শিরোনাম ::
উখিয়ার নাফ নদী থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের ছেড়ে দিল ‘আরাকান আর্মি রামু উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১০ জনের মনোনয়ন দাখিল উখিয়ায় বিএনপি প্রার্থী সুলতানের সংবাদ সম্মেলন : নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা চকরিয়ায় কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় ১৫ যাত্রী আহত কাল বৈশাখীর তান্ডব : চকরিয়া-পেকুয়ায় উড়ে গেছে বসতঘর চকরিয়ায় চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৩ জন প্রার্থীর মাঝে প্রতীক বরাদ্দ টেকনাফে একই পরিবারের তিনজন অপহরণ, ৮ ঘন্টা পর উদ্ধার টেকনাফ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৯ প্রার্থীর মনোনয়ন ফরম জমা দল নয় জনগণের চাওয়ায় আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ- পেকুয়ায় বিএনপি নেতা রাজু উখিয়ায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৩ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৫:২৫ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

পঠন দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক প্রোগ্রাম ও উখিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রযাত্রা

গুলশান আক্তার :-
আপডেট: বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, ২০২২

প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন বাংলাদেশের প্রতিটি শিশুর সাংবিধানিক অধিকার ।প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং  প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন নিশ্চিত করা প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলের দায়িত্ব। শিক্ষা লাভ করা প্রতিটি শিশুর অধিকার।সকল শিশুর জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র তারঁ জনগণের নিকট অঙ্গিকারাবদ্ধ।বাংলাদেশ ”এসডিজি” (টেকস্ইউন্নয়ন লক্ষ্য) বাস্তবায়নে স্বাক্ষরকারী দেশ ।”এসডিজি” এর ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে চতুর্থ লক্ষ্য হচ্ছে সকলের জন্য ন্যায্যতা ও একীভূত মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা ।মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন প্রতিটি শিশুর বিষয়ভিত্তিক ও শ্রেণীভিত্তিক যোগ্যতা অর্জন নিশ্চিত করা ।কোভিট -১৯পরিস্থিতির কারণে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো যোগ্যতা অর্জনে বাধাগ্রস্ত হয়। কোভিট -১৯পরিস্থিতি পরবর্তী বিষয়ভিত্তিক ও শ্রেণীভিত্তিক যোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে ”রুম টু রিড ” উপজেলায় কার্যক্রম গ্রহণ করে।উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষক ,অভিভাবক, এসএমসি , উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা শিক্ষা বিভাগ কে নিয়ে অবহিত করণ সভা মধ্য দিয়ে এটি বাস্তবায়নের শুভ সূচনা হয়। টেকস্ই উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে সকল শিশুকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত এর মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্তি, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং তথ্যপ্রযুক্তির অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে শিশুদের যোগ্যতাসম্পন্ন আত্মনির্ভরশীল নাগরিক হিসেবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষতা সম্পন্ন নাগরিক গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা শিক্ষা পরিবার সহ সংশ্লিষ্ট সকলেই।”রুম টু রিড ”  শিশুদের প্রারম্ভিক শ্রেণীতে পঠন দক্ষতা উন্নয়নে খাতা ও অন্যান্য উপকরণ বিতরণ, বিগ বুকও কথোপকথন চার্ট প্রদান, বুক ক্যাপ্টেনদের সাথে পরিচিতি ও মতবিনিময় সভা ,উপজেলা পর্যায়ে দেয়াল পত্রিকা উৎসব, প্রথম শ্রেণীর শিশুদের শিশু বরণ অনুষ্ঠান, পড়ালেখা উৎসব, অভিভাবক ও এসএমসি মতবিনিময় সভা, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও সাক্ষরতা দিবস উদযাপন, করোনা কালীন বাড়ি বাড়ি শিক্ষা উপকরণ বিতরণ (ও য়ার্কশীট খাতা ,পেন্সিল ,ইরেজার, গল্পের কার্ড ইত্যাদি )কমিউনিটি ভলান্টিয়ার নিয়োগ ও কমিউনিটি ফোরাম গঠন, কমিউনিটি পর্যায়ে স্টুডেন্ট ট্রাকিং, সরকারি কর্মকর্তা, প্রধান শিক্ষক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর বাংলা শিক্ষক বৃন্দ, এসআরএম শিক্ষক মতবিনিময় সভা, প্যারেন্টিং সেশন।
     ”রুম টু রিড ”  শিশুদের প্রারম্ভিক শ্রেণীতে পঠন দক্ষতা উন্নয়নে সকল শিশুদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করণে খাতা ও অন্যান্য উপকরণ ভুমিকা রাখে।প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণীতে শিশুদের ধ্বনি ও বর্ণ সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য  বিগ বুকও কথোপকথন চার্ট বিতরণের মাধ্যমে শিশুদের নির্ধারিত পাঠ এর বাইরে আনন্দদায়ক পাঠ নিশ্চিত করা হচ্ছে। শিশুদের নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশ সাধন করার লক্ষ্যে উপজেলার ৭৮ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিটি শ্রেণির দুই জন শিক্ষার্থীকে (বুক ক্যাপ্টেন)নির্বাচন করে তাদের দায়িত্ব প্রদানের মাধ্যমে মতবিনিময় সভার আয়োজন করায় শিশুদের নেতৃত্বের চর্চার অভ্যাস গড়ে উঠছে ।সন্তানের ভবিষ্যত গড়তে অভিভাবকগণের ভূমিকা অনস্বীকার্য যে যত বেশি সচেতন তার সন্তানের সক্ষমতা ও ততো বেশী ।এজন্য শিশুর আচরণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অভিভাবকদের সচেতন করতে প্যারেন্টিং সেশন পরিচালনা করে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রচেষ্ঠা অব্যাহত রয়েছে।সহকারীও প্রধান শিক্ষকগণের সাথে মতবিনিময় সভার  মাধ্যমে প্রতিটি শিশুর বিষয়ভিত্তিক ও শ্রেণীভিত্তিক যোগ্যতা অর্জন নিশ্চিতে তাঁদের পেশাগত সক্ষমতা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা রক্ষার প্রচেষ্ঠা রয়েছে। কমিউনিটি ভলান্টিয়ার এর মাধ্যমে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের যারা অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় শেষে রিডিং পড়ার ব্যবস্থার মা্ধ্যমে  যোগ্যতা অর্জন কার্যক্রম ন্যায্যতা ও একীভূত মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করে। শিশুদের বাংলা ভাষা চর্চার বিষয়টি মাথায় রেখে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ৮সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উদযাপন করা হয় ।সভার মাধ্যমে বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ও শিশুদের পড়ালেখার গতিশীল রাখতে , বিদ্যালয়ে এসএমসি দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং তাদের করণীয় সম্পর্কে উদ্বুদ্ধ করতে প্রতি তিন মাস অন্তর সভা করায় বিদ্যালয়ের সাথে কমিউনিটির সম্পৃক্ত বৃদ্ধি হচ্ছে।পড়ালেখা উৎসবঅনুষ্ঠানের মাধ্যমে বছরে একবার পড়াকে ঘিরে বিভিন্ন খেলার আয়োজন করায় শিশুরা পাঠ্যবই ওপাঠ্যবই বহির্ভূত গল্পের বইয়ের প্রতি  আগ্রহী হচ্ছে।শিশুর সৃজনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষে শিশুদের মৌলিক লেখা ও আঁকা নিয়ে প্রতি বছর প্রতিটি বিদ্যালয়ের দেয়াল পত্রিকা প্রকাশিত হয় এবং উপজেলা পর্যায়ে দেয়াল পত্রিকা উৎসব এর মাধ্যমে শিশুরা পুরস্কৃত করায় শিশুরা অনুপ্রাণীত হয় ।কমিউনিটি ভলান্টিয়ার এর মাধ্যমে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণে কমিউনিটি পর্যায়ে রুম টু রিড কমিউনিটি ফোরাম পরিচালনা করে যেখানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া শিশুদের বিদ্যালয়  কার্যক্রম শেষে পড়ার সুযোগ পাওয়ায় শিখন ঘাটতি পূরণ হচ্ছে ।এছাড়াও কমিউনিটি পর্যায়ে স্টুডেন্ট ট্রাকিং য়ের মাধ্যমে শিশুদের পড়ার দক্ষতা কোন পর্যায়ে আছে তা জানাএবং এবং এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা মাধ্যমে উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। করোনা কালীন বাড়ি বাড়ি শিক্ষা উপকরণ বিতরণ  (ওয়ার্কশীট খাতা ,পেন্সিল ,ইরেজার, গল্পের কার্ড ইত্যাদি ) করোনার প্রকোপ বেড়ে গেলে বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ হয়ে গেলেও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বাসায় চর্চা করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে।রুম টু রিড এর মাধ্যমে এ সময়ে পঠনদক্ষতা বৃদ্ধি এবং স্বাধীন তৈরি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ ডোর টু ডোর পদ্ধতিতে কক্সবাজারের উখিয়ার ৭৮ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয় ।মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করে ।পঠন দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে শিক্ষকদের যাবতীয় প্রশিক্ষণ ও সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে । উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের গতিশীল নেতৃত্বে এই কার্যক্রমের বিভিন্ন কর্মসূচি সফলতার সাথেএগিয়ে চলেছে ।শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে  সঠিকভাবে আনন্দঘন  ও পাঠ্যাভাসের পরিবেশ  তৈরী করা গেলে আরো কার্যকর সুফল পাওয়া যাবে বলে মনে করি।শ্রেণী শিক্ষক ও অন্য শিক্ষকগণকে মোটিভেশনাল ওয়ার্ক করা , পঠন দক্ষতা উন্নয়নে শিশুর ঝরে পড়া রোধে গৃরুত্ব অনুধাবন করা গেলে এবং সংশ্লিষ্ট অভিভাবকগণকে  বিদ্যালয়মুখী করার ব্যবস্থা করা হলে এ ক্ষেত্রে সঠিক সচেতনতা আসবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।সর্বোপরি ন্যায্যতা ও একীভূত মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ঠ  সকলকে সহযোগিতা ও প্রয়োজনীয় সব ধরনেরসেবা ও সচেতন করতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বদ্ধপরিকর।
 
লেখক
গুলশান আক্তার
উপজেলা শিক্ষা অফিসার
উখিয়া, কক্সবাজার।
(চট্টগ্রাম বিভাগের শ্রেষ্ঠ উপজেলা শিক্ষা অফিসার )


আরো খবর: