শুনানি ছাড়াই দুই আসামিকে জামিন দেওয়ার ঘটনায় কক্সবাজারের জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ১৬ আগস্ট তাকে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) মামলার আইনজীবী সারওয়ার আহমেদ এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) ওই আসামিদের এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ কক্সবাজারের জেলা জজকে তলবের আদেশ দেন।
এর আগে গত ২১ জুন চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন না মঞ্জুর হওয়া আসামিদের আইন ভঙ্গ করে আদেশে মিথ্যা তথ্য লিখে একইদিনে জামিন দেওয়ার ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট।
সেই আদেশের ধারাবাহিকতায় গত ১৯ জুলাই আইন ভঙ্গ করে আদেশে মিথ্যা তথ্য লিখে আসামিদের জামিন দেওয়ার ঘটনায় নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন কক্সবাজারের জেলা জজ। তবে আদালতে দাখিল করা তার লিখিত ব্যাখ্যা যথাযথ না হওয়ায় ক্ষমার আবেদন গ্রহণ করেননি হাইকোর্ট।
ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে আইনজীবী বলেন, জমি দখল নিয়ে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ভয়ভীতি প্রদর্শন ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে মিঠাছড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ ভুট্টোসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে একই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান খোদেস্তা বেগম রিনা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী দ্রুত বিচার আদালতে নালিশি মামলা করেন। এ মামলায় আসামিরা হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইলে হাইকোর্ট ১১ এপ্রিল তাদের ছয় সপ্তাহের জামিন দিয়ে কক্সবাজারের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের সেই আদেশ মোতাবেক গত ২১ মে আসামিরা আত্মসমর্পণ করে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে জামিন চান। আদালত ৯ আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু একই দিন আসামিরা কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। তখন জেলা ও দায়রা জজ তাদের জামিন দেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন রিনা। তার এই আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট জেলা ও দায়রা জজকে তলব করে আদেশ দেন।
আইনজীবী বলেন, ২১ মে দুপুর ১২টার দিকে ৯ আসামি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করেন। এর আগেই চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আদেশের কপি পাননি উল্লেখ করে সকাল ১০টার দিকে আদেশের বিরুদ্ধে জামিনের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হলফনামাসহ আবেদন করেন আসামিরা। এ ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জামিন নামঞ্জুরের আদেশসহ অন্য কাগজপত্রের প্রত্যায়িত অনুলিপি বা প্রত্যায়িত অনুলিপির ফটোকপি দাখিল করা হয়নি। আসামিদের হাজতবাসের মেয়াদসহ সার্বিক বিবেচনায় তাদের জামিন মঞ্জুর করা হয় বলে আদেশে উল্লেখ করেছেন জেলা জজ। অথচ ৯ আসামি এক মুহূর্তও হাজতে ছিলেন না। শুনানিতে বিষয়গুলো তুলে ধরা হলে জেলা ও দায়রা জজ আসামিদের কীভাবে জামিন দিলেন, এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মামলার যাবতীয় নথি নিয়ে আসতে বলেন আদালত।
পরে গত ২৭ জুলাই চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন নামঞ্জুর হওয়া আসামিদের আইন ভঙ্গ করে আদেশে মিথ্যা তথ্য লিখে একই দিনে জামিন দেওয়ার ঘটনায় নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করায় কক্সবাজারের জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈলকে অব্যাহতি দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আইন লঙ্ঘন করে জামিন দেওয়া ৯ জন আসামির জামিন কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে আদালত রুল জারি করেন। পাশাপাশি তাকে ভর্ৎসনা করেন আদালত। বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।