শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

আন্দামান সাগরে ভাসমান ২০০ রোহিঙ্গাকে উদ্ধারে সরব জাতিসংঘ

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২২

জাতিগত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বহনকারী একটি নৌকা এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আন্দামান সাগরে আটকে রয়েছে। নৌকার ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর থেকে তারা ওই অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সাগরে ভাসমান রোহিঙ্গাদের উদ্ধারের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।

বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা এই আহ্বান জানায়। শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। এছাড়া পৃথক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম ব্যাংকক পোস্ট জানিয়েছে, থাইল্যান্ডে ৪৮ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে দেশটির পুলিশ

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নৌকা নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর প্রায় ২০০ রোহিঙ্গা শরণার্থীর আন্দামান সাগরে ভাসমান অবস্থায় থাকার খবর সামনে আসার পর তাদের উদ্ধার করতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা।

ইউএনসিএইচআর বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা থাইল্যান্ডের উপকূলে একটি নৌকায় আটকা পড়েছে বলে তারা রিপোর্ট পেয়েছে। গত ১ ডিসেম্বর তাদের বহনকারী নৌকার ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর থেকেই তারা সাগরে ভাসছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘নৌকায় আটকে থাকা এসব রোহিঙ্গা শরণার্থী কয়েকদিন ধরে খাবার ও পানি ছাড়াই সেখানে রয়েছেন এবং তারা চরম পানিশূন্যতায় ভুগছেন।’

অবশ্য আটকে থাকা শরণার্থীদের কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে এমন তথ্য যাচাই করা হয়নি বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। তবে ইউএনসিএইচআর বিবৃতিতে বলেছে, ‘মানুষকে উদ্ধার না করা হলে এবং নিরাপদে সাগর থেকে সরানো না হলে আগামী দিনে অতিরিক্ত প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।’

এদিকে চলতি মাসের শুরুর দিকে ইউএনসিএইচআর জানায়, মিয়ানমার এবং বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঝুঁকিপূর্ণ নৌকাযাত্রা ‘নাটকীয় ভাবে বৃদ্ধি’ পেয়েছে।

মিয়ানমারের সহিংসতা ও বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে প্রতি বছর শত শত রোহিঙ্গা মুসলিম ঝুঁকি নিয়ে ছোট নৌকায় চেপে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করেন। শিবিরের ক্রমবর্ধমান অবনতিশীল পরিস্থিতি এবং মিয়ানমারে গত বছরের সামরিক অভ্যুত্থানের পর বিপজ্জনক এই যাত্রার চেষ্টাকারীর সংখ্যা বেড়েছে।

বৃহস্পতিবার বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বহনকারী নৌকাটি গত নভেম্বরের শেষের দিকে বাংলাদেশ থেকে যাত্রা শুরু করে। পরে থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় রানোং উপকূলে পৌঁছানোর পর নৌকাটি ফুটো হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন মানবাধিকার সংস্থা আরাকান প্রজেক্টের পরিচালক ক্রিস লিওয়া।

মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার গবেষক রাচেল ছোয়া-হাওয়ার্ড এক বিবৃতিতে বলেছেন, সাত বছর আগে আন্দামান সাগর সংকটে ব্যাপক প্রাণহানি হয়েছিল। সেই ঘটনার সাত বছর পর সেনাবাহিনী পরিচালিত মিয়ানমারে নিপীড়ন এবং বাংলাদেশি শরণার্থী শিবিরের অস্বাভাবিক অবস্থা থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গা জনগণ এখনও সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে বিপজ্জনক যাত্রায় নামছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুযায়ী, সমুদ্রে থাকা মানুষ দুর্দশায় থাকলে তাদের উদ্ধার করা এবং নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেওয়া প্রয়োজন। জীবন রক্ষার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এই দুর্ভোগ লাঘব করতে আরও বিলম্ব করা বা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর যে কোনো প্রচেষ্টা অযৌক্তিক।’

ইউএনসিএইচআর জানিয়েছে, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মিয়ানমার এবং বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৯২০ জন – যাদের বেশিরভাগই রোহিঙ্গা – বিপজ্জনকভাবে সমুদ্রপথে ভ্রমণ করেছে। যেখানে ২০২১ সালে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ২৮৭ জন।

এছাড়া বিপজ্জনক এই যাত্রায় প্রায় ১১৯ জনের মৃত্যু বা নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

জাতিসংঘের শরণার্থী এই সংস্থাটি আঞ্চলিক সরকারগুলোকে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে এবং বলেছে, ভাসমান ওই রোহিঙ্গাদের জন্য যে কোনও প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত তারা। তবে রোহিঙ্গাদের বহনকারী ওই নৌকার অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত জানায়নি সংস্থাটি।

এদিকে থাইল্যান্ডের হাইওয়ে পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন ৪৮ জন রোহিঙ্গা অভিবাসী। দেশটির সংবাদমাধ্যম ব্যাংকক পোস্ট জানিয়েছে, হাইওয়ে পুলিশ বুধবার ভোরে দেশটির পাক থো জেলায় একটি ভাড়া বাসে চড়া ৪৮ জন রোহিঙ্গা অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে।

হাইওয়ে পুলিশ সাবডিভিশন ২-এর কমান্ডার পোল কর্নেল ভাচিরা ইয়াওথাইসোং বলেছেন, বহু সংখ্যক অবৈধ অভিবাসী শ্রমিককে দক্ষিণে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এমন খবরে অফিসাররা তাম্বন ওয়াং মানাওয়ের ফেটকাসেম হাইওয়েতে তল্লাশির জন্য বাসটিকে আটকে দেয়।

পরে ওই বাসটিতে ৪৮ জন রোহিঙ্গা অভিবাসীকে পাওয়া যায়। যাদের ৩০ জন পুরুষ ও ১৮ জন নারী। এছাড়া আটককৃতদের মধ্যে পাঁচজনের বয়স ছিল ১৩ বছরের কম।


আরো খবর: