শফিউল্লাহ শফি::
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে পালানোর হিড়িক পড়েছে। প্রতিদিন কয়েক শ’ করে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ক্যাম্প থেকে পালিয়ে জেলা শহরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাড়ি জমাচ্ছে। এর কিছু সংখ্যক আটক হলেও বেশির ভাগ গন্তব্যে চলে যাচ্ছে। গত ১৫ দিনে ক্যাম্প থেকে পালানো প্রায় সাত শতাধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে আটক করে পুনরায় ক্যাম্পে সোপর্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন ক্যাম্প সংশ্লিষ্টসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। তাদের মতে, এতে আইনশৃঙ্খলার অবনতিসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্র জানায়, ৪ এপ্রিল উখিয়া ক্যাম্প থেকে পালানোর সময় ১৩৬ জনকে আটক করে পুরিশ। পরদিন টেকনাফ থেকে ৫০ জন, উখিয়া থেকে ৮০ জনকে আটক করা হয়। ৬ এপ্রিল উখিয়া বাজারের আশপাশে অভিযান চালিয়ে ১৩৮ জনকে আটক করে পুলিশ। এ ছাড়া ২৫ মার্চ টেকনাফের বাহারছড়া উপকূলের একটি ট্রলার থেকে নারী-শিশুসহ ৫৪ জনকে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া মার্চ মাসের শেষের দিকে নৌ-পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় ১৪৫ জন রোহিঙ্গা মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপ থেকে আটক হয়। পরে তাদের স্ব-স্ব ক্যাম্পে পাঠানো হয়।
উখিয়ার রাজাপালং ইউপির চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, ক্যাম্পে বহু চেকপোস্ট আছে। রোহিঙ্গারা কিভাবে ক্যাম্প থেকে বের হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। পাশাপাশি অভিযান আরও জোরদার করলে রোহিঙ্গাদের মনে ভীতি সৃষ্টি হবে। এতে তারা আর ক্যাম্পের বাইরে যাওয়ার সাহস পাবে না। তিনি বলেন, বর্তমানে বেশ কিছু রোহিঙ্গা অপরাধীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। দ্রুত ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গা পালানো বন্ধ না করা গেলে কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অপরাধ বাড়বে। কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে এখন বড় বিপদে পড়েছেন স্থানীয়রা। ক্যাম্প থেকে বিভিন্ন অজুহাতে বের হয়ে রোহিঙ্গারা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ক্যাম্প ছেড়ে পালানোর পর তারা টেকনাফ-উখিয়াসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিক হিসাবে কাজ করছে। এতে স্থানীয়রা কর্ম হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসাবে খুন, অপহরণ, মাদক পাচারসহ নানা অপরাধে জড়াচ্ছে তারা।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আহমেদ সনজুর মোরশেদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে রোহিঙ্গারা নানা কৌশলে ক্যাম্প থেকে বের হচ্ছে। এমন অভিযোগ পেয়ে গত কয়েক সপ্তাহে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে কয়েক শ’ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে আটক করে আইনি প্রক্রিয়া শেষে পুনরায় ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে। ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের পালানোর বিষয়ে ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) শিহাব কায়সার খান জানান, আশ্রয় শিবিরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বসবাস। ক্যাম্পের বিশাল এরিয়া কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা। রোহিঙ্গারা কাঁটাতারের নিচ দিয়ে বাইরে চলে যায়। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি, তারা যেন ক্যাম্পের বাইরে যেতে না পারে।
এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের অতিরিক্ত কমিশনার সামছুদ দৌজা নয়ন জানান, রোহিঙ্গাদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। তার পরও তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্যাম্পের বাইরে যাচ্ছে।