সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩০ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

জলকেলি উৎসবে মেতেছে রাখাইন পল্লী

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

রাখাইন সম্প্রদায় মেতেছে ‘সাংগ্রেং’ বা বর্ষ বিদায় উপলক্ষে জলকেলি উৎসবে। রাখাইনদের সবচেয়ে বড় এই উৎসবে তাদের বিশ্বাস মঙ্গল জলে ধুয়ে মুছে যাবে পুরাতন বছরের সকল দুঃখ, কষ্ট, গ্লানি, অপ্রাপ্তি আর অসঙ্গতি। আর নতুন বছর হবে শুচিতা বা নির্মলের। উৎসবটি রাখাইনদের হলেও কালক্রমে এটি কক্সবাজার অঞ্চলের মানুষের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে। এই মধ্য দিয়ে তৈরি হয়েছে সম্প্রীতির এক বন্ধন। যেখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ নানা শ্রেণি-পেশার লোকজন অংশ নেন।

রাখাইন পঞ্জিকা অনুসারে ১৩৮৫ রাখাইন বর্ষের শেষ দিন ছিল গত মঙ্গলবার। আর বুধবার থেকে শুরু হয়েছে ১৩৮৬ রাখাইন বর্ষ। এই বর্ষ বিদায় ও বরণে কক্সবাজার রাখাইন সম্প্রদায়ের ৭ দিনের সাংগ্রেং বা বর্ষ বিদায় ও বরণ উৎসব পালন করে। সামাজিক নিয়ম মতে, ১৪ এপ্রিল শুরু হওয়া এই উৎসব জলকেলির মধ্যে দিয়ে শেষ হয় ২০ এপ্রিল।

উৎসব কেন্দ্র করে শেষের ৩ দিন ঢোল-বাজনা ও গানে-নেচে তরুণ-তরুণী সহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ শোভাযাত্রা সহকারে এক প্যান্ডেল থেকে অন্য প্যান্ডেলে যায়। যেখানে আগে থেকে বসে থাকে সারিবদ্ধ তরুণী। শোভাযাত্রা নিয়ে যাওয়া তরুণরা প্যান্ডেলের সামনে গিয়ে কোন একজন তরুণীকে আগে পানি নিক্ষেপ করে আমন্ত্রণ জানান। ওই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে তরুণী তরুণকে লক্ষ্য করে পানি নিক্ষেপ করে। এরপর উপয় পক্ষের মধ্যে চলে পানি নিক্ষেপের খেলা। এই খেলা এখন আর তরুণ-তরুণী’র মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। রাখাইনরা উৎসবে আগতদের মঙ্গল পানি ছিটিয়ে বরণ করছে। আর মেতে উঠছে উৎসবে।

জলকেলি উৎসব এখন ঐতিহ্যবাসী সামাজিক উৎসব রীতিতে পরিণত হয়েছে। নিজেদের মধ্যে সামাজিক বন্ধন ও ঐক্য তৈরিতে এই উৎসব ভূমিকা রাখে বলে অভিমত রাখাইনদের।

কক্সবাজার রাখাইন সম্প্রদায়ের নেতা মংথেলা রাখাইন জানান, জলকেলি উৎসব রাখাইনদের হলেও এটি কালক্রমে কক্সবাজার অঞ্চলের মানুষের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে। এবার কক্সবাজার শহরের রাখাইন পল্লীতে ১২টি প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া কক্সবাজার জেলার মহেশখালী, ঈদগাঁও, টেকনাফ, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া ও উখিয়ার রাখাইন পল্লী ঘিয়ে অর্ধশত প্যান্ডেলে তিন দিনব্যাপী এ উৎসব চলছে।

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান জানান, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। দীর্ঘদিন ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবে প্রতিবারেই পৌরসভার পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়। এবারেও করা হচ্ছে। এই উৎসব রাখাইনদের হলেও এখানে পর্যটক সহ সকলে অংশগ্রহণ করেন। এই উৎসবের সার্বিক সহযোগিতায় পৌরসভা সবসময় পাশে রয়েছে।

উৎসবের নিরাপত্তার প্রসঙ্গে কক্সবাজার পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানান, রাখাইনদের অন্যতম এ উৎসব সফল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শেষ করতে পুলিশ ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। রাখাইন পল্লীগুলোতে পোশাকধারীর পাশাপাশি সাদা পোশাকে নজরদারি রয়েছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এই উৎসব শেষ করতে জোরদার করা হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান সবাইকে রাখাইন নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘এই উৎসবগুলোতে সরকারের পক্ষ থেকেও সবসময় সহযোগিতা করা হয়। পাশাপাশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। তার’ই অংশ হিসেবে রাখাইনদের জলকেলি উৎসবে সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।’

তিনিও আশা প্রকাশ করেন রাখাইন সম্প্রদায়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলেন, ‘এই জলকেলি উৎসবের মধ্য দিয়ে পুরাতন বছরের সকল দুঃখ-গ্লানি মুছে নতুন বছর হবে নির্মলের।’


আরো খবর: