। বলে, ডলি মা। এত ভালো লাগে। মনটা ভরে যায়। আজ শান্তিতে আমার চোখে পানি এসে গেছে। আমি মঞ্চে ওঠার সময় চোখে কিছুই দেখতে পারছিলাম না। কয়েক যুগ ধরে কাজ করি। আমি সরকারিভাবে আজীবন সম্মাননা পেয়েছি। আমার ভক্ত, আমার সহশিল্পী, আমার সন্তানেরা পাশে না থাকলে এই সম্মাননা হয়তো পেতাম না।’
এ সময় ডলি জহুর আরও বলেন, ‘আমি মঞ্চ দিয়ে অভিনয়জীবন শুরু করেছি। নাটক, ফিল্ম করেছি। কিন্তু টেলিভিশনই আমার সত্যিকারের ঘর বলে মনে হয়।’ ডলি জহুর মঞ্চ থেকে নামার সময় আবুল হায়াতকে সালাম করে আশীর্বাদ নেন।
গত শনিবার ছিল অভিনয়শিল্পী সংঘের অ্যাক্টর ইকুইটি ডে। তারকাদের জন্য দিনটি ছিল অন্যরকম। দিনব্যাপী তারকাদের এই আড্ডা আয়োজনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল পূর্বাচলের ইন্টারন্যাশনাল চেইন রিসোর্ট। এদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গল্প, আড্ডায় মেতেছিলেন দিলারা জামান, মামুনুর রশীদ, মোশাররফ করিম, আজমেরী হক বাঁধনসহ অনেক তারকা।
দ্বিতীয় পর্বে ছিল শিল্পীদের সাধারণ সভা। এক বছর ধরে অভিনয়শিল্পী সংঘের কাজের ফিরিস্তি অভিনয়শিল্পীদের সামনে উপস্থাপন করা হয়। শিল্পীদের পরামর্শ নেওয়া হয়। তৃতীয় পর্বে অভিনয়শিল্পী সংঘের সদস্যদের মধ্যে একুশে পদক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া শিল্পীদের সম্মানিত করা হয়। সাংস্কৃতিক পর্ব দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান। গান পরিবেশন করেন ফজলুর রহমান বাবুসহ আরও অনেকে।
সূত্র : প্রথম আলো