ছেলের বিয়ে নিয়ে লঙ্কাকান্ড ঘটালেন পাহাড়তলীর ইউসুফ সওদাগর
বিশেষ প্রতিবেদক::
গেল আগষ্টের ২৫ তারিখ। শহরের এক আত্মীয়ের বাড়িতে ভালবাসার মানুষ মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন (২৪) এর সাথে এনগেজমেন্ট অনুষ্ঠানে বসেছিলেন মাহমুদা আনজুমান মিলি (২২)। হঠাৎ বর পক্ষের লোকজন চলে যেতে দেখে এনগেজমেন্টের আনন্দঘন পরিবেশে উৎফুল্ল মিলি (কনে) বিমর্ষ হয়ে পড়েন। তিনি জানতে পারেন খাবারের অজুহাত দেখিয়ে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বরকে সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন তার বাবা-মা। এসময় মিলি তার ভালবাসার মানুষ সাজ্জাদকে আটকাতে প্রাণপণ চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে ব্যার্থ হয় মিলি। পরে ভালোবাসার মানুষকে ফিরে পাওয়ার আশায় কাবিননামা ও যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে বর পক্ষের আত্মীয়-স্বজনসহ সমাজের গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের কাছে যান। পাশাপাশি বহুবার শ্বশুরবাড়ির সাথে যোগাযোগ করেন। তারপরেও কোন প্রকার সামাধান পায়নি বলে অভিযোগ করেন মাহমুদা আনজুমান মিলি।
মিলি বলেন, তার দীর্ঘদিনের ভালোবাসার মানুষ সাজ্জাদ হোসেন তার পিতার কথামতে তাকে আনুষ্ঠানিভাবে অপমান করেছেন। পাশাপাশি সমাজের কাছে তার পরিবারের মান-ইজ্জত ক্ষুন্ন করেছেন। কিন্তু তার পরেও সাজ্জাদকে ফিরে পাওয়ার আশায় তার মা-বাবার সাথে যোগাযোগ করা হলে উল্টো শ্বশুর-শাশুড়ি তাকে লাঞ্ছনা এবং অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। এছাড়াও সাজ্জাদের সাথে যোগাযোগ রাখলে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দিয়েছেন সাজ্জাদের পিতা-মাতা।
মিলি বলেন, সাজ্জাদ হোসেন কক্সবাজার শহরের বৃহত্তর পাহাড়তলি সমিতির সভাপতি ও দক্ষিণ পাহাড়তলি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইউসুফ সাওদাগরের ছেলে। তারা দীর্ঘদিন প্রেমের পর দুই জনে গোপনে বিয়ে করে। পরে উক্ত বিয়েকে আনুষ্ঠানিকভাবে দুই পরিবারের মধ্যে সামাজিকভাবে রুপ দেওয়ার জন্য এনগেজমেন্ট অনুষ্ঠান এর আয়োজন করা হয়েছিল গেল মাসের ২৫ আগষ্ট।
মিলির দাবী, অনুষ্ঠানের আগে সাজ্জাদ তাকে গোপনে ছেড়ে গেলেও স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে তার তেমন একটা সমস্যায় পড়তে হতোনা। কিন্তু বিষয়টি দু’পারিবারের মাধ্যমে এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর থেকে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছেন। তার কারণে ওই এলাকার মানসম্মানে আঘাত লেগেছে বলে তাদের পরিবারকে স্থানীয় লোকজন দোষারোপ করছেন। এতে আত্মহত্যা করা ছাড়া তার আর কোন পথ খোলা নেই বলে জানান মিলি।
মিলি আরো বলেন, অনুষ্ঠানে বর পক্ষের লোকজন তাদের হেয় প্রতিপন্ন করে চলে যাওয়ার কারনে তাদেও পরিবার নিয়ে সমাজেও নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যেকারনে নিরুপায় হয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেছেন মিলি। যার নং ৭৭৮/২২। এই মামলার করার পর থেকে চরম নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে বলে দাবী করেন মিলিসহ তার আত্মীয়স্বজন।
মিলির পরিবার এবং মামলার নথি থেকে জানা যায়, তারা দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্কের পর ২০১৯ সালে সাজ্জাদ মিলিকে গোপনে বিয়ে করে। বিষয়টি জানাজানি হলে সাজ্জাদের পরিবার প্রথমে মিলিকে পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিতে রাজি হয়নি। পরে নানা কারণে তারা রাজি হলেও এনগেজমেন্ট অনুষ্ঠানে খাবারের অজুহাত তুলে লঙ্কার কান্ড ঘটিয়েছেন সাজ্জাদের পিতা মোহাম্মদ ইউসুফ সাওদাগর।
স্থানীয় এক প্রতিবেশি জানান, বরপক্ষের অতিথি আপ্যায়নে বাহারী রকমের খাবারসহ বিভিন্ন ধরনের আয়োজন করেছিল কনে পক্ষ। তারা গরীব হতে পারে, কিন্তু বর পক্ষের অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে আর্থিক দৈন্যদশায় পড়লেও দুই পরিবারের সম্মতিতে অন্তত ১৪/১৫ আইটেমের বাহারি খাবার ছিল টেবিলে। মূলত বরের পিতা তার অসাধু উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য এই অজুহাত তুলেছে।
মিলি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, অনুষ্ঠানের খাবার হিসেবে তারা আমাদের কাছ থেকে কবুতর, হাঁস, গরু, দেশি মুরগী, ইলিশ, গলদা চিংড়ি ও খাসিসহ ১৪ রকমের বাহারী রকমের খাবার দাবি করেন। আমাদের আর্থিক সচ্ছলতা তেমন না হলেও তাদের চাহিদা মত আয়োজন করা হয়েছিলো। কিন্তু সবাই খাবার কাওয়ার পর আমার ও আমার পরিবারের সাথে তারা প্রতারণা করেছে।
মিলি আরও বলেন, সাজ্জাদের সাথে প্রেমের সর্ম্পের পর দুইজনই ১৯ সালে বিয়ে করে বৈধ সম্পর্কে জড়ায়। এতগুলা বছর আমি তাকে যথাসম্ভব সাপোর্ট দিয়ে এসেছি। তার জন্য জীবনে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি। সে কোন সমস্যায় পড়লে শিক্ষার্থী হয়েও বাবার জমানো টাকা তার হাতে তুলে দিয়েছি। আমাদের সম্পর্ক মেনে নিতে সমস্যা হলে তা অনুষ্ঠানের আগে কেন বললেন না তারা। এখন আমাদের সবার সম্মান নষ্ট করার পর কেন সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বলা হচ্ছে। তা আমার বোধগম্য হচ্ছেনা। এবিষয়ে জানতে সাজ্জাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে মিলি তার স্ত্রী বলে স্বীকার করেন। পওে অনুষ্ঠানে তার বাবা-মাকে যথাযথ সম্মান না করার কারণে তিনি এই সম্পর্কের ইতি টানতে চাইছেন বলে জানিয়ে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে মিলি তাকে বিয়ে করেছেন বলেও সাজ্জাদ দাবি করেন।
কক্সবাজার পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আশরাফুল হুদা ছিদ্দিকী জামশেদ বলেন, ছেলে মেয়ে দুই জনের মতের মিলনে বিয়ে হয়েছে অনেক আগেই। ওই বিয়েকে আনুষ্ঠানিকভাবে রুপ দেওয়ার জন্য কনে পক্ষ ১০০ জনের খাবারের আয়োজন করে। ওই অনুষ্ঠানে আমিও অতিথি হিসেবে ছিলাম। কনে পক্ষ যথাযথ সম্মান করেছে। পাশাপাশি ভালো খাবারও দিয়েছে। কিন্তু ছেলের বাবা ইউসুফ সাওদাগর অহেতুক আবেগের বসবতি হয়ে কান্না করে অনুষ্ঠান স্থল ত্যাগ করে।
কাউন্সিলর আশরাফুল হুদা ছিদ্দিকী জামশেদ আরো বলেন, মূলত ইউসুফ সাওদাগরের টাকা পয়সা ও মান সম্মান বেড়ে গেছে। যেকারনে ছেলের বউ ও পরিবারকে মেনে নিতে পারেনি। তবে এটি বসে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে শেষ করা যেত। কিন্তু শুনেছি কনে ছেলের দোকানে এসে নানা ঝামেলা করেছে। পাশাপাশি আদালতে মামলাও করেছে।
এদিকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সাজ্জাদের পিতা মোঃ ইউসুফ সওদাগর মঙ্গলবার রাতে মুঠোফোনে বলেন, খাবারের বিষয় নিয়ে কোন কিছুই হয়নি। এটি মেয়ে পক্ষের সাজানো নাটক। সত্যিকারের ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রভাহিত এবং আমাদের মান-সম্মান নষ্ট করার কু-মানসেই এসব মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।