কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার শহরে সংঘটিত হামলা, ভাঙচুর ও ছাত্রলীগের ৪ নেতাদের মারধরের ঘটনায় আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট পাঁচটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্রে করে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা।
১৬ জুলাই জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের সময় আহত কক্সবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রাজীবুল ইসলাম মোস্তাক বাদি হয়ে বুধবার (২৪ জুলাই) সন্ধ্যায় এই মামলাটি দায়ের করেন বলে নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম।
তিনি জানান, ছাত্রলীগ নেতা বাদি হয়েছে দায়ের করা মামলাটিতে ১০৩ জনের নাম এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত বলা হয়েছে আরও অনেকেই। এ নিয়ে কক্সবাজারে মোট পাঁচটি মামলা দায়ের করা হলো। এই ৫ মামলায় বুধবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আরও ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, কক্সবাজারে সংঘটিত ঘটনায় ৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় আরও ১১ জনসহ এ পর্যন্ত ৩৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলায় জড়িতদের শনাক্ত করতে পুলিশ কাজ করছে। ভিডিও, ছবি দেখে যাদের শনাক্ত হচ্ছে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।
কোটা আন্দোলনের শুরুতে কক্সবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত ও স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ১৬ জুলাই বেলা ১১টায় মিছিল করে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সড়কের লিংক রোড এলাকায় অবস্থান নেয় কক্সবাজার পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী ও শিবির নেতারা। পুলিশ ওই সময় সড়ক থেকে তাদের সরিয়ে দিলেও এরা মিছিল সহকারে কক্সবাজার সরকারি কলেজে গেটে যান। ওখানে আগে থেকে অবস্থান নেয়া ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ওখানে গাড়ি ভাঙচুরও করা হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর আন্দোলনকারীরা আবারও অবস্থান নেন লিংক রোড এলাকায়। আবারও পুলিশ তাদের সরিয়ে দেন। কিন্তু আন্দোলনকারী ওখান থেকে বিকাল ৪টায় মিছিল সহকারে কক্সবাজার শহরে আসে। তারা শহরের লাল দিঘীর পাড় এলাকায় গিয়ে যেখানে অবস্থিত জেলা আওয়ামী লীগ, জাসদ ও জাতীয় পার্টির কার্যালয় ভাঙচুর করে। কুপিয়ে ও মারধরে আহত করা হয় ছাত্রলীগের ৪ নেতাকে। একই সময় পাশের একটি মসজিদেও ভাঙচুর করে তারা।
ওই ঘটনার পর বুধবার উভয় পক্ষ মিছিল ও সভা করে কর্মসূচি শেষ করে। কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর চালানো হয় তাণ্ডব। সন্ধ্যার পর আন্দোলনকারীরা মিছিল সহকারে বাস টার্মিনাল হয়ে গাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, বোমা বিস্ফোরণ করতে করতে আসতে থাকে শহরের দিকে। এ খবরে লালদিঘীর পাড় এলাকায় জড়ো হন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী। মিছিলটি ওই এলাকায় পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গেই উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। একের পর এক গুলি বর্ষণ, হাত বোমার বিস্ফোরণে সংঘর্ষ চলতে থাকে। রাত ৯টার দিকে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনেন। ওই সময় লালদিঘীর পাড় এলাকায় অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ। আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেন ফজল মার্কেট এলাকায়। এক পর্যায়ে পুলিশ-বিজিবি, র্যাবের সঙ্গেও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয় আন্দোলনকারীদের। ওইদিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সময় লাগে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত। ওই দিনের ঘটনায় একজনের মৃত্যু ও আহত হন আরও ৩৭ জন।
শুক্রবার সন্ধ্যার পর আবার শহরের প্রধান সড়কের বার্মিজ মাকের্ট, টেকপাড়া, তারাবানিয়ার ছড়া, রুমালিয়ারছড়া, আলীজাহান এলাকায় অবস্থান নেন এরা। মধ্যরাত পর্যন্ত গাড়ি ভাঙচুর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়