বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪২ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

নাফ নদী দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অভিযোগ

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৪

নাফ নদী দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অভিযোগ
মিয়ানমারের রাখাইনে গোলাগুলি ও সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়ায় সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। তবে তারা যাতে ঢুকতে না পারে, সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক পাহারায় রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এরপরও নাফ নদীর ওপারে অর্ধশতাধিক নৌকায় দুই হাজারের বেশি রোহিঙ্গা অপেক্ষায় রয়েছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সূত্রে জানা গেছে।

তবে টেকনাফ সীমান্তে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বিজিবি ও কোস্টগার্ড কার্যত অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পারছে না। নাফ নদীতে কড়া নজরদারি ও পাহারা থাকলেও দেশের চলমান পরিস্থিতির সুযোগে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করছে বাংলাদেশে।

বিজিবি ও কোস্টগার্ড কর্মকর্তাদের দাবি, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা সামান্যই। রোহিঙ্গা বোঝাই অনেক নৌকাকে অনুপ্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে এবং অনেক রোহিঙ্গাদের পুশব্যাক করা হয়েছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের মুখে সরকার পতনের পরপরই অস্থিরতা তৈরির সুযোগ নেন রোহিঙ্গারা। মাঠ প্রশাসন না থাকায় সীমান্তের কিছু দালাল টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের নাফনদী পাড়ি দিতে সহযোগিতা করার অভিযোগ করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

সর্বশেষ টেকনাফে গত ৫ আগস্ট রাতে দালালের মাধ্যমে অনুপ্রবেশকালে শাহপরীরদ্বীপের কাছাকাছি রোহিঙ্গাবোঝাই দুটি ট্রলারডুবির ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩১ রোহিঙ্গার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, ছাত্র আন্দোলনের মুখে সরকার পতনের পরপরই দেশে অস্থিরতা তৈরির সুযোগ নেন সীমান্তের কিছু দালাল। ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ করতে সুযোগ করে দিচ্ছে। সরকার পতনের দিন সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকালে বোট ডুবে ৩১ রোহিঙ্গার মরদেহ ভেসে আসে। এ সময় দুইজকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। নাফ নদীতে এখনো হাজার হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অপেক্ষা করছে।

টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসাইন খোকন বলেন, কিছু অসাধু লোক সাগর পথে মিয়ানমারে প্রতিনিয়ত জ্বালানি তেলসহ নানা পণ্য পাচার করছে। তারা যে বোট দিয়ে এসব পণ্য নিয়ে যায়, ফেরার পথে সেই বোটে রোহিঙ্গা নিয়ে আসে। এরকম আমি শতাধিক রোহিঙ্গা বোটসহ আটক করেছি।

টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি)-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ জানান, গত কয়েক দিনে ১৫-২০টি মরদেহ টেকনাফের বিভিন্ন জায়গায় ভেসে আসে। তবে মরদেহগুলো কোথা থেকে আসছে সেটি সম্পর্কে সুষ্পষ্ট কোনো তথ্য পাইনি। কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে সীমান্তে কোনো ধরনের প্রভাব পড়েনি। তবে কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছিল, পরে তাদের আটক করে পুশব্যাক করা হয়েছে। নাফনদীতে অনেক মিয়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশে ঢোকার অপেক্ষায় আছে। তবে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে আছে।

বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে, এইরকম কিছু রোহিঙ্গার খোঁজ পান এই প্রতিবেদক।

টেকনাফ লেদা ২৪ নম্বর ক্যাম্পে অনুপ্রবেশ করা মিয়ানমারের নাগরিক আসমত উল্লাহর সঙ্গে কথা হয়। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, ৬ আগস্ট টেকনাফ নয়াপাড়া সীমান্তে দিয়ে বাংলাদেশে আসেন। রফিক নামে এক বাংলাদেশি জেলেকে ৮ হাজার টাকা দিয়ে তার পরিবারের তিন সদস্য নাফনদী পাড়ি দিয়ে লেদা ক্যাম্পে আসেন। এই মূহুর্তে তারা এক আত্মীয়ের বাড়িতে অবস্থান করছেন।

শাহপরীরদ্বীপের বাসিন্দা জামাল উদ্দিন বলেন, কিছু জেলে টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে সহযোগিতা করছে। প্রতিদিন অনেক রোহিঙ্গা বিনা বাধায় প্রবেশ করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

মিয়ানমারে অবস্থানরত আব্দুল মুনাফ নামে এক মিয়ানমারের নাগরিক বলেন, মংডু শহরে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘাত চলমান। এখানে অনেক মানুষ মারা গেছে। এখানকার মানুষ প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশের দিকে পালিয়ে যাচ্ছে।


আরো খবর: