শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩৪ পূর্বাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

চকরিয়ায় জলাধার পাহাড় টিলা কৃষিজমি ও বনভুমি রক্ষায় হাইকোর্টের রুল

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: বুধবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২২

এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া::
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত এরিয়ার জলাধার, টিলা, কৃষিজমি, ফাসিয়াখালী মৌজাসমূহ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক ও সংরক্ষিত বনভূমি রক্ষায় কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) করা জনস্বার্থের এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এসএম মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বে এই রুল জারি করেন।
আদালতে বেলা ও ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আশরাফ আলী। এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শ্রী সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।
এছাড়াও গত ১০ মার্চ বালুমহালকে বিধি বহির্ভূতভাবে তালিকাভূক্তিকরণ ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কর্তৃক বালুমহালগুলো নতুন করে ইজারার উদ্দেশ্যে জারি করা টেন্ডার পরিপত্র কেন অবৈধ, আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না তাও জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
সেই সঙ্গে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে সংঘটিত ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় ও দোষীদের নিকট থেকে তা আদায় এবং বালুমহাল ও এর পাশ্ববর্তী জলাধার, টিলা, কৃষিজমি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক এবং সংরক্ষিত বনভূমি রক্ষায় বিবাদীদের প্রতি কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তাও জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে আদালত বালুমহালগুলোর ঘোষিত তালিকা এবং ১০ মার্চ টেন্ডার পরিপত্রের কার্যকারিতা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। এ সময় উল্লেখিত ছয়টি বালুমহাল যথাক্রমে চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বগাচতর, রিংভং, ডুলহাজারা, ফাসিয়াখালী মৌজাসমূহে অবস্থিত ডাঙার বিল, রিংভং খাল, বগাছড়ি খাল, পাগলীর বিল ও উচিতার বিল নামক জলাধার, সংরক্ষিত বনভূমি, টিলা, কৃষিজমি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।
পাশাপাশি বালু উত্তোলনের ফলে উল্লেখিত এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্তার যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা নিরুপণ সাপেক্ষে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি), প্রধান বন সংরক্ষক, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক (ডিসি), কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি), চট্টগ্রাম অ লের পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক, চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, কক্সবাজার জেলার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, চকরিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা, চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ‍(ওসি), ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়্যারম্যানকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে চকরিয়া উপজেলায় ইজারাকৃত বালুমহালের জলাধার ব্যতীত কৃষিজমি, বনভূমি, টিলা ও সমতল ভূমির মাটি এস্কেভেটর দিয়ে কেটে ফেলা হচ্ছে এবং শক্তিশালী ড্রেজারের মাধ্যমে ৫০-৬০ ফুট গভীর থেকে বালু তোলা হচ্ছে মর্মে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ সময় মাটি ও বালু পরিবহনের লক্ষ্যে প্রায় চার হাজার ঘনফুট আয়তনের একটি খালও ভরাট করা হয়।
এছাড়া ডুলাহাজারা ইউনিয়নের রংমহল গ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বগাইছড়ি নামক ছড়ার বউঘাটা পয়েন্টে মাটি ফেলে বন্ধ করে দেওয়া হয় পানির প্রবাহ। একই সঙ্গে ছড়ার ওপর তৈরি করা মাটির বাঁধ কাম সড়কের ওপর দিয়ে ট্রাকযোগে পরিবহন করা হচ্ছিলো মাটি ও বালু। ফলশ্রুতিতে উল্লেখিত এলাকায় মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দেয়।
প্রতিদিন ট্রাকযোগে মাটি ও বালু পরিবহনের ফলে গর্তের সৃষ্টি হয় ডুলাহাজারা-বগাইছড়ি সড়কে। ধুলো মিশ্রিত বায়ু দূষণে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে গ্রামবাসীরা। এর ফলে আসন্ন বর্ষায় ভূমিধসের আশঙ্কায় রয়েছে এই এলাকার অধিবাসীরা। সেই সঙ্গে সীমানা প্রাচীর ধসে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ ও সংরক্ষিত বনভূমি।
সংরক্ষিত বনভূমি সংকটে থাকায় বন বিভাগ উল্লেখিত ছয়টি বালুমহাল বিলুপ্ত ঘোষণার জন্য সুপারিশ করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও পরিবেশগত বিষয়সমূহ বিবেচনায় না এনে গত ১০ মার্চে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে চকরিয়া উপজেলার উল্লেখিত বিলুপ্ত ঘোষণার সুপারিশকৃত ৬টি বালুমহাল ইজারা দেওয়ার লক্ষ্যে দরপত্র আহ্বান করে যা দেশে প্রচলিত আইনের সাংঘর্ষিক।


আরো খবর: