শিরোনাম ::
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪২ পূর্বাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

দলীয় সিদ্ধান্তের ম্যারপ্যাঁচে উখিয়ার ২ চৌধুরী! প্রভাবমুক্ত নির্বাচন চান ভোটাররা

সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার :
আপডেট: সোমবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৪

উখিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে পুরো উপজেলায় আলোচনার ঝড় উঠেছে। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন ছক আঁকার মাধ্যমে প্রস্তুতি নিচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসাবে আপাতত ১ জনকে মাঠে ময়দানে দেখা মিললেও পুরুষ-মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রায় ৮ জন প্রার্থী ভোটের মাঠে কাজ করছে। এসব প্রার্থীদের নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

মাঠ জরিপে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে জনগণের ধারণা মতে একমাত্র হেভিওয়েট প্রার্থী হিসাবে বারবার নাম উঠে আসছে উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী’র নাম। তিনি মাঠে-ময়দানে বেশ জোরালোভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সভা, সেমিনার, ইফতার মাহফিলেও তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করছেন। পাশাপাশি তিনি এখন গরিব-অসহায়দের পাশেও দাঁড়াচ্ছেন। বিভিন্নভাবে আর্থিক ও সামাজিকভাবে সাহায্য সহযোগিতা হাতও বাড়িয়ে দিচ্ছেন। তবে সম্প্রতি দলের সভানেত্রী প্রধান মন্ত্রীর শেখ হাসিনার একটি ঘোষণা তাকে একটু বিচলিত করে তুলেছেন বলে অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে। তিনি আদৌ নির্বাচন করতে পারবেন কিনা? নাকি দলের চাপে শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে যাবেন কিনা সেটা? একদিকে দলে প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে নির্বাচন না করার চাপ, অন্য দিকে স্থানীয় দলের নেতা কর্মীদের চাপে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করা। এই দুই চাপ কিছুটা তাকে বেকায়দায় ফেলেছে! উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে দলের একক প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে দলীয় সভায়। অন্যদিকে দলের এই ঘোষণাকে যথাযথ পক্রিয়া অনুসরণ না করে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে হয়েছে মর্মে উল্লেখ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল মনসুর চৌধুরীও চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে মাঠে-ময়দানে তাঁর প্রচারণা কম বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সাধারণ ভোটাররা। দলের ত্যাগী নেতা আবুল মনসুর চৌধুরী এক সময় কক্সবাজার জেলা ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন।

উল্লেখ্য জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী উখিয়া-টেকনাফ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শাহিন আক্তারের আপন ছোট ভাই, সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি ও সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদের শ্যালক, কক্সবাজার জেলা পরিষদের বর্তমান সদস্য হুমায়ুন কবির চৌধুরীর ছোট ভাই, উখিয়া উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুর হক চৌধুরীর ভাতিজা, উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম চৌধুরীর পুত্র এবং উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান। এছাড়াও তিনি দীর্ঘ এক যুগ উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন।

জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী ইতিমধ্যে উখিয়া উপজেলার শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক উন্নয়ন ও ভূমিকা রেখেছেন। ইতিমধ্যে অর্ধ ডজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সরাসরি ভূমিকা রেখেছেন। যা উখিয়ায় বিরল। পাশাপাশি রাজা পালং ইউনিয়নকে গড়ে তুলেছেন একটা মডেল ইউনিয়ন হিসেবে। চারিদিকে শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া ও দৃষ্টিনন্দন টেকসই পরিবর্তন।

বিগত সংসদ নির্বাচনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তার বড় বোন শাহীন আক্তারকে বিজয় করার জন্য মাঠে ময়দানে তিনি নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। উখিয়া উপজেলার ৫ ইউনিয়নের ৪৫ টি ওয়ার্ড (প্রতি ওয়ার্ডে ৬ টি করে ) ২৭০ টি মহিলা সভা, ৪৫ ওয়ার্ডে ৪৫ টি কর্মী সমাবেশ, ২৫ টি পথ সভা ও কোটবাজার-উখিয়া পৃথক বিশাল সমাবেশ করা হয়েছে তার নেতৃত্বে। যার ফলে শাহীন আক্তারের বিজয় অনেকটা সহজ হয়ে উঠে ছিল। তাছাড়াও দলের মধ্যে রয়েছেন তার একক আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ। সরকারি দলের সভাপতি হিসেবে স্থানীয় প্রশাসনের উপর রয়েছেন তার ব্যাপক প্রভাব। ফলে জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী অনেকটা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পথে!

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রভাবমুক্ত রাখতে এবার নতুন মাত্রা দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এ ভোটে প্রার্থী হিসেবে নেই এমপি-মন্ত্রীদের কোনো আত্মীয়-স্বজন। কিছু উপজেলায় এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনদের মধ্যে কেউ মনোনয়নপত্র জমা দিলেও তাদের প্রত্যাহার করার অনুরোধ করা হয়েছে দল থেকে। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভোট সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। দলীয় এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনদের প্রার্থী না করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে দলটি। এ কারণে ভোট প্রভাবমুক্ত হবে এবং ইসির জন্য ভোট সুষ্ঠু করা ১০০% সহজতর হবে।

দলীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের পরিবারের সদস্য কিংবা নিকটাত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এমনকি যারা এরই মধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরও সরে দাঁড়াতে বলা হয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচন আয়োজনের স্বার্থে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এ কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন বলে দলের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন। এরই মধ্যে দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা নিজ নিজ বিভাগের মন্ত্রী-এমপিদের আওয়ামী লীগ প্রধানের এ নির্দেশনা জানিয়ে দিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, দলের মন্ত্রী, এমপি, সাবেক এমপি, বড় বড় নেতাদের ছেলে-মেয়ে, শ্যালক, স্ত্রী, ভাই-ভাতিজাসহ সকল ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য এবং যাতে কেউ নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে না পারে সেজন্য এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশের কথা দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এরই মধ্যে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের জানিয়েছেন। তারা দলের পক্ষ থেকে সভাপতির এ নির্দেশ সব জেলা-উপজেলায় নেতা-মন্ত্রী-এমপি যারা আছেন তাদের অবহিত করছেন। আমরা সবাই বিষয়টি সমন্বয় করছি, যাতে শেখ হাসিনার নির্দেশ যথাযথ ভাবে কার্যকর হয়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী ও এমপির আত্মীয়-স্বজনকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য ফোন করে বলা হয়েছে। তাদের মধ্যে দলের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য ও সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের ছেলে, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাকের ভাগনেকেও ফোন করে দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক ও নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল হাবিব রুবেলের বিরুদ্ধে আরেক প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় রুবেলকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

এদিকে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের ঘনিষ্ঠজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকার বিষয়ে এক বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, বিএনপি নির্বাচন বিরোধী অবস্থান নেয়ায় ভিন্ন প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগকেও কৌশলগত অবস্থান নিতে হয়েছে। তাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবার দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দিচ্ছে না। দল ও দলের বাইরে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি যাতে নির্বাচিত হয় সেটাই আওয়ামী লীগ প্রত্যাশা করে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপি ও দলীয় নেতারা যাতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে না পারে সেজন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কঠোর সাংগঠনিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এখনো কিছু জায়গায় কিছু প্রার্থী অনড় রয়েছেন, তা শিগগিরই মনোনয়ন প্রত্যাহারের বাধ্য করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি- মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন।

এছাড়া ক্ষমতাসীন দলে পক্ষে থেকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতা করার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছেন, তারা হলেন উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরী, হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ আলম ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ উখিয়া উপজেলার সাবেক কমান্ডার আওয়ামী লীগ নেতা জাফর আলম চৌধুরী। তাদের নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে মনে মনে ও মুখে মুখে গুঞ্জন থাকলেও ব্যক্তিগতভাবে তাঁরা এখন পর্যন্ত অন্যান্য প্রার্থীদের মতো প্রার্থীতা ঘোষণা দেয়নি, সেই সাথে তারাও ভোটের মাঠে ময়দানে নেই বললেও চলে।

উখিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী হলেন সুলতান মাহমুদ চৌধুরী। তিনি উখিয়া উপজেলা বিএনপি’র বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। দলের জন্য রয়েছে তার অনেক ত্যাগ। তিনি দলকে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে আসামি হয়েছেন প্রায় অর্ধশতাধিক মামলার। পাশাপাশি সংগঠনের প্রধান অর্থ যোগানদাতা। প্রতিটি গ্রামে মহল্লায় রয়েছে তার দলের বিশাল কর্মী বাহিনী এবং তার নিজস্ব পরিচিতি, সমর্থন ও ভোটার। পাশাপাশি ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও তৃণমূল পর্যায়ে একটি গ্রুপের পছন্দের প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন সুলতান মাহমুদ চৌধুরী৷ তারা গোপনে তার পক্ষ হয়ে বিভিন্ন ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন এবং বৈঠক করছেন।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সুলতান মাহমুদ চৌধুরীর যথেষ্ট আগ্রহ থাকায় ভিতরে ভিতরে তিনি ভোটের মাঠ অনেকটা গুছিয়ে নিয়েছেন বলে অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে। তবে দলে শীর্ষ পর্যায়ে নেতৃত্ববৃন্দের গ্রিন সিঙ্গেল না পাওয়ায় তিনি এখনো তার প্রার্থীতা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেননি বা ঘোষণা করতে পারছেন না বলে বিএনপি’র দলীয় সূত্রে জানা গেছে। সুলতান মাহমুদ চৌধুরী এলাকায় বেশ জনপ্রিয় একজন রাজনৈতিক নেতা। স্থানীয় প্রশাসন তাকে একাধিকবার গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়েছন স্থানীয় জনসাধারণের প্রতিরোধের মুখে। এমন কি তার গ্রেফতার ঠেকানোর জন্য জাগির হোসেন নামক এক বিএনপি নেতা ‌র‌্যাবের গুলিতে নিজের তাজা প্রাণও দিয়েছেন। উখিয়া উপজেলায় অন্য কোন নেতার ক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি ইতিপূর্বে।

সচেতন মহলের মতে, দলের পদ-পদবী’র কারণে সুলতান মাহমুদ চৌধুরী যদি প্রার্থী হতে ব্যর্থ হন, সেক্ষেত্রে তরুণ আলোচিত সমাজসেবক ও বিনয়ী আচরণে মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষের মন জয় করা সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান সাদমান জামী চৌধুরী প্রার্থী হতে পারেন!

