বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৬ পূর্বাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

চকরিয়ায় সাঈদীর গায়েবানা জানাযা ঘিরে সংর্ঘষ, গুলিতে এক ব্যক্তি নিহত

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক,চকরিয়া::

জামায়াত নেতা মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাযা পড়াকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা সদরে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত নেতাকর্মীদের সংর্ঘষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ফোরকানুর রহমান (৫৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। নিহত ফোরকান চকরিয়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ছাবেদপাড়া এলাকার মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে। তিনি জামায়াতের কর্মী বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
সংর্ঘষের সময় ইট পাটকেলের আঘাতে চকরিয়া থানা পুলিশের একটি পিকআপ ও উপজেলা সরকারি হাসপাতালের টিএইচও’র সরকারি গাড়িসহ মোট পাঁচটি যানবাহন ভাংচুর করা হয়েছে। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টাকালে হামলায় চকরিয়া থানার ওসিসহ পাচ পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও সংর্ঘষে ১০-১২ জন জামাত শিবিরের নেতাকর্মী কমবেশি আহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার (১৫) আগস্ট বিকাল চারটার দিকে চকরিয়া পৌরসদরের বায়তুশরফ সড়কে ঘটেছে এ ঘটনা। এ ঘটনার পর থেকে চকরিয়া উপজেলা সদর ছাড়াও আশপাশ এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

চকরিয়া থানা পুলিশ জানান, গতকাল মঙ্গলবার বিকালে প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে উপজেলা সদরের পৌর বাসটার্মিনাল ও চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জামায়াত নেতা মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাযা পড়তে চেষ্টা করেন। এসময় পুলিশ তাদেরকে অন্য এলাকায় সরে যেতে অনুরোধ করে। পরে অবশ্য জামায়াতের নেতাকর্মীরা চকরিয়া পৌরসভার নামার চিরিঙ্গা জামে মসজিদ মাঠে জানাযার নামাজ শেষ করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেখানে গায়েবানা জানাযা শেষ করার পর পুনরায় আরেকটি জামাত করতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এসময় একপর্যায়ে তারা পুলিশের উপর চড়াও হয়ে হামলা চালায়। এতে পুলিশের একটি পিকআপ গাড়ি, পাশে থাকা চকরিয়া উপজেলা হাসপাতালের টিএইচও ডাঃ শোভন দত্তের সরকারি গাড়িসহ আশপাশের পাঁচটি গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে।
পুলিশের সঙ্গে জামায়াতের নেতাকর্মীর সংর্ঘষের সময় মুখোশধারী লোকজন এসে সংর্ঘষে জড়ালে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ফোরকানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি নিহত ও পাঁচ পুলিশসহ অন্তত ১৮-২০ জন কমবেশি আহত হয়েছেন।

চকরিয়া থানা পুলিশ জানান, ঘটনার সময় জামায়াত নেতাকর্মী ও গায়েবানা জানাযা পড়তে আসা লোকজনের ইট পাটকেলের আঘাতে চকরিয়া থানার ওসি জাবেদ মাহমুদ, থানার অপারেশন অফিসার এসআই রাজীব চন্দ্র সরকার, এসআই মামুনুর রশীদ, পুলিশ কনস্টেবল আবদুর রউফ ও সাগর গুরুত্বর আহত হয়েছেন। তাদেরকে চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ছৈয়দ ইফতেখারুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত এক ব্যক্তির মরদেহ হাসপাতালে রয়েছে। একই সঙ্গে গুলিবিদ্ধসহ ৭ জন আহত চিকিৎসা নিচ্ছে।
তিনি বলেন, হাসপাতালে আনার আগে মারা গেছেন ফোরকানুর রহমান। দেখে মনে হচ্ছে, তাঁর মাথার পেছনে ছড়রা গুলির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে।

চকরিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদ বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিনি নিজেসহ পুলিশের ৬ সদস্য আহত হয়েছেন। গায়েবানা জানাযা ঘিরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘটিত ঘটনা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে।
তিনি বলেন, প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি শেষে নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, চকরিয়ায় জানাজা নিয়ে সংঘটিত ঘটনা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে। তবে গুলিবর্ষণ পুলিশের পক্ষে করা হয়নি। এতে হতাহত কত জন তা বিস্তারিত নিয়ে জানানো হবে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, নিষেধ করা সত্ত্বেও স্থান পরিবর্তন করে গায়েবানা জানাজা পড়ে। পরে মিছিল নিয়ে পৌরশহরের সহাসড়কে পুলিশের উপর হামলা চালায়। ভাংচুর করা হয় পুলিশ, হাসপাতালের টিএইচও এবং পাবলিকের গাড়ি। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

একজনের মৃত্যুর বিষয়ে ইউএনও বলেন, হয়তো নিজেদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে হতাহত হতে পারে। তা তদন্ত করে দেখা হবে।

গতকাল রাত সাড়ে আটটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চকরিয়া পৌরশহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এসময় ইউএনও জেপি দেওয়ান, চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রাকিব-উর-রাজার নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও আনসার সদস্য নিরাপত্তা ও সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় সড়কে অবস্থান নিয়েছেন।


আরো খবর: