লাল কাঁকড়া বা রেড গোস্ট কার্ব সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত সন্ধান পাওয়া ৬,৭৯৩ টি কাঁকড়া প্রজাতির মধ্যে অন্যতম।
বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত কক্সবাজারের বালিয়াড়ি জুড়ে সৌন্দর্যবর্ধনকারী প্রাণী হিসেবে এই লাল কাঁকড়ার বিস্তৃতি এখন অনেকাংশেই হ্রাস পেয়েছে।
বায়োটার্বেশনের মাধ্যমে মাটির ভৌত ও জৈব-রাসায়নিক গুণাগুণের বা বৈশিষ্টের পরিবর্তন ঘটিয়ে খাদ্য চক্রে বিভিন্ন জীব-অনুজীব ও উদ্ভিদের বেঁচে থাকার মত পরিবেশ তৈরি করতে পারা লাল কাঁকড়া বায়োটার্বেটর হিসেবেও পরিচিত।
সমন্বিত উপকুলীয় ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আশরাফুল হকের মতে,কক্সবাজার অঞ্চলের সৈকতে লাল কাঁকড়া অবিকল্প পরিবেশ প্রকৌশলী।
তিনি জানান, ভূ-রাসায়নিক, জৈবিক,ভৌত এবং জলবায়ুর প্রেক্ষাপটে এই প্রাণী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতিতে তার বিস্তৃত সেবা সম্পর্কে গবেষণায় দিনদিন নতুন নতুন তথ্য জানা যাচ্ছে।
প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন (আইইউসিএন), ২০১৫ সালের একটি গবেষণায় লাল কাঁকড়াকে বাংলাদেশের সংকটাপন্ন প্রাণীর লাল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।
এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অর্থ হলো, বিগত ১০ বছরে অথবা তিনটি প্রজন্মের মধ্যে কাঁকড়ার প্রজাতিটির ৫০% বিলুপ্ত হয়েছে বা ভবিষ্যতে হবে।
আইইউসিএনের এই গবেষণার সত্যতা পাওয়া যায়, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে কাঁকড়ার বিচরণক্ষেত্র পর্যালোচনা করলে।
একসময়- সৈকতের লাবণী,সুগন্ধা, কলাতলি, হিমছড়ি, ইনানী সহ টেকনাফ জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত বিভিন্ন অংশে লাল কাঁকড়ার ব্যাপক বিচরণ দেখা গেলেও বর্তমানে স্থান গুলোতে প্রাণীটির উপস্থিতি নেই বললেই চলে।
তবে, উখিয়ার পর্যটন কেন্দ্র ইনানী সৈকতের প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে বাইলাখালী অংশে প্রায় ১০ একর জায়গা জুড়ে এখনো দেখা মিলে হাজারো লাল কাঁকড়ার সুনিপুণ বিচরণ।
আগত দর্শনার্থীদের চাপ, অসংরক্ষিত অঞ্চল সহ নানা কারণে এই অংশের কাঁকড়া প্রজনন ক্ষেত্র হুমকির সম্মুখীন।
বিপন্ন এই প্রাণীর অস্থিত্ব রক্ষায় অচিহ্নিত অঞ্চল্পটিকে সংরক্ষিত করতে স্ব-প্রণোদিত হয়ে চলতি বছরের এপ্রিলে উদ্যোগ গ্রহণ করে উখিয়া উপজেলা প্রশাসন।
পরে বিভিন্ন এনজিওর সহযোগিতায় পরিবেশবান্ধব বেষ্টনী তৈরি, বৃক্ষরোপণ, আলোকায়ন সহ নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে সুরক্ষিত পর্যটন বলয় তৈরির কার্যক্রম শুরু হয় এবং যার নামকরণ করা হয় ‘লাল কাঁকড়া বীচ’।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজীব বলেন,” লাল কাঁকড়ার প্রজননে প্রতিবন্ধকতা রোধের পাশাপাশি সংরক্ষিত অঞ্চল গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিই। সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় পর্যটকদের উদ্দেশ্যে ৬ টি নির্দেশনা সম্বলিত একটি সাইনবোর্ড ও দেয়া হয় সেখানে।”
৬ টি নির্দেশনায় অই স্থানের কাঁকড়াকে বিরক্ত না করা, আগুন না জ্বালানো, শব্দ না করা, গাছের পাতা না ছেঁড়া, ময়লা না ফেলা ও সৈকতে বাইক না চালানোর জন্য পর্যটকদের অনুরোধ করা হয় বলে জানান ইউএনও।
এদিকে সম্প্রতি এই উদ্যোগের মাধ্যমে সৈকতে জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণের নামে পরিবেশ ধ্বংস ও বাণিজ্যিক কর্মযজ্ঞ চালানোর অভিযোগ তোলে স্থানীয় একটি মহল। ফলে সৈকত অংশে আলোকায়নের জন্য লাগানো বাতি সড়িয়ে নেয় উপজেলা প্রশাসন।
যদিও ইউএনওর দাবি কোন প্রকারের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ছাড়াই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, উখিয়া উপজেলাকে নতুনভাবে ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে এই উদ্যোগ কিন্তু জমি দখল চক্র সহ স্বার্থন্বেষীদের কৌশলে এই পদক্ষেপ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা তাদের।
পরিকল্পিত উখিয়া চাই এর আহবায়ক নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, ” লাল কাঁকড়া বীচ উখিয়াকে নতুনভাবে পরিচিত করবে কিন্তু অদৃশ্য ও স্বার্থন্বেষী মহল ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে এই উদ্যোগকে নস্যাৎ করার পঁয়তারায় লিপ্ত তথাকথিত পরিবেশবাদিরা।”
সরকারি প্রয়াস হয়েও হুমকির মুখে থাকা কাঁকড়া রক্ষার এই কার্যক্রমটি অব্যাহত রাখার দাবি স্থানীয়দের।