এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::
কক্সবাজারের চকরিয়ায় একটি ইট তৈরীর মিক্সার মেশিনে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে দুই শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ছয়টার দিকে চকরিয়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড তরছপাড়াস্থ মাস্টার মাইন্ড নামের সিমেন্টের ইট তৈরির কারখানায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। গতকাল রাত সাড়ে ৭টার দিকে মরদেহ দুটি চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতালে আনলে ঘটনাটি জানাজানি হয়।
নিহত দুই শ্রমিকরা হলেন, উপজেলার ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ ঘুনিয়া এলাকার মো. শাহজাহানের ছেলে মো. শাহিন (১৮) ও চকরিয়া পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডস্থ করাইয়াঘোনা এলাকার রুহুল কাদেরের ছেলে কামরানুল ইসলাম জিহান (২০)।
স্থানীয় লোকজন জানাস, সরকারী কোনধরণের অনুমতি না নিয়ে চকরিয়া পৌরসভার তরছপাড়া এলাকায় মিক্সার মেশিনে সিমেন্টের ইট তৈরীর কারখানাটি চালু করা হয় দুই বছর আগে। এই মেশিনে বালু ও সিমেন্ট মিশিয়ে বøক তৈরী করায় একদিকে ওই কারখানার শ্রমজীবিরা জীবনঝুঁকিতে থাকে, অপর দিকে ওই কারখানা থেকে মাতামুহুরী নদী থেকে অবৈধ পন্থায় আহরিত বালুর সাথে সিমেন্ট মিশিয়ে বøক তৈরীর সময় নিকটস্থ পাড়া মহল্লা ও মসজিদ মাদ্রাসা এলাকায় ধোঁয়া ছড়িয়ে পরিবেশ দুষিত হয়ে পড়ে।
এর প্রেক্ষিতে কারখানাটি তৈরীর পরপরই স্থানীয় লোকজন প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে প্রশাসনের কোন দপ্তরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি।
সেই অবৈধ কারখানায় বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে মিক্সার মেশিনটি বন্ধ করে দুই শ্রমিক মেশিনটি পরিস্কার করার সময় হঠাৎ মেশিনটি চালু হয়। এসময় মেশিনের ভিতরে আটকে পড়া শাহিন ও জিসান পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হন।
ঘটনাটি প্রথমে মালিকপক্ষ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু কারখানার অপর শ্রমিকরা তাদের দুই সহকর্মীকে পুরো শরীর ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে রাত সাড়ে ৭টার দিকে চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসে। তাদের চেহারা ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ায় চেনার উপায় ছিল না। কিন্তু শ্রমিক ও নিকটাতœীয়রা নিহত দুই শ্রমিকের পরিচয় সনাক্ত করেন। সনাক্তের সময় হাসপাতালে আত্মীয়দের আহাজারীতে আকাশ ভারী হয়ে উঠে।
নিহত জিহানের বড় ভাই জাহেদুল ইসলাম ও বড় বোন তাসমিন আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ভাই ভুলবশত নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মারা গেছে তদন্ত করতে হবে প্রশাসনকে। এসময় শাহিনের মা হাসপাতালে এসে ছেলে মৃত দেহ দেখেই চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
ঘটনার ব্যাপারে বক্তব্য জানতে মাস্টার মাইন্ড বøক ফ্যাক্টরীর মালিক মো. গিয়াস উদ্দিনের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়, কিন্তু তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ঘটনার পর গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে গিয়াস উদ্দিনকে চকরিয়া থানা ও আশপাশে ঘুরতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন থানার সামনের ব্যবসায়ীসহ অনেকে জানান।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনজুর কাদের ভুঁইয়া জানান, ঘটনাটি শুনেই তাৎক্ষণিক হাসপাতালে পুলিশের একটি টিম পাঠিয়েছি। ওই টিম প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট তৈরীর পর মরদেহ ময়নাতদন্ত করতে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে। ##