জামায়াত নেতা মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাযা নামাজ পড়া নিয়ে কক্সবাজারের চকরিয়ায় পুলিশের সঙ্গে জামায়াত নেতাকর্মী ও বিক্ষুব্ধ জনতার সংর্ঘষ গোলাগুলির ঘটনায় অবশেষে চকরিয়া থানায় পৃথক তিনটি মামলা রুজু করা হয়েছে। গতকাল বিকালে চকরিয়া থানার এসআই মোহাম্মদ আল ফোরকান বাদি হয়ে পুলিশের কর্তব্য কাজে বাঁধা দিয়ে তাদের উপর হামলার অভিযোগে একটি (পুলিশ এসল্ট) মামলা এবং হামলার সময় পুলিশ ও চিকিৎসকের সরকারি গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরেকটি মামলা করেছেন।
দুইটি মামলার এজাহারে ৭৫ জন করে ১৫০ জনকে এজাহারনামীয় এবং দুই থেকে তিন হাজার করে দুটি মামলায় ৬ হাজার মানুষকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
অন্যদিকে সংর্ঘষের সময় গোলাগুলিতে চকরিয়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল বারীপাড়ার বাসিন্দা ফোরকানুর রহমান (৫৫) নামের এক ব্যক্তি নিহতের ঘটনায় তাঁর স্ত্রী নুরুচ্ছাফা বেগম বাদি হয়ে গতকাল বুধবার বিকালে চকরিয়া থানায় দুই হাজার দুইশ অজ্ঞাতনামা মানুষকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা রুজু করেছেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদ।
জানা গেছে, মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাযা নামাজ ঘিরে সংর্ঘষের ঘটনায় চকরিয়া থানায় আলাদাভাবে তিনটি মামলা রুজু করা হলেও পুলিশ গতকাল পর্যন্ত কোন আসামিকে আটক করেছে এমন তথ্য নিশ্চিত করতে পারেননি।
জানা গেছে, আগেরদিন মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) বিকালে জামায়াত নেতা মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাযা নামাজ পড়তে বাঁধা দিতে এসেছে এমন গুজবের জেরধরে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা সদরের চিরিঙ্গা বায়তুশ শরফ সড়কে পুলিশের একটি পিকআপ গাড়ি ও হাসপাতালের টিএইচও ডাঃ শোভন দত্তের সরকারি গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে ছুঁড়ে মারা ইট পাটকেলের আঘাতে চকরিয়া থানার ওসি জাবেদ মাহমুদ সহ পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হন।
হামলার ঘটনার একপর্যায়ে মুখোশধারী কিছু লোক এসে ঘটনাস্থলে সংর্ঘষে জড়ালে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এসময় জানাযার নামাজ পড়ে ফেরার পথে ফোরকানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। নিহত ফোরকানুর রহমান চকরিয়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল বারীপাড়া এলাকার মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদ বলেন, হামলার ঘটনায় পুলিশের এসআই মোহাম্মদ আল ফোরকান বাদি হয়ে দুটি মামলা ও নিহতের স্ত্রী নুরুচ্ছাফা বেগম বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে গতকাল বুধবার বিকালে চকরিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করেছেন।
থানা পুলিশ রুজু করা তিনটি মামলায় কত মানুষকে আসামি করা হয়েছে খোলাসা করেনি। তবে পুলিশের একটি সুত্র জানিয়েছেন, এসআই মোহাম্মদ আল ফোরকান বাদি হয়ে করা দুটি মামলার মধ্যে বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় ৭৫ জন ও পুলিশ এসল্ট মামলার এজাহারে ৭৫ জনের নামোল্লেখ করে মোট ১৫০ জন এবং দুইটি মামলায় দুই থেকে তিন হাজার করে মোট ৬ হাজার মানুষকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
অপরদিকে নিহতের স্ত্রী নুরুচ্ছাফা বেগম বাদি হয়ে রুজু করা হত্যা মামলায় দুই হাজার থেকে ২২০০ মানুষকে অজ্ঞাতনামা দেখানো হয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও জেপি দেওয়ান বলেন, নিষেধ করা সত্ত্বেও স্থান পরিবর্তন করে গায়েবানা জানাজা পড়ে। পরে মিছিল নিয়ে পৌরশহরের সহাসড়কে পুলিশের উপর হামলা চালায়। ভাংচুর করা হয় পুলিশ, হাসপাতালের টিএইচও ডাঃ শোভন দত্তের সরকারি গাড়ি। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
ইউএনও জেপি দেওয়ান আরও বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বিকাল দুইটায় নিহতের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিকাল আড়াইটায় নামাজে জানাজা শেষে নিহতের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, ঘটনার পর গতকাল চকরিয়ার সার্বিক পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো রয়েছে। তবে, যেকোনো ধরণের পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন সজাগ রয়েছে। পাশাপাশি র্যাব পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা মাঠে রয়েছেন।
এদিকে গতকাল বিকাল চারটায় চকরিয়া উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগের উদোগে জামায়াত বিএনপির নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরআগে স্থানীয় এমপি ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব জাফর আলমের নেতৃত্বে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এরপর স্থানীয় কাজী মার্কেট চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছে শান্তি সমাবেশ।
চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটুর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য আলহাজ্ব জাফর আলম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু মুসা, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ওয়ালিদ মিল্টন, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লায়ন মোহাম্মদ আলমগীর, হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেরাজ উদ্দিন মিরাজ, চকরিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কাউছার উদ্দিন কছির, চিরিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল হোছাইন চৌধুরী, সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নবী হোছাইন চৌধুরী, ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর। এছাড়াও শান্তি সমাবেশে চকরিয়া উপজেলা, পৌরসভা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ##