বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৫ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

চকরিয়ায় কিশোর শেফায়েত খুনের মামলায় নতুন আবেদন নিয়ে এলাকায় উদ্বেগ আতঙ্ক

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: রবিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া::

কক্সবাজারের চকরিয়ায় মোবাইল চুরির পর রুটি পড়া খাওয়ানো নিয়ে তর্কাতর্কির জেরধরে সহপাঠির ছুরিকাঘাতে কিশোর ফুটবলার শেফায়েত হাবিব খুনের ঘটনাটি নতুন করে এলাকার লোকজনের মাঝে উদ্বেগ আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ঘটনার একমাস পরে বাদি কতৃক আদালতে ওই মামলায় নতুন করে আসামি সংযুক্তির আবেদন জমা দেওয়া নিয়ে আসামি হবার আশঙ্কায় অনেকে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় লোকজন জানান, গত ২৪ জুলাই বিকালে চকরিয়া উপজেলার বেতুয়াবাজারস্থ স্থানীয় ইদ্রিস মৌলভীর ছেলে মিজানের দোকান থেকে মোবাইল চুরি হলে রুটি পড়া খাওয়ানো দোকান কমর্চারী হাবিবের সঙ্গে সহপাঠী মিশুর মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। ওইসময় স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে তাদের ঝগড়া থামিয়ে দিয়ে দুইজনকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন।

কিন্তু আগের দিনের ঝগড়ার জেরধরে পরদিন (২৫ জুলাই) বিকালে শেফায়েত হাবিব বেতুয়াবাজারস্থ একটি চায়ের দোকানে বসা অবস্থায় সহপাঠী মিশুক এসে হঠাৎ করে হাবিবের পেটে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে আশপাশের লোকজন গুরুতর আহত হাবিবকে উদ্ধার করে প্রথমে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত মো: শেফায়েত হাবিব (১৮) উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কালাগাজি সিকদারপাড়া এলাকার প্রবাসী শাহাব উদ্দিনের ছেলে। তিনি স্থানীয় পর্যায়ের একজন ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন। অন্যদিকে অভিযুক্ত তারিকুল ইসলাম মিশুক (২২) একই উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নের স্কুলপাড়ার আবু বক্করের ছেলে।

এ ঘটনায় নিহতের মাতা উন্মে হাবিবা বাদি হয়ে গত ২৭ জুলাই চকরিয়া থানায় হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া তারিকুল ইসলাম মিশুকসহ দুইজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা রুজু করেছেন। পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমান মামলাটি তদন্ত করছেন।
এরইমধ্যে একমাস পরে এসে গত ২৭ আগস্ট বাদি উন্মে হাবিবা চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ছেলের খুনের মামলায় নতুন করে তিনজনকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আবেদন জমা দিয়েছেন। নতুন আবেদনে আসামি করা হয়েছে, পুর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কালাগাজী সিকদারপাড়ার সামশুল আলমের ছেলে মোহাম্মদ হোছন, বিএমচর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড পাহাড়িয়াপাড়া এলাকার আবু তালেব এর ছেলে ইসফাক প্রকাশ তৌহিদ এবং একই এলাকার আবু বক্করের ছেলে সাগরকে। আদালত বাদির নতুন আবেদনটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

এলাকাবাসী বলছে, কিশোর ফুটবলার শেফায়েত হাবিব খুনের ঘটনায় কারা জড়িত সবাই দেখেছেন। ঘটনার দিন নিহতের মাতা উন্মে হাবিবা ঘটনাস্থলে পুলিশ সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধি সবাইকে বলেছে, তার ছেলেকে খুন করেছে সহপাঠী মিশুক। তিনি বাদি হয়ে থানায় প্রকৃত হত্যকারীকে আসামি করে মামলাও করেছেন।
এলাকাবাসির অভিযোগ, কতিপয় মহলের চক্রান্তে একমাস পরে এসে বাদি নতুন আবেদন জমা দেয়ার মাধ্যমে এলাকার বাসিন্দা তিনজন নিরীহ মানুষকে মামলায় জড়ানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। যদিও এই তিনজন নিরীহ মানুষ ঘটনার সঙ্গে কোনধরনের সম্পৃক্ত নন। আমরা নিরীহ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সেইজন্য প্রশাসনের কাছে মামলার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।

বাদি কতৃক নতুন আবেদনে আসামি করা হয়েছে পুর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নের কালাগাজী সিকদারপাড়ার সামশুল আলমের ছেলে মোহাম্মদ হোছনকে। তিনি বলেন, আমি দীর্ঘ বছর ধরে স্বপরিবারে থাকি চট্টগ্রাম শহরে। সেখানে একটি পানের দোকান করে জীবিকা নির্বাহ করি। গ্রামে আমার পৈতৃক ও ক্রয়কৃত বাড়িভিট আছে।
তিনি বলেন, আমার বাড়ি লাগোয়া প্রতিবেশি ইদ্রিস মৌলভী ও তার ছেলেমেয়েরা আমার বাড়িভিটার কিছু অংশ দখলে নিতে বহুবার হামলা চালিয়েছে। সর্বশেষ তাঁরা ২০২২ সালের ৩০ মার্চ রাতে হামলা তান্ডব চালাতে শুরু করলে আমরা বাঁধা দিই। সেইদিন ইদ্রিস মৌলভী গংয়ের ধারালো দা কিরিচ ও লোহার রডের আঘাতে আমি ছাড়াও পরিবারের আরো দুইজন গুরুতর জখম হই।
এ ঘটনায় আমি হামলাকারী ইদ্রিস মৌলভী গংয়ের সাতজনের বিরুদ্ধে চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মামলা (নং ৪৬৯/২২) রুজু করি।

মোহাম্মদ হোছন বলেন, আমার মামলায় আদালতের বিজ্ঞ বিচারক ইতোমধ্যে এক আসামিকে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন। মুলত ওই আসামি জেলে যাবার পর থেকে ইদ্রিস মৌলভী গং আমাকে নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসছিলেন। সর্বশেষ গতমাসে বিভিন্নভাবে খবর পাঠিয়ে বলে আমার মামলাটি আদালত থেকে প্রত্যাহার করে নিতে হবে। নতুবা আমাকে কিশোর শেফায়েত হাবিব খুনের মামলায় জড়িয়ে দেবে। এতে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা থাকায় আমি গত ২৫ আগস্ট চকরিয়া থানায় একটি জিডির আবেদন জমা দিই।
ওই জিডি তদন্ত করতে পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমান ২৬ আগস্ট ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এটি জানতে পেরে ২৭ আগস্ট আদালতে উন্মে হাবিবা তার ছেলের খুনের মামলায় আমাকে জড়িয়ে নতুন আবেদন জমা দেন আদালতে।

ভুক্তভোগী মোহাম্মদ হোছন অভিযোগ করে বলেন, আমার পরিবারের উপর হামলার ঘটনায় মামলার আসামি ইদ্রিস মৌলভী। তার নিকট আত্মীয় হচ্ছেন নিহত শেফায়েত হাবিবের মাতা উন্মে হাবিবা। মুলত আমার মামলার প্রতিশোধ নিতে এবং আমাদের বাড়িভিটা জবরদখলের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে খুনের মামলায় আমাকে জড়ানোর জন্য বাদি উন্মে হাবিবা ও তার আত্মীয় ইদ্রিস মৌলভী এসব চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছেন। আমি বিজ্ঞ আদালতের কাছে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করছি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও চকরিয়া মাতামুহুরী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ (আইসি) পুলিশ পরিদর্শক মো মিজানুর রহমান বলেন, কিশোর শেফায়েত হাবিব খুনের মামলাটি তদন্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পাশাপাশি এজাহারনামীয় আসামি গ্রেফতারে সর্বাত্বক প্রচেষ্ঠা অব্যাহত আছে।
তিনি বলেন, বাদি কতৃক মামলার বিষয়ে আদালতে জমা দেওয়া নতুন আবেদন কপি আমি এখনো পাইনি। তবে পরবর্তীতে হাতে আসলে আদালতের নির্দেশক্রমে তদন্ত কার্যক্রমে এটি সংযুক্ত করা হবে।


আরো খবর: