বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৫ পূর্বাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

পদ্মা সেতু—চট্টগ্রামের পশুর হাটকে ঘিরে নতুন অঙ্ক ‘দক্ষিণের’ খামারিদের

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: সোমবার, ২৭ জুন, ২০২২

কোরবানির ঈদের মাত্র দুই সপ্তাহ আগে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে খুলে গেছে দখিনা দুয়ার। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এ সেতু হয়ে এবার কোরবানির পশু সরাসরি ঢুকে যাবে চট্টগ্রামের পশুর হাটে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন—এবার পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রামের কোরবানির পশুর বাজার ধরতে মুখিয়ে আছেন খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর খামারিরা।

অবস্থাটা এখন এমন—গত বছর কোরবানির ঈদে ফেরি পারাপারের ঝামেলা এড়াতে যারা চট্টগ্রামের পশুর হাটে আসতে চাননি, তারাও এবার পদ্মা সেতু হয়ে চট্টগ্রামে আসার ব্যাপারে নিজেদের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন—গেল সাত বছরে চট্টগ্রামে কোরবানিদাতার সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। সেই অনুসারে স্থানীয় উৎপাদনও বেড়েছে। তবু প্রতি বছর কোরবানির ঈদের আগমুহূর্তে বাজারে টান পড়ায় চট্টগ্রাম বিভাগের বাইরে থেকে বিপুল পরিমাণে কোরবানির পশু ঢুকত চট্টগ্রামের বাজারে।

২০২০ সালে শেষমুহূর্তে চট্টগ্রামের কোরবানির পশুর বাজারে তীব্র সংকট সৃষ্টি হলে পাবনা, সিরাজগঞ্জ থেকে প্রায় ৪০ হাজার গরু এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়েছিল। সেবার যমুনা সেতুর ভরসায় খুব অল্প সময়ে চাহিদা মেটানো গিয়েছিল।

একইভাবে খুলনা, বরিশাল ও ঢাকার ২১ জেলার খামারিদের আশা জাগাচ্ছে দক্ষিণের নতুন উদ্বোধন হওয়া সেতু পদ্মা। কেননা আগে ফেরি দিয়ে পদ্মায় পণ্যবাহী বা মালবাহী ট্রাক পারাপার করতে অনেক সময় তিন থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত লেগে যেত। সেইসঙ্গে বিপদের ঝুঁকিতো ছিলই। সেই সেতু এখন পার হওয়া যাচ্ছে খুব কম সময়েই।

এদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তালিকা অনুযায়ী, ২০১৫ সালে চট্টগ্রামে কোরবানির পশু জবাই হয়েছিল ৪ লাখ ৯২ হাজার ২৫০টি। ওই বছর স্থানীয় উৎপাদন ছিল ৩ লাখ ২০ হাজার। অর্থাৎ চট্টগ্রামে সে বছর খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, রাজশাহী থেকে প্রায় ১ লাখ ৭২ হাজার ২৫০টি কোরবানির পশু এনে ঘাটতি পূরণ করা হয়।

একইভাবে ২০১৬ সালে চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর ঘাটতির সংখ্যা ১ লাখ ৮০ হাজার ৭৪৩টি, ২০১৭ সালে ঘাটতি ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬৮টি, ২০১৮ সালে ঘাটতি ৭৩ হাজার ৩৬৬টি, ২০১৯ সালে ঘাটতি ১ লাখ ২০ হাজার ৫৭০টি এবং ২০২০ সালে ঘাটতি ছিল ৪৮ হাজার ৫৩৪টি। তবে করোনার ডামাডোলে মানুষের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ায় ২০২১ সালে আশানুরূপ কোরবানি হয়নি চট্টগ্রামে। শুধুমাত্র সেবার চাহিদার তুলনায় প্রায় ১৩ হাজার ৮৭৯টি কোরবানির পশু বেশি ছিল।

চট্টগ্রাম জেলার বছরওয়ারী জবাই ও স্থানীয় যোগানের তথ্যে দেখা গেছে, ২০২১ সালে চট্টগ্রামে কোরবানির পশু জবাই হয়েছে ৭ লাখ ৪২ হাজার ৪৫৫টি। সেবার কোরবানির পশুর স্থানীয় যোগান ছিল ৭ লাখ ৫৬ হাজার ৩৩৪টি। তবে ২০২২ সালে সম্ভাব্য কোরবানির পশুর চাহিদা দেখানো হয়েছে ৮ লাখ ২১ হাজার এবং স্থানীয় উৎপাদন ৭ লাখ ৯১ হাজার ৫০১টি। অর্থাৎ প্রায় ৩০ হাজার কোরবানির পশুর ঘাটতি আছে এবারের বাজারে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. দেলোয়ার হোসেন মহানগরনিউজকে বলেন, যেহেতু পদ্মা সেতু হয়েছে, এবার ওদিক (দক্ষিণাঞ্চল) থেকে কোরবানির পশু চট্টগ্রামের বাজারে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। চট্টগ্রামে প্রায় ৩০ হাজার পশুর সংকট রয়েছে। শেষমুহূর্তে পশুর চাহিদা আরও বাড়তে পারে। তবে পরিস্থিতি সামলে নিতে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পশু আনার কথা ভাবছি আমরা।

এ ব্যাপারে খুলনা বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দফতরের পরিচালক ডা. শেখ সুখেন্দু শেখর গায়েন মহানগরনিউজকে বলেন, খুলনা বিভাগে প্রায় ১৪ লাখ কোরবানির পশু প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু এখানে চাহিদা আছে ১০ লাখের মতো। বাকি চার লাখ কোরবানির পশু চলে যাবে ঢাকা-চট্টগ্রামের বাজারে। কেননা এ দুই জায়গাতে কোরবানির তুলনায় স্থানীয় উৎপাদন কম হয়।

চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সেতু ভূষণ দাশ বলেন, চট্টগ্রামে বড় ও একক কোরবানি দেওয়ার রীতি আছে। যে কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চলের খামারিরা কোরবানি যোগ্য পশু নিয়ে চট্টগ্রামে আসতে পছন্দ করেন। এবার পদ্মা সেতুর কারণে বাড়তি সুবিধা পাবেন ২১ জেলার খামারিরা।


আরো খবর: