টানা বর্ষণে কক্সবাজার শহর ও আশপাশের এলাকায় পাহাড় ধসের চারটি ঘটনায় এক দিনে দুই শিশুসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও তিন জন।
বৃহস্পতিবার ভোরে পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিকদার বাজার এলাকায় একটি শিশু, এবিসি ঘোনা এলাকায় এক নারী, বিকেলে সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের দক্ষিণ মুহুরী পাড়া পাতাবুনিয়া এলাকায় আরেক নারীর মৃত্যু হয়।
রাতে শহরের সৈকত পাড়ায় পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে এক শিশু নিহত এবং তিনজন আহত হয়।
নিহতরা হল, শহরের এবিসি ঘোনা এলাকার মোহাম্মদ করিমের স্ত্রী জমিলা আক্তার, সিকদার বাজার এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে পাঁচ বছর বয়সী শিশু নাজমুল হাসান, সৈকত পাড়ার মো. সেলিমের ১৩ বছর বয়সী মেয়ে মীম এবং দক্ষিণ মুহুরী পাড়া পাতাবুনিয়া এলাকার বজল আহমদের স্ত্রী লায়লা বেগম।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি মো. রকিবুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও স্থানীয়দের বরাতে তিনি বলেন, রাত ৮টার দিকে ভারি বৃষ্টির সময় শহরের সৈকত পাড়ায় সেলিমের ঘর মাটিচাপা পড়ে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তিনজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। পরে পুরো মাটি সরিয়ে শিশু মীমের মরদেহ উদ্ধার করে।
বৃহস্পতিবার ভোরে সিকদার বাজার এলাকায় বসবাসকারী সাইফুল ইসলামের বাড়ির উপর পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে। ঘরের মাটির দেয়াল ভেঙে সাইফুলের ঘুমন্ত শিশু চাপা পড়ে। স্থানীয়রা মাটি সরিয়ে তাকে উদ্ধার করে তাকে সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এবিসি ঘোনা এলাকায় জমিলা আক্তারের মৃত্যু নিয়ে ওসি রকিবুজ্জামান বলেন, ভোরে ভুক্তভোগী নারী রান্না ঘরের পাশে ঘুমিয়ে ছিলেন। স্বামী আরেক কক্ষে ঘুমিয়েছিলেন। পাহাড় ধসে মাটিচাপা পড়েন জমিলা। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত লায়লা বেগমের স্বজনদের বরাতে ওসি বলেন, দুপু্রে খাবার খাওয়ার সময় ভুক্তভোগী নারী তার ছেলে জোনায়েদকে কোলে নিয়ে পাহাড়ের মাটি ভাঙছে কিনা দেখতে বেড়ার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছিলেন।
এ সময় তিনি মাটিচাপা পড়েন। তার স্বামী ও দুই মেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে পারলেও শিশু সন্তান ও লায়লা চাপা পড়েন।
স্থানীয়রা শিশুটিকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করতে পারলেও লায়লার মৃত্যু হয় আগেই।
বুধবার মধ্যরাত থেকে কক্সবাজার শহরে টানা মাঝারি ও ভারি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে।
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিনড্রাইভ সড়কের হিমছড়ি এলাকায় পাহাড় ধসে সকাল থেকে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। কক্সবাজার শহর ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধস ও ফাটল দেখা দিয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে বসবাসকারী বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে আসতে প্রচার চালাচ্ছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মো. আবদুল হান্নান বলেন, বুধবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত ৩৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১২৮ মিলিমিটার।
গত ৩ জুলাই উখিয়ায় রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের দুইটি ক্যাম্পে পাহাড় ধসে দুই জনের মৃত্যু হয়। ১৯ জুন উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির ও আশপাশের কয়েকটি জায়গায় পাহাড় ধসে ৮ জন রোহিঙ্গা ও দুই বাংলাদেশি নিহত হন।
২১ জুন ভোরে কক্সবাজার শহরের বাদশাঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসে ঘুমন্ত স্বামী-স্ত্রী নিহত হন।