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনেই অংশ নেবে না রাজপথের বিরোধীদল বিএনপি- এমন সিদ্ধান্তের কথা আগেভাগেই জানিয়েছেন দলটির নেতারা। সে অনুসারে বিএনপির নেতারা আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সব পর্যায়ের নির্বাচন বর্জন করে আসছেন। লন্ডনে বসবাস করা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অনুরূপ নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন। প্রতিনিয়ত ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে তারেক রহমান লন্ডন থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় ভার্চুয়ালি যোগ দিচ্ছেন। যে কোনো মূল্যে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার নসিয়ত করেছেন।

বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা-নেত্রীরা বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে টক শো কিংবা যে কোনো আলোচনায় নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারটি তুলে ধরছেন। সোজা সাফটা কথা বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। বরং নির্বাচন প্রতিহত করারও হুমকি দিয়েছিল।

বিএনপি কোনো নির্বাচনে আসবে না এমনটি মাথায় রেখে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনি কৌশল পরিবর্তন করে ছিল। তখন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়ে ছিল। সে প্রক্রিয়ায় উপজেলা নির্বাচনও উন্মুক্ত রাখছে আওয়ামী লীগ। দিচ্ছেন না প্রার্থীদের দলের প্রতীক। যে কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে। আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। জমিয়ে তুলেছেন ভোটের মাঠ। এদিকে অনানুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতা দলের নির্দেশনা উপেক্ষা করে উপজেলা ভোটে প্রার্থী হচ্ছেন।
বর্তমান সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন বর্জনের ধারাবাহিকতায় ৮ মে হতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের কথা ইতোমধ্যে জানিয়েছে বিএনপি। তবে দলের যে-সব নেতা এই নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার এবং ভোট বর্জনের নির্দেশ দিয়েছে দলটি। এরপরও বিএনপির অনেক নেতা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এমনি প্রেক্ষাপটে উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক দলীয় নেতাদের অনুরোধ করেছেন।

বিএনপি নেতারা বলছেন, বিএনপি দলীয়ভাবে ভোট বর্জন করলেও প্রথম ধাপের নির্বাচনে তৃণমূলে দলের ৪০ থেকে ৪৫ জন প্রার্থী ভোটে থেকে গেছেন। তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনুরোধ করেছেন। এরপর দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে অনেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বাকিরা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে এখনো অনড়।

এই প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আমাদের সাংগঠনিক সম্পাদকরা জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কাজ করছেন। আমারও কেন্দ্র থেকে ফোন করে প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলছি। অনেকে ইতোমধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এখন খুব বেশি নেতাকর্মী ভোটে নেই।

নাম না প্রকাশের শর্তে বিএনপির একজন জেলা পর্যায়ে শীর্ষ নেতা অভিমত ব্যক্ত করে বলেছেন, আসলে এবার নির্বাচনে যেহেতু দলীয় প্রতীক নেই, আমাদের উচিত ছিল ভোটে যাওয়া। এতে করে তৃণমূলে দলের সাংগঠনিক শক্তি বাড়ত নির্বাচনি কর্মকাণ্ড ঘিরে। দলের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যারা ভোটে অংশ নিয়েছে তাদের সরে যেতে। সেই অনুযায়ী ভোটে অংশ নেওয়া নেতাদের ফোন করে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করছি। এরপর যারা নির্বাচনে থেকে যাবে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে। যদিও এতে দলের সাংগঠনিক শক্তির আরো বেশি ক্ষতি হবে।

বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে আসলেও কোনো কোনো নেতা স্থানীয় পর্যায়ের ইউপি নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভও করেছেন। তার ধারাবাহিকতায় দেশের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও বিএনপির নেতারা অংশ নিচ্ছিলেন। তবে তারা সবাই যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছে না দলটি।

রাজনৈতিক বিজ্ঞজনদের মতে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি কঠোর অবস্থানের ফলে গ্যাঁড়াকলে পড়ে গেছেন উখিয়ার ২ প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় নেতা জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী ও সুলতান মাহমুদ চৌধুরী। সমর্থকদের মধ্যে কাজ করছে হতাশা। এতে উখিয়া বাসী বঞ্চিত হবেন প্রতিযোগিতামূলক একটা নির্বাচন থেকে। শ্যাম রাখি না কূল রাখি অবস্থায় এই ২ নেতা। একদিকে দলের সিদ্ধান্ত, অন্য দিকে স্থানীয় দলীয় নেতাকর্মীদের চাপ ও জনপ্রিতা। একদিকে দলের নেতৃত্ব, অন্য দিকে উপজেলা পর্যায়ের ক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায়ের চেয়ার? এলাকায় ও জনগণের সেবার জন্য প্রয়োজন জনপ্রতিনিধিত্বের ক্ষমতা, অপর দিকে দলকে সুসংগঠিত করতে প্রয়োজন দলীয় পদবি।


আরো খবর: