সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:০২ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

উখিয়ার অপরাজিত জনপ্রতিনিধি জাহাঙ্গীর চৌধুরী’র স্বেচ্ছায় পদত্যাগ! ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন

সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার :
আপডেট: বুধবার, ১ মে, ২০২৪

উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের টানা ৩ বারের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী স্বেচ্ছায় স্ব পদ পদত্যাগ করেছেন। তিনি উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেনের নিকট তার পদত্যাগ পত্র জমা দেন।

২০১১ সালের ইউপি নির্বাচনে জয়ী হয়ে উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী। ২০২১ সালে টানা তৃতীয়বারের মতো জিতে  বর্তমানেও এই পদে আসীন ছিলেন। স্বেচ্ছায় স্বপদ থেকে ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ইং তিনি পদত্যাগ করেন।

রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী নিজ পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের ফলে তার স্থলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দায়িত্ব প্রদান করার হয়েছে রাজা পালং ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ ও রাজাপালং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ সালাউদ্দিন মেম্বারকে। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য তিনি পদত্যাগ করেছেন। ক্ষমতাসীন দলের একক প্রার্থী হিসেবে তিনি এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বলে দলীয় সুত্রে জানা গেছে।

জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের টানা ৩ বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। তিনি রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের টানা ৫ বারের সফল চেয়ারম্যান শাহ কামাল চৌধুরীকে পরাজিত প্রথম বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীর পুত্র উখিয়া উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তারেক মাহমুদ চৌধুরী রাজিবকে পরাজিত করে ২য় বার এবং উখিয়া উপজেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব সাদমান জামি চৌধুরীকে পরাজিত করে টানা তিন বার রাজাপালং পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

ভোটের রাজনীতিতে জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী অপ্রতিরোধ্য হয়ে দাড়িয়েছেন। তিনি এখনো রাজনীতির মাঠে পরাজয়ের স্বাদ গ্রহণ করেন নি। কৃষক লীগের উপজেলা সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে সরাসরি রাজনৈতিক অঙ্গনে পা রাখেন জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী। এরপর রাজাপালং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন দলীয় কাউন্সিলদের সরাসরি ভোটে।

সর্বশেষ, উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম চৌধুরীর ছোট পুত্র জাহাঙ্গীর ২০১৪ থেকে টানা ৮ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করার পর ২০২২ সালের ২৮ জুলাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনোনীত হন।

জাহাঙ্গীরের আপন বোন শাহীন আক্তার কক্সবাজার-৪ আসন থেকে পরপর দুই বার নির্বাচিত বর্তমান সংসদ সদস্য। জাহাঙ্গীর এই দুই নির্বাচনে বোনের বিপরীতে শক্তিশালী একজন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।

এছাড়াও উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় জেলা নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে দলের একক প্রার্থী হিসেবে নিরংকুশ সমর্থন পান জনপ্রতিনিধিত্ব করার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এই রাজনীতিবিদ।

উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী দলের মধ্যে একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসাবে এলাকায় তার যথেষ্ট ইমেজ ও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তাদের মতে রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের টানা ৩ বারের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী নিজের স্বকীয়তায় নিয়ে রাজনীতি করে দলকে যেমন সুসংগঠিত করেছেন, তেমনি রাজনীতির মাঠে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করে নিজেকে দলের নেতাকর্মীদের কাছে আলাদা গ্রহণ যোগ্য করে তুলেছেন।

জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নিজের জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ” জনগণের  ভালোবাসা ও দলের প্রিয় নেতাকর্মীদের সমর্থন এবং জনগনের আন্তরিকতা আমাকে সাহস জুগিয়েছে নির্বাচনে প্রার্থী হতে। সেবা করার ব্রত নিয়ে আমার রাজনীতির পথচলা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে বিশেষায়িত উপজেলা উখিয়াকে যোগ্য অংশীদারে পরিণত করতে চাই। ”

রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবুল ফজল জানান, জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী ইতিমধ্যে উখিয়া উপজেলার শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক উন্নয়ন ও ভূমিকা রেখেছেন। ইতিমধ্যে রাজাপালং ইউনিয়নে অর্ধ ডজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সরাসরি ভূমিকা রেখেছেন। যা উখিয়ার ইতিহাসে বিরল। পাশাপাশি রাজা পালং ইউনিয়নকে গড়ে তুলেছেন একটা মডেল ইউনিয়ন হিসেবে। চারিদিকে শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া ও দৃষ্টিনন্দন টেকসই পরিবর্তন।

বিগত সংসদ নির্বাচনের দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী শাহীন আক্তারকে বিজয় করার জন্য মাঠে ময়দানে তিনি নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। উখিয়া উপজেলার ৫ ইউনিয়নের ৪৫ টি ওয়ার্ড (প্রতি ওয়ার্ডে ৬ টি করে ) ২৭০ টি মহিলা সভা, ৪৫ ওয়ার্ডে ৪৫ টি কর্মী সমাবেশ, ২৫ টি পথ সভা ও কোটবাজার-উখিয়া পৃথক বিশাল সমাবেশ করা হয়েছে তার একক নেতৃত্বে। যার ফলে শাহীন আক্তারের বিজয় অনেকটা সহজ হয়ে উঠে ছিল!

তাছাড়াও দলের মধ্যে রয়েছেন তার একক আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ। সরকারি দলের বর্তমান সভাপতি হিসেবে স্থানীয় প্রশাসনের উপর রয়েছেন তার ব্যাপক প্রভাব। যেগুলোকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতেও তিনি এলাকার উন্নয়নে যথেষ্ট অবদান রাখতে পারবে বলে সচেতন মহল মনে করেন। সব মিলিয়ে জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী অনেকটা সহজেই উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পথে!

জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর পিতা হলেন নুরুল ইসলাম চৌধুরী (ঠান্ডা মিয়া)। উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের তার জন্ম। পেশা তিনি একজন শিক্ষক ছিলেন। পরে তিনি সরাসরি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। একজন নীতিবান সমাজ সেবক ও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। নুরুল ইসলাম চৌধুরী রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার ২ মেয়ের জামাই সাবেক সংসদ সদস্য। নুরুল ইসলাম চৌধুরীর বড় মেয়ে জামাই হলেন সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজল্লাহ ফরিদ। তিনি টানা ২ বার সংসদ সদস্য ছিলেন। তার ছোট মেয়ের জামাই হলেন সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি। তিনিও উখিয়া টেকনাফ আসনের ২ বারের সংসদ সদস্য ছিলেন। আবদুর রহমান বদির স্ত্রী (নুরুল ইসলাম চৌধুরীর ছোট মেয়ে) শাহিন আক্তারও টানা ২ বারের বর্তমান সংসদ সদস্য। অর্থাৎ : নুরুল ইসলাম চৌধুরীর পরিবারেরই সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে তিন তিন জন সংসদ সদস্য। নুরুল ইসলাম চৌধুরী বড় ছেলে অধ্যাপক হুমায়ুন কবির চৌধুরী কক্সবাজার জেলা পরিষদের বর্তমান সদস্য। ছোট ছেলে জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের টানা তিন বারের বর্তমান চেয়ারম্যান। পাশাপাশি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী একযুগের বেশি সময় ধরে উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সভাপতির দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী দ্বাদশ জতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন। নুরুল ইসলাম চৌধুরীর ছোট ভাই অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী উখিয়া উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান। নুরুল ইসলাম চৌধুরীর ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগমও উখিয়া উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী তৃতীয় ধাপে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২ মে। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ৫ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১২ মে এবং প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হবে ১৩ মে। এবারই প্রথম রামু ও উখিয়া উপজেলার
ভোটাররা ইভিএমে ভোট দেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।


আরো খবর: