শিরোনাম ::
জার্মানিতে বাড়িতে বিস্ফোরণ, আগুন পুড়ে মৃত্যু ৩ টেকনাফে র‍্যাবের অভিযানে কোটি টাকার আইসসহ আটক-১ সংস্কারের অভাবে মরণ ফাঁদে পরিণত উখিয়ার রুমখাঁপালং-হাতিরঘোনা স্কুল সড়ক উখিয়ায় ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী চশমা মার্কার সমর্থনে প্রচারণা উখিয়ায় হ্যান্ডগ্রেনেড ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ চার রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রেফতার মেরিন ড্রাইভে রেন্ট বাইক দুর্ঘটনায় সদ্য বিবাহিত পর্যটকসহ নিহত ২ কবর দেওয়ার চারদিন পর বৃদ্ধকে জীবিত উদ্ধার তারুণ্যের বার্তা নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে প্রার্থী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সাংবাদিক রাসেল আজ থেকে মাঠে নামছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইসরায়েলকে গাজায় আগ্রাসনের ‘অজুহাত’ করে দিয়েছে হামাস
সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৭:৩৪ পূর্বাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

লাখ টাকায় ‘নাগরিকত্ব’ কিনতো রোহিঙ্গারা, গ্রেপ্তার ১০

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২২

মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে এসে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় পায় রোহিঙ্গারা। আশ্রয় পেলেও বাংলাদেশের নাগরিকত্বে নেই তাদের কোনো অধিকার।

তবে শরণার্থী শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্য অবৈধভাবে বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে পাড়ি জমাবেন বিদেশে। আর এজন্যই জালিয়াতির মাধ্যমে দালাল ধরে লাখ টাকা দিয়ে করিয়ে নিতে চাইছেন ‘জন্মসনদ ও এনআইডি’। যে কাজে জড়িত ছিল চট্টগ্রামের কয়েকজন দালাল এবং ইসির অস্থায়ী কর্মচারী ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের কয়েকজন।

মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) নগরের হালিশহর হাউজিং এস্টেট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে দুই রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তারের পরই এমন তথ্য জানতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) মোহাম্মদ আলী হোসেন। পরে তাদের তথ্যের ভিত্তিতে দুই রোহিঙ্গাসহ মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।

গ্রেপ্তাররা হলেন— দালাল চক্রের নুরুল আবছার ও শামসু রহমান ওরফে শামসু মাস্টার, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অস্থায়ী কর্মচারী (ডাটা এন্ট্রি অপারেটর) ইয়াসিন আরাফাত, নূর নবী, মিজানুর রহমান, ফরহাদুল ইসলাম ও ইমন দাশ এবং দুই রোহিঙ্গা কামাল হোসেন ও পারভীন আক্তার ও রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে গাড়ি করে নিয়ে আসা চালক মো. কামাল।

আজ বুধবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে নগরের মনসুরাবাদ নিজ কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নগরের হালিশহর হাউজিং এস্টেট উচ্চবিদ্যালয়ে এনআইডি করতে এসেছিলেন দুইজন রোহিঙ্গা। পরে তাদের গ্রেপ্তারের পর এনআইডি করে দেওয়া ইসির অস্থায়ী কর্মচারী ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের ৫ জনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা, জনৈক আবছার ও শামসু মাস্টার নামে দুই দালালের সংশ্লিষ্টতার কথা জানান। এসময় ওই দুই দালালকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

উপ-কমিশনার (পশ্চিম) মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, ‘শামসু মাস্টার কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের সংগ্রহ করে নুরুল আবছারকে সরবরাহ করে। পরে নুরুল আবছার বিভিন্ন মাধ্যমে ওই রোহিঙ্গাদের জন্মনিবন্ধন প্রস্তুত করে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এনআইডি কার্ড তৈরিতে চুক্তিবদ্ধ ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের ৫ অস্থায়ী কর্মচারীর মাধ্যমে কার্ড তৈরি করে। এই চক্রটি দীর্ঘদিন বিভিন্ন প্রকার জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের এনআইডিসহ বিভিন্ন প্রকার ডকুমেন্ট তৈরি করে বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল।’

‘আসামি শামসু মাস্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ছিলেন। রোহিঙ্গাদের এনআইডি কার্ড তৈরির কাজে সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তিনি চাকরিচ্যুত হন। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজার থানায় এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালযয়ে মামলা হয়। তাকে এনআইডি জালিয়াতি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে জামিনে বেরিয়ে আবার একই জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়েন। এ ঘটনায় নতুন করে মামলা করা হয়েছে। পুরো চক্রে জড়িতদের শনাক্তে গ্রেপ্তার আসামিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন সিএমপির উপ-কমিশনার (গোয়েন্দা-দক্ষিণ) মোহাম্মদ আলী হোসেন।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে এবং মোবাইল চেক করে বিভিন্ন মেসেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, যে কাগজপত্রগুলো তাদের বেশি প্রয়োজন হয়; তারমধ্যে ‘জন্মনিবন্ধন’ একটি।

উপ-কমিশনার (পশ্চিম) মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, ‘তাদের এ জন্মনিবন্ধন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনৈক ব্যক্তির মাধ্যমে সেখানে থেকে করা হয়। তবে ঢাকা থেকে এ এনআইডি করা হলেও ঠিকানা দেওয়া হয় চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলের। এছাড়া নির্বাচন কমিশন অফিসের আরও কয়েকজনের নম্বর এবং ব্যক্তিদের নাম আমরা জানতে পেরেছি। যারা সার্ভারের মাধ্যমে এনআইডির কাজটা শেষ করে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের নাম আমরা প্রকাশ করতে পারছি না।’

‘এনআইডির পুরো প্রকিয়াটি শেষ করার পর; এটি বেরিয়ে আসবে এবং একদম যথাযতভাবে (ভ্যালিড) একটি এনআইডি হবে। যা দিয়ে ওই ব্যক্তি বাংলাদেশের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। এ এনআইডির কাজের প্রসেস শেষ করতে ওই দুই দালাল রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দাবি করে’ — যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন অফিসে যাচাই-বাছাই করতে হবে। কারণ গ্রেপ্তার রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে যে ফরমগুলো পেয়েছি; সেই ফরমগুলো রোহিঙ্গা বা সাধারণ পাবলিক কারও কাছেই থাকার কথা নয়। ফরমগুলো নির্বাচন অফিসেই থাকার কথা।’

রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে কয়টি ফরম পেয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে ৬টি ফরম পেয়েছি। সবগুলো পূরণকৃত ফরম। এসব তাদের কাছে কিভাবে এলো সেটাও যাচাই-বাছাই করা হবে। এটা সত্য যে, ওই রোহিঙ্গারা এসব ফরম গ্রেপ্তার আবছারের মাধ্যমে পেয়েছে। তবে নির্বাচন অফিসের যেই কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আবছার পেয়েছে তাদের কিছু কিছু নাম পাওয়া যাচ্ছে। তাদের গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এছাড়া নির্বাচন অফিস তদন্ত করলে তারাও হয়তো জানতে পারবে; এ ফরম কিভাবে পাবলিক বা রোহিঙ্গাদের হাতে এসেছে।’

‘তবে ফরমের বিষয়ে আমরা প্রাথমিকভাবে যে তদন্ত করেছি; তাতে জানতে পেরেছি চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে নয়। এটি অন্য কোনো অঞ্চল থেকে এসেছে। তদন্তের মাধ্যমে সেটিও বেরিয়ে আসবে।’

চট্টগ্রামের আরও একজনের মাধ্যমে এ ফরম সাধারণ পাবলিকের হাতে আসে জানিয়ে মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, ‘সাদ্দাম নামে একজন জনৈক ব্যক্তির নাম জানা গেছে। যার বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায়। তার মাধ্যমেও এ ফরম সাধারণ মানুষের কাছে আসতে পারে। তবে শুধু সাদ্দাম নন; আরও কয়েকজন আছে। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। আর যদি নির্বাচন অফিসের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী জড়িত থাকে; তাহলে নির্বাচন অফিসকে বিষয়টি জানানো হবে। তারা সেটা তদন্ত করে বের করবে; কারা এ এসবের সঙ্গে জড়িত।’

‘রোহিঙ্গা ও দালালদের গ্রেপ্তারের পর ফরমের বিষয়ে পাহাড়তলী নির্বাচন অফিসের আঞ্চলিক কর্মকর্তাকেও জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। তবে এটি তাদের অফিসের নয় বলে জানিয়েছেন তিনি। তাই তদন্তের পরই জানা যাবে ফরমটি কোথা থেকে এসেছে’ — যোগ করেন তিনি।


আরো খবর: