‘নতুন কমিশনে সাংবাদিক ও সংখ্যালঘু রাখার প্রস্তাব’
‘সার্চ কমিটিকে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সাংবাদিক ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোক রাখার প্রস্তাব দিয়েছে গণমাধ্যম বিশিষ্টজনরা।’
শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের কনফারেন্স রুমে গণমাধ্যম বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বৈঠক করে সার্চ কমিটি। বৈঠক শেষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, ৭১ টিভির প্রধান নির্বাহী ও ভোরের কাগজের সম্পাদক সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন সার্চ কমিটির প্রধান আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। এর আগে বেলা ১১টায় বিশিষ্টজনদের সঙ্গে প্রথম বৈঠক করে সার্চ কমিটি। সার্চ কমিটির সদস্যদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন এবং কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক বৈঠকে উপস্থিত আছেন।
ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘সবার অংশগ্রহণে যাতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয় সে বিষয়ে সার্চ কমিটিকে আমরা বলেছি। একইসঙ্গে ব্যক্তিত্বশীল লোকদের যেন এ কমিশনের সুযোগ দেওয়া হয়, এ প্রস্তাবটিও দিয়েছি।’
৭১ টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু বলেন, ‘একেবারে বিভক্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ঐকমত্য সৃষ্টি করা কঠিন। যখন সমাজের এবং রাজনৈতিক অঙ্গনের একটি অংশ এই প্রক্রিয়ার বাইরে, তখন সাধারণ মানুষের কাছে যেমন গ্রহণযোগ্য হয়, সে বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। কারণে একটি দল যখন এই প্রক্রিয়ায় আসছে না তারা তো এর বিরোধিতা করবেই। এ বিষয়ে আমরা আরও বেশি সতর্ক হওয়ার জন্য বলেছি সার্চ কমিটিকে।’
তিনি বলেন, ‘যাদেরই নির্বাচন করবেন অন্তত তাদের নাম সবার আগে মিডিয়ায় প্রকাশ করবেন। কারণ যাদের আপনার নির্বাচিত করবেন তাদের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে সাধারণ জনগণ আগেই মতামত দিতে পারবে। তা না হলে নিয়োগ পাওয়ার পর যদি কোন বিতর্কিত লোক নির্বাচিত হয়ে যায়, তখন একটা কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ধর্মীয় এবং সংখ্যায় কম এমন লোকদের পাশাপাশি নারী প্রতিনিধিত্ব রাখতে হবে। কারণ নির্বাচনে তারা সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হয়। সেখানে তাদের প্রতিনিধিত্ব থাকলে তারা ভোটদানে সাহস পাবে। একইসঙ্গে সিভিল সোসাইটি থেকে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করতে বলেছি। গণমাধ্যম থেকেও আমরা একজন-দুইজন নির্বাচন করতে বলেছি। কারণ গণমাধ্যমকর্মীরা নির্বাচন প্রক্রিয়া অত্যন্ত কাছ থেকে দেখেন। এজন্য সাংবাদিক রাখতে বলেছি।’
ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত নলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশনের ওপর অত্যন্ত গুরুদায়িত। কারণ বিগত নির্বাচন কমিশনগুলো বিতর্কিত ছিল। আগামী নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হব। এই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন করতে গেলে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হব। আর এই নির্বাচন কমিশন গঠনের দায়িত্ব পড়েছে সার্চ কমিটির ওপর।’
তিনি বলেন, ‘যেকোনো নির্বাচনের সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয় সংখ্যালঘুর। কিন্তু এ নির্বাচন কমিশনে কখনোই কিন্তু সংখ্যালঘু বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কোনো প্রতিনিধিত্ব ছিল না। তাদের প্রতিনিধিত্ব রাখতে বলেছি।’
যুগান্তরের সম্পাদক মো. সাইফুল আলম বলেন, আজকের আলোচনায় আমাদের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দিয়েছি। সার্চ কমিটিতে যেই ১০ জনের নাম প্রস্তাব করা হবে তারা যেন সাহসী, সৎ, যোগ্য এবং নির্লোভ ব্যক্তি হন। যারা আস্থার জায়গায় আছেন তাদের নাম যেন প্রস্তাব দেওয়া হয়। এমনভাবে নতুন কমিশন গঠন করা হোক, যেন কমিশন গঠন হওয়ার পর কমিশনারদের মধ্যে কোন দ্বন্দ না থাকে। এমনই নির্বাচনের জায়গায় আমাদের আস্থার ঘুন ধরেছে সেটি যেন উদ্ধার হয়।’
তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য নতুন কমিশনে এমন হোক, যারা সংবিধান অনুযায়ী, আইন অনুযায়ী কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করবে। সেখানে সাহসী ও নির্লোভ মানুষ দরকার। সোজা হয়ে মানুষকে দাঁড়াতে হবে এমন নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন।’