শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৯ পূর্বাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

রোহিঙ্গা ক্যাম্প সহ কক্সবাজারে বাড়ছে এইডস রোগী

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: সোমবার, ১ আগস্ট, ২০২২

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এইচআইভি (এইডস) রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশাপাশি এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে স্থানীয়রাও। গত এক বছরে ১১৫ জন রোহিঙ্গা ও ১০জন বাংলাদেশীদের মধ্যে এইডস রোগী সমাপ্ত করা গেছে।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত ১১৫ জন রোহিঙ্গা ও ১০ জন এইডস রোগী। এছাড়াও গত ২০১৫ সাল থেকে এই পর্যন্ত এইডস রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭১০ জন। তন্মধ্যে রোহিঙ্গা আক্রান্ত ৬১২ আর সব মিলিয়ে মারা গেছে ১১৮ জন।

এইচআইভি-এইডস নিয়ে কাজ করা এনজিও ও কক্সবাজার সদর হাসপাতালের এইচআইভি ট্রিটমেন্ট সেন্টার সূত্রে পাওয়া গেছে ভয়াবহ চিত্র।
তথ্য মতে, কক্সবাজারে ভয়াবহভাবে বিস্তার ঘটছে মরণব্যাধি এইডসের। বিশেষ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে এইডস রোগের বিস্তার ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও রয়েছে এইডস ঝুঁকিতে। পেশাদার-অপেশাদার যৌনকর্মী ও মাদকাসক্তদের অবাধ যৌনাচারের কারণে বর্তমানে জেলায় এইডস আক্রান্তের সংখ্যা ৭১০ জন। সঠিক তথ্যানুসন্ধান করলে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ও এইচআইভি ফোকাল পারসন ডাঃ আশিকুর রহমান কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ২০১৫ সাল থেকেই কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এইচআইভি বা এইডস স্ক্যানিংয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। যেখানে এইডস নির্ণয়, কাউন্সিলিং ও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের বাইরে যারা আছেন, তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসার আওতায় আনার বিষয়ে আমরা কাজ করছি। গত ৬ জুলাই পর্যন্ত ৭১০ জনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। হিজড়ার শরীরেও এইচআইভির জীবাণু পাওয়া গেছে। এ রোগে আক্রান্ত ৬১ রোহিঙ্গাসহ ১১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
তবে মারা যাওয়া ছাড়া এইডস আক্রান্ত জীবিতরা কে, কোথায়, কোন অবস্থায় আছে তার কোনো হিসাব সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে নেই।

ডাঃ আশিকুর রহমান কক্সবাজার ভয়েসকে আরও বলেন, আমাদের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। ভিন্ন রোগ নিয়ে আসছে। চিকিৎসা পরীক্ষায় ধরা পড়ছে এইচআইভি। এইডস/এইচআইভি প্রতিরোধে জেলা সদর হাসপাতালে নানা উদ্যোগ ছাড়াও মাঠপর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে উখিয়া ও টেকনাফে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার ১২টি টিম কাজ করছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, কক্সবাজার এইডসের জন্য এখন বিপদজনক এলাকা। রোহিঙ্গারা যে হারে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সে তুলনায় শনাক্ত করা হচ্ছে কমই। প্রকৃত অর্থে আক্রান্তের সংখ্যা আরো অনেক বেশি।

কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউসে ৫ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা তরুণীর যাতায়াত। তারা অনিরাপদভাবেই দেশি-বিদেশি পর্যটক ও স্থানীয়দের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করছে। শহরের লালদিঘী পাড় কেন্দ্রিক কিছু আবাসিক হোটেলে পতিত-খদ্দেরের অবাধ যাতায়াত। এতে কক্সবাজারে এই রোগ ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। রোহিঙ্গা যৌনকর্মী ছাড়াও পর্যটন শহর হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে টাকা আয়ের উদ্দেশ্যে যৌনকর্মীদের ব্যাপকহারে কক্সবাজার আগমনও এইডস বিস্তারের আরেকটি অন্যতম কারণ। ভাসমান যৌনকর্মী ছাড়াও প্রবাসী অনেকেই এইডস আক্রান্ত হয়ে দেশে ফিরছেন। যাদের অনেকেই বিদেশে অবস্থানের সময় সেখানকার যৌনকর্মীদের সঙ্গে অবাধে মেলামেশা করে এসব রোগ দেশে বহন করে এনেছে। এইচআইভি সংক্রামক রোগ হওয়ায় এসব ব্যক্তির কারণে তাদের স্ত্রীদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

কক্সবাজারের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা: মো: মাহবুবুর রহমান কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, এইচআইভির বিস্তারের নেপথ্যে রয়েছে অসচেতনতা। রয়েছে সামাজিক নানা কুসংস্কার। এসব মিলে পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে। অন্য সব রক্ষণশীল সমাজের মতোই কারো দেহে এইচআইভি পাওয়া গেলে তাকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে।
তাদের ভয়, ওই ব্যক্তির দেহ থেকে এইচআইভি ছড়াতে পারে। আবার যাদের দেহে এই ভাইরাস পাওয়া গেছে তারা চিকিৎসা নিতে গড়িমসি করে।

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, রোহিঙ্গারা যেহেতে ককক্সবাজার এলাকা জুড়ে রয়েছে, সেহেতু তাদের সাথে স্থানীয়দের মেলামেশা হচ্ছে। এমনকি যৌন সম্পর্কেও জড়াচ্ছে অনেকে। সেখান থেকে মুলত এইচআইভি ভাইরাসটা ছড়াচ্ছে। এছাড়াও কক্সবাজার হোটেল মোটেল জোন এলাকায় শত শত রোহিঙ্গা নারীদের অবাধ বিচরণ। সেখানেও যৌনকর্মে লিপ্ত হচ্ছে স্থানীয়সহ রোহিঙ্গারা। যদি সচেতনতা অবলম্বন ও যৌনকর্ম থেকে বিরত থাকা যায় তবে এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে বলে আমি মনে করি।

এইচআইভি সংক্রামক রোগ হওয়ায় এসব ব্যক্তির কারণে তাদের স্ত্রীদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে বলে জানান বিশেষজ্ঞগণ।


আরো খবর: