রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৬:৩০ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

ঈদের কেনাকাটা গভীর রাতেও জমজমাট, টেকনাফে নির্ঘুম শপিংমল বিপণিবিতান

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: সোমবার, ২ মে, ২০২২

হেলাল উদ্দিন টেকনাফ::

রবিবার রাত ১২টা। অথচ টেকনাফ পৌর শহরে মনে হলো যেন এইমাত্র সন্ধ্যা নেমেছে। আলোকসজ্জায় ঝলমল করছে শপিং মল ও বিপণি বিতানগুলো। রাস্তায় যানবাহন চলাচলও স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক। নিউ গণি মার্কেট-উপরের বাজার- আলো শপিং মহলের দোকানীতে রকমারি পণ্যে সাজিয়ে বসেছেন, এমনকি লামার বাজারের হকার গুলোতেও। এছাড়াও ক্রেতা আকৃষ্ট করতে দিচ্ছেন মূল্যছাড়ের নানা অফার- ‘দেইখ্যা লন, বাইছ্যা লন, এক দাম এক রেট এমন স্লোগানে মুখরিত। আগ্রহভরে অনেক ক্রেতাই দেখছেন, পছন্দ হলে কিনেও নিচ্ছেন।

লামার বাজার সড়কের পাশ দিয়ে হাঁটতেই এক দোকানী ডেকে বললেন, ‘আপা শোরুমের পাঞ্জাবি, ইন্ডিয়ান ব্র্যান্ডেরও পাঞ্জাবি আছে। দেখেন আপা, পছন্দ হলে নিয়েন। দেশীয় ব্র্যান্ডের মধ্যে ৫শ’ টাকা আর ইন্ডিয়ানগুলোর দাম রাখছি মাত্র ৭-৮শ’ টাকা।’ ব্র্যান্ডের পণ্য এতো কম দামে দিচ্ছেন কী করে? জবাবে জানালো, ‘ঈদ উপলক্ষে সংগ্রহ করা সব ধরনের পণ্য বিক্রিতে আমাদের একটা টার্গেট থাকে। তাই বাছাই করা কিছু পণ্য নিয়ে আলাদা অফার মূল্যে বিক্রি করায় বিক্রিও বেশ ভালো হচ্ছে।

নিউ গণি মার্কেট থেকে তোলা ছবি।
ঈদের বাকি আর মাত্র এক রাত। তাই অনেকটা দিনের মতোই সরগরম টেকনাফ পৌর শহরের ঈদবাজার। কারণ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অনেকে অফিসের কাজে ব্যস্ত আর কেউবা নিজ নিজ কাজ সেড়ে ইফতার শেষ করে অনেকেই সন্ধ্যার পর শুরু করছেন কেনাকাটা, যা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। বাড়তি রোজগারের আশায় অধিকাংশ মার্কেট, শপিংমল ও নামি-দামি ব্রান্ডের শো-রুম এখন খোলা থাকছে মধ্যরাত পর্যন্ত। বেশিরভাগ দোকানেই ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। কেউ পোশাক কিনছেন, কেউ জুতা-কসমেটিকস, কেউবা গহনা। মনে হলো- গ্রীস্মের তপ্ত রোদ আর যানজটের ঝামেলা এড়াতে অনেক ক্রেতাই কেনাকাটার জন্য মধ্যরাতকে বেছে নিয়েছেন। আর ক্রেতাসমাগম ভালো থাকায় মার্কেট ও শপিং মহল খোলা রাখছেন ব্যবসায়ীরা।

উপরের বাজারের বার্মিজ মার্কেট ও আশপাশে অবস্থিত নারীদের পোশাকের মার্কেটের এক বিক্রেতা বললেন, ‘এইসব মার্কেটে সারা বছরই কমবেশি বেচাকেনা হয়। তবে গেলো দু’বছর মহামারি করোনার কারণে আমরা খুব ক্ষতিগ্রস্ত। তবে, এই বছরে বিক্রি ভালো যাচ্ছে। মধ্যরাত পর্যন্ত দোকান খোলা রেখে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি।’
দিনের বেলা নারী ক্রেতাদের ভিড় বেশি থাকলেও রাতে তরুণ-তরুণী ও পুরুষেরা বেশি ভিড় করছেন। বেচাকেনায়ও দম ফেলার সময় নেই বিক্রেতাদের।

মদিনা সিটি মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বললেন, ‘ক্রেতাসমাগম আছে বলেই খোলা রেখেছি। তবে অনেকে এরই মধ্যে কেনাকাটা সেড়ে ফেলেছেন। এ পর্যায়ে যারা শহরের আশপাশের ঈদ করছেন তাদেরই ভিড় বেশি।’ তার দোকানে নারী-পুরুষ ও বাচ্চাদের সব বয়সীদের তৈরি পোশাক রয়েছে। গরমের কারণে এবার সুতি কাপড়ের চাহিদা বেশি। রমজানের কারণে ইফতারের পরই বাড়ে ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড়। বিক্রিও ভালো বলে জানান তিনি।

ঈদে পছন্দের পোশাক কিনতে মার্কেট চষে বেড়াচ্ছেন উৎসবপ্রিয় ক্রেতারা। আর ক্রেতা আকৃষ্ট করতে পোশাকের গুণকীর্তনে ব্যস্ততা বেড়েছে বিক্রয়কর্মীদেরও। দুই বান্ধবীকে নিয়ে উপরের বাজার মার্কেটে শপিং করছেন টেকনাফ কলেজের শিক্ষার্থী ইজমা। জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন, ‘রাতে আসলে গরম কম থাকে, ভিড়ও কিছুটা কম। একটু স্বস্তিতে কেনাকাটা করা যায়। সময়ও কম লাগে। দিনের তুলনায় রাতে বিক্রেতারা পণ্যের দাম কিছুটা কমও রাখেন। আর ঈদ উপলক্ষে শহরজুড়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে, তাই রাতে কেনাকাটা করতে আসা। তাছাড়া একসঙ্গে শপিং করার মজাই আলাদা।’

সাবরাং এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মোঃ সেলিম জানান, ‘রোজা ও প্রচণ্ড গরমের কারণে দিনে কেনাকাটা করা কঠিন। এছাড়া দিনের বেলায় অসহনীয় যানজট এড়াতেই এ সময়ে মার্কেটে আসা। রাতেও কোনো দোকান ফাঁকা নেই, তবুও দেখেশুনে ঠাণ্ডা মাথায় শপিং করতে পারছি।’
দোকানিরা জানান, ‘এবার রমজানের প্রথম সপ্তাহ শেষে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ২টা পর্যন্ত মার্কেট খোলা রাখা হচ্ছে। ক্রেতাও আসছেন প্রচুর। পোশাকের পাশাপাশি এপর্যায়ে ম্যাচিং করা জুতা, গহনা, প্রসাধনসামগ্রী বেশি বেচাকেনা হচ্ছে। ’

রাতে শহরের বিভিন্ন মার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিবারের মতো এবারও ক্রেতা আকৃষ্ট করতে শপিংমল ও বিপণিবিতানে করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা। কিছু কিছু মার্কেটের সাজসজ্জায় গ্রামীণ আবহ তুলে ধরা হয়েছে। এবার ঈদ ফ্যাশনে ছেলেরা বেশি কিনছেন পাঞ্জাবি, মেয়েরা থ্রিপিস, শাড়ি। মেয়ে শিশুদের জন্য পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ফ্রক, পার্টি ফ্রক, ফ্যাশন টপস এবং ছেলে শিশুদের জন্য শার্ট, ফতুয়া, পাঞ্জাবি।

করোনা মহামারির কারণে গত দু’বছর দফায় দফায় মার্কেটগুলো বন্ধ ছিলো। তাই এবার ভিন্ন চিত্র। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গভীর রাত পর্যন্ত বেচাকেনার এমন আয়োজন বলছেন বিক্রেতারা। ক্রেতা-দর্শনার্থীর নিরাপত্তা এবং রাতের বেচাকেনা নির্বিঘ্ন করতে রাতে মার্কেট কেন্দ্রিক এলাকাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করেছে উপজেলা প্রশাসন ও টেকনাফ মডেল থানার পুলিশ।


আরো খবর: