নয়াদিল্লি, ২৭ ফেব্রুয়ারি – বাজারে থাকা ধার মেটাতে আরও প্রায় ৩ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা ধার করতে চাইছে গৌতম আদানির মালিকাধীন আদানি গোষ্ঠী। আর সেই টাকা জোগাড় করতে গোষ্ঠীটি তাদের অস্ট্রেলিয়ায় থাকা কারমাইকেল কয়লাখনি বন্ধক রাখার কথা ভাবছে বলে দাবি করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আদানি গোষ্ঠীর অস্ট্রেলিয়ার সেই কয়লাখনির মূল সম্পদের ভিত্তিতে বিপুল পরিমাণ ঋণ সংগ্রহ করে সেই টাকা দিয়ে বাজারে থাকা ধার মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। অর্থাৎ বাজারের ধার মেটাতে আদানিরা আরও ধার নিতে চাইছে বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
প্রতিবেদন আরও বলা হয়েছে, আদানি গোষ্ঠী বিশ্বের একাধিক নামীদামি বিনিয়োগ সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আদানি গোষ্ঠীর ট্রাস্টের নিয়ন্ত্রিত, নর্থ কুইন্সল্যান্ড এক্সপোর্ট টার্মিনালকে (এনকিউএক্স টি) এই তহবিল সংগ্রহের দায়িত্ব দেয়া হবে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
আদানি ইতিমধ্যেই সম্ভাব্য ঋণদাতাদের কাছ থেকে সদর্থক বার্তা পেয়েছেন। তবে ঋণ দেয়ার আগে বিনিয়োগকারীরা আদানিদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো বিবেচনা করে দেখতে চাইছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। কারমাইকেল খনি ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ায় আদানিদের আরও বেশ কয়েকটি সম্পত্তির মালিকানা রয়েছে।
জানুয়ারির শেষের দিকে ভারতের বৃহৎতম শিল্পগোষ্ঠী আদানির বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ করে হিনডেনবার্গ। হিনডেনবার্গের অভিযোগ, কৃত্রিম ভাবে শেয়ারের দর কয়েক গুণ বাড়িয়ে আদানিরা বিশাল সম্পদ তৈরি করেছেন। কারচুপি করেই গত ৩ বছরে আদানির শেয়ার সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৮০০ শতাংশের বেশি। হিনডেনবার্গের এই রিপোর্টের জেরে আদানিদের শেয়ারের দাম মুখ থুবড়ে পড়ছে।
শুক্রবার শেয়ার বাজার বন্ধ হওয়ার পর, বর্তমানে আদানি সিকিউরিটিজের বাজার মূলধন প্রায় ৭ লাখ ১৫ হাজার ৯৮৬.৯৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। অথচ চলতি বছর ২৪ জানুয়ারিই এই শেয়ার দর প্রায় ১৯.২ লাখ কোটি রুপি ছিল। ফলে এই অল্প সময়েই বাজার থেকে ১২ লাখ কোটি রুপিরও বেশি ‘হাওয়া’ হয়ে গেছে।
হিন্ডেনবার্গের আর্থিক জালিয়াতির অভিযোগের পর থেকে সেল অফের হিড়িকে ডুবেছে আদানির শেয়ার। আদানি গোষ্ঠীর বাজার মূলধন এখন তার সর্বোচ্চ পর্যায়ের তুলনায় প্রায় ৭০ শতাংশ কম।
এদিকে শেয়ারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গৌতম আদানি ব্যক্তিগত সম্পদ হ্রাস পেয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় এক সময়ে ২ নম্বরে উঠে এসেছিলেন গৌতম আদানি। আর বর্তমানে সেখান থেকে নেমে বিশ্বের ধনীতম ২৫-এর বাইরে চলে গেছেন তিনি।
ফোর্বস এবং ব্লুমবার্গে বিশ্বের ধনীদের তালিকায় যথাক্রমে ২৬ এবং ২৯ নম্বর স্থানে রয়েছেন তিনি। বুধবার তার মোট সম্পদ ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও নিচে নেমে এসেছে।
এদিকে মধ্যেই নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করতে বাজারে থাকা বেশ কিছু ধার চুকিয়ে আদানিদের বিভিন্ন সংস্থার শেয়ারের অবস্থা একটু ভাল হয়েছিল। গোষ্ঠীটি আরও ঘোষণা করে, খুব শীঘ্রই বাকি টাকাও ফিরিয়ে দেয়া হবে। তাই নিজেদের অবস্থা ফেরাতে আদানিরা তড়িঘড়ি বাজারের ধার মেটাতে চাইছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। আর সেই কারণেই অস্ট্রেলিয়ার খনি বন্ধক রেখে টাকা ধার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আদানি গোষ্ঠী।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
এম ইউ/ ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