হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া::
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উখিয়ার হাটবাজারগুলোর নিলাম ডাক উঠেছে আগের তুলনায় কয়েক শ’ গুণ বেশি। মাত্র ছয় বছর আগে ৭৫ হাজার টাকায় যে বাজারটি নিলামে উঠেছিল সেটি এবার উঠেছে এক কোটি ৩৯ লাখ টাকায়।
এদিকে দিন দিন বাড়ছে হাটবাজারগুলোর পরিধি। বাড়ছে দোকান-পাট ও ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যা। আগের চেয়ে কেনাকাটাও বেড়ে গেছে বহুগুণ। এসব কারণে বেড়ে গেছে হাটবাজারগুলোর নিলাম ডাকও। একদিকে মানুষের আয় কমছে, অন্যদিকে দিন দিন বাড়ছে জীবনযাত্রার ব্যয়। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি যেন একটি নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার উখিয়ার পাঁচটি ইউনিয়নের ১০টি হাটবাজার প্রকাশ্যে আগামী বাংলা সনের জন্য নিলাম দেয়া হয়। নিলামে সর্বোচ্চ দরে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত কুতুপালং বাজারটি উঠে যায়।
এ বাজারটি ২০১৬ সালে মাত্র ২০ হাজার টাকায় নিলাম হয়েছিল। কিন্তু পরের বছর ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা ঢলের পর থেকে বাজারের নিলাম দর উঠতে শুরু করে।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার বাজারটি দুই কোটি ২৫ লাখে নিলাম হয়।
কুতুপালং এলাকার মুজিবুল হক বলেন, ফজরের নামাজের পর থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা এই বাজারে বাজার করতে আসেন। আমরা স্থানীয়রা ঘর থেকে বের হতে না হতেই রোহিঙ্গারা আগে-ভাগে বাজারে চলে আসেন। তাদের কারণে বাজারে দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে।
আব্দুল লতিফ বলেন, নিলাম ডাক বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় জনজীবনেও তার প্রভাব পড়বে। মাছ-মাংস, তরি-তরকারি ও নিত্যপণ্য বিক্রিতে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হবে। যা মানুষের পকেট কাটা যাবে।
অন্যদিকে বালুখালী বাজারটি এক কোটি ৩৯ লাখ টাকায় নিলাম ডেকেছেন গিয়াস উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার নুরুল আবছার চৌধুরী জানান, ২০১৬ সালে বালুখালী বাজারটি মাত্র ৭৫ হাজার টাকায় আমি নিলাম ডেকেছিলাম। উখিয়া ও সোনারপাড়া বাজারেও উঠেছে চড়া মূল্য। তবে হলদিয়ার মরিচ্যা বাজারটি আগের মতোই রয়েছে।
উখিয়া দারোগা বাজারের স্থায়ী বাসিন্দা মুসলেহ উদ্দিন বলেন, কোটি কোটি টাকায় বাজার নিলাম হলেও এখনো হাট-বাজার গুলোর অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও বাজার নিয়ন্ত্রণে নজরদারি নেই।
উখিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাতেমা, খালেদা ও ইয়াছমিন বলেন, করোনার প্রভাবে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ ছিল। এখন স্কুল খোলা হয়েছে। আমরা তিন বান্ধবি হেটে হেটে স্কুলে যায়। স্কুলে যাওয়ার পথে উখিয়া প্রেস ক্লাব সংলগ্ন ব্রিজের নিচে উখিয়া বাজার ও ষ্টেশনের হোটেল গুলোর ময়লা ফেলা হয়। যার কারণে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সেদিকে কারো কোন খবর নেই। আমরা মুক্ত বাতাসে সুন্দর পরিবেশে হাটতে পারি না।সব দিকে দুর্গন্ধ। পরিবেশ দিন দিন খারাপ হচ্ছে।
উখিয়া সদর কাজি পাড়া এলাকা হয়ে দারোগা বাজার দিয়ে উখিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন তাহমিদ কবির ও তামজিদ কবির। এদের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।
তারা জানান, দারোগা বাজারের ড্রেনের ওপর ময়লা আবর্জনা, ষ্টেশনে স্কুলের সামনে অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে রাস্তা পারাপারে ভয় লাগে।
উখিয়া বঙ্গমাতা কলেজের ছাত্রী সুইটি জানান, বালুখালী থেকে গাড়িতে করে আমাকে উখিয়ায় আসতে হয়। বালুখালী, কুতুপালং ও উখিয়া ষ্টেশনে দীর্ঘ যানজট লেগেই থাকে। উখিয়া ষ্টেশনে গাড়ি থেকে নেমে বঙ্গমাতা মহিলা কলেজে হেটে হেটে যাওয়ার পথে রাস্তার ধারে ফেলে রাখা ময়লার দুর্গন্ধে নাকে রুমাল দিয়ে যেতে হয়। বিশ্রি গন্ধ। আমরা পরিচ্ছন্ন সুন্দর একটি উখিয়া দেখতে চাই।
পরিকল্পিত উখিয়া চাই এর আহবায়ক সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, অপরিকল্পিত বাজার ব্যবস্থা, হোটেল ও বাসা বাড়ির ময়লা ড্রেনে ও রাস্তার ধারে যত্রতত্র ফেলে রাখায় পরিবেশের মারাত্নক ক্ষতি হচ্ছে। চলাচলের অনুপযোগি, যানজট ও নিত্যপণের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে জনমনে ক্ষোভের সৃস্টি হয়েছে