সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫, ০১:৫৩ পূর্বাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

নন্দিতার রহস্যময় মৃত্যু! – DesheBideshe

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: রবিবার, ৯ মার্চ, ২০২৫


সাস্কাটুন (Saskatoon)। কানাডার সাসকাচেওয়ান (Saskatchewan) প্রদেশের বৃহত্তম শহর। শহরটি এর সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং শিক্ষার জন্য বিখ্যাত। অভিবাসীদের জন্যও অত্যন্ত উপযুক্ত, বিশেষত যারা নতুন কর্মসংস