মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগরে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে গুলি করে নারী সাহিদা আক্তার রাফাকে (২৪) হত্যার ঘটনায় ভোলা থেকে প্রেমিক তৌহিদ শেখ তন্ময়কে (২৮) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) মুন্সীগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশ এ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। এই হত্যায় ব্যবহৃত পিস্তলটি কেরাণীগঞ্জের একটি পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: আলু রপ্তানি বন্ধ করল ভারত
নিহত নারী, ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি গ্রামের মৃত মো. মোতালেবের মেয়ে। তারা ২ ভাই ও ৩ বোন। বর্তমানে তিনি রাজধানী ঢাকার ওয়ারিতে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন ও নারিন্দা এলাকার বলধা গার্ডেন সংলগ্ন জনৈক কামাল মিয়ার বাড়িতে বাচ্চাদের দেখাশোনার কাজ করতেন। তাছাড়া ৭-৮ বছর আগে তার একটি বিয়েও হয়েছিল।
নিহত সাহিদার মা জরিনা খাতুন বলেন, অভিযুক্ত তৌহিদ নামের ১ যুবকের সাথে প্রেমের সম্পর্কের সূত্রে আমার মেয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করত। এ সময় তাদের মধ্যে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে প্রায়ই মারামারি হতো। এমনকি আমি নিজেও ঐ যুবকের কাছে বেশ কয়েকবার মারধরের শিকার হয়েছি। এর একপর্যায়ে আমি তাদের এই প্রেমের বিষয়টি মেনেও নেই। তবে ছেলের পরিবার মানতে চাইতো না। ছেলের মা আমার কাছে এই বিয়ে বাবদ ১০ লাখ টাকাও চায়। আমি মানুষের বাসা-বাড়ি কাজ করে খাই। ১০ লাখ টাকা কোথা থেকে দেব? কয়েক মাস আগে চাঁদপুরে গিয়ে আপত্তিকর অবস্থায় তারা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। এরপর থানা থেকে আমাকে খবর দেয়া হলে আমি রাগে যাইনি। এর পরে ছেলের পরিবারের সদস্যরা গিয়ে তাদেরকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে। তবে আমার কাছে ছেলেটাকে সুবিধার মনে হতো না। আমি শুনেছি সে গাঁজার ব্যবসা করে। আমি প্রায়ই আমার মেয়েকে বলতাম এই ছেলের সাথে এভাবে ঘোরাঘুরি না করতে। কিন্তু আমার মেয়ে আমার কথা শুনতো না।
মুন্সীগঞ্জে বসে মানুষ কেনাবেচার হাট
তিনি আরও বলেন, গত শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাত ১১টায় সাহিদা আমাদের সাথে বাসায় ছিলো। পরে সাহিদাকে ফোনে ডেকে নেওয়া হয়। তারপর শনিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে পুলিশের কাছ থেকে খবর পাই আমার মেয়েকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমি শুনেছিলাম ছেলের বাড়ি বিক্রমপুর। মনে হয় ঐ ছেলেই আমার মেয়েকে এখানে নিয়ে এসে হত্যা করেছে।
মুন্সীগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর আজাদ জানান, অভিযুক্ত তন্ময়কে ভোলা থেকে গ্রেফতার করা হয়ছে। আমাদের এই অভিযান এখনো চলছে। তার আগে এই ঘটনায় রোববার (১ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় নিহতের মা জরিনা খাতুন বাদী হয়ে শ্রীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তিনি আরও বলেন, প্রেমের সম্পর্কের জের ধরেই এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করে ওই মামলা দায়ের করা হয়। এ সময় নিহত তরুণী সাহিদা আক্তারের প্রেমিক তৌহিদকে আসামি করে এই মামলাটি দায়ের করেন তিনি। এদিকে নিহতের লাশ মায়নাতদন্ত শেষে মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে নিহত নারীকে মুন্সীগঞ্জের মহাসড়কে ৫ রাউন্ড গুলি করে হত্যা করা হয়।
আরও পড়ুন: অস্ত্র ও বোমাসহ ২ শীর্ষ সন্ত্রাসী আটক
শ্রীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাইয়ুম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মুন্সীগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশ আসামিকে গ্রেফতার করেছে শুনেছি। তবে এখন বিস্তারিত কিছু আমি বলতে পারব না।
প্রসঙ্গত, শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার কোলাপাড়া ইউনিয়নের দোগাছি ফুটওভার ব্রিজের অদূরে ঢাকামুখী সার্ভিস লেন থেকে গুলিবিদ্ধ নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর সকাল ৮টায় স্থানীয়রা প্রথমে লাশ দেখতে পান। এর পরে পদ্মা সেতু উত্তর থানা ও সেতুর নিরাপত্তা দায়িত্বে থাকা পেট্রোল টিমের কাছে খবর পৌঁছায়। পরে তারা জানান শ্রীনগর থানা পুলিশকে।
সান নিউজ/এমএইচ