শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৪ পূর্বাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

পুলিশের সাড়াশি অভিযানে আতংকিত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: বৃহস্পতিবার, ২৫ আগস্ট, ২০২২

আবদুল্লাহ আল আজিজ:

মিয়ানমারে সৃষ্টি সহিংসতায় গত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ব্যাপকভাবে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার ৫ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ।

সংকট কালে কয়েক দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিলেও নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়ায় স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গারা ফেরত যায়নি। ফলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে পডেছে।

কিন্তু পাঁচ বছর পার হলেও তাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার কোনো লক্ষন দেখা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে রোহিঙ্গা শিবিরে খুনোখুনি, অপহরণ, ধর্ষণ, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, মানবপাচারসহ একাধিক অপরাধের সঙ্গে জড়িত কক্সবাজারের উখিয়ায় বসবাসরত রোহিঙ্গা অপরাধীরা।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ অপরাধ কর্মকাণ্ডের জড়িত রোহিঙ্গাদের দমনে সব সময় কঠোর অবস্থান মধ্যে ছিলো, ফলে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পে তাদের রাজত্ব কায়েমে ব্যর্থ হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মোঃ হাসানুজ্জামান জানান, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও হোস্ট কমিউনিটিতে যেসব রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী অশান্তি সৃষ্টি করার পায়তারা করেছে, তাদেরকে সাথে সাথে আইনে আওতায় আনা হয়েছে। মাদক পাচারসহ অন্যান্য অপরাধে জড়িত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীর কোন ধরনের ছাড় দেয়নি উখিয়া থানা পুলিশ।
পুলিশ সুপার মোঃ হাসানুজ্জামান আরো জানান, স্থানীয়দের জানমাল রক্ষার পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে উখিয়া থানা পুলিশ প্রশাসন। তিনি আরো জানান, ইতিমধ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২২ সালের ১১ আগস্ট পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন অপরাধে মোট ১৮৯ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যেখানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪শ জন আসামি। বিগত ৫ বছরে অস্ত্র উদ্ধার মামলা ৯২ টি, হত্যা মামলা ৭৬ টি, ডাকাতির প্রস্তুতি মামলা হয়েছে ২১ টি। এছাড়া বিভিন্ন অভিযানে পুলিশ বিপুল পরিমানে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। যার মধ্যে দেশীয় পিস্তল ১১, বিদেশী পিস্তল ৩টি, এলজি ২৫, একনলা বন্দুক ২৮টি, পাইপ গান ৭টি, ওয়ান শুটার গান ২৫টি ,ম্যাগাজিন ৭টি, কুড়াল ১টি, চাপাতি ২৮টি ,রামদা ৪৭টি , কিরিচ ১৩টি , চুরি ২১টি, কার্তুজ ১১৩টি, গুলি ৫৭১, রাইফেল ১টি উদ্ধার করা হয়েছে।

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশ ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে উখিয়া থানা পুলিশ কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে মাদক, অস্ত্র উদ্ধার ও অপরাধী আটক কার্যক্রম আরো জোরদার করে স্থানীয়দের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দৃঢ়ভাবে কাজ করে যাবে উখিয়া থানা পুলিশ।

উখিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সবচেয়ে উৎকণ্ঠার বিষয় রোহিঙ্গারা নানা অবৈধ কারবারের সঙ্গে জড়িয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। তারা জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট নিচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে বিয়ে করে বাংলাদেশিদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলছে। এই মুহুর্তে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের কোন বিকল্প নেই।
তিনি আরো বলেন ক্যাম্প প্রশাসন, এপিবিএন ক্যাম্পের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করলে, সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত তা আর সন্তোষজনক থাকে না। তাই এই মুহুর্তে উখিয়া থানা পুলিশের জনবল বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্যাম্প অভ্যন্তরে ধারাবাহিক থানা পুলিশের অভিযান অব্যাহত রাখা জরুরি। পাশাপাশি সরকারি গোয়েন্দা সংস্থারও জনবলও বৃদ্ধি করতে হবে এবং গোয়েন্দা সংস্থার সংস্থা তৎপরতা জোরদার করতে হবে। উখিয়া থানার বর্তমান অফিসার ইনচার্জ শেখ মোহাম্মদ আলী কতৃক ক্যাম্পের ভিতরে পরিচালিত সকল অভিযানেই সফলতা দেখাতে সক্ষম হয়েছে, সেই কারনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জেলা ও থানা পুলিশের তৎপরতা আরো বৃদ্ধি ও সাড়াশি অভিযান জোরালো করার দাবী জোরদার হচ্ছে।

উখিয়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রতন কান্তি দে বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন দীর্ঘ হলে সামাজিকসহ নানাভাবে নিরাপত্তার ঝুঁকি থেকেই যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিন যত যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা ততই বাড়ছে। এর মধ্যে ক্যাম্পে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিসহ (আরসা) অন্তত সাত-আটটি গ্রুপ সক্রিয়। এতে মিয়ানমারের ইন্ধনও রয়েছে। মিয়ানমার থেকে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সহযোগিতাও করা হচ্ছে।


আরো খবর: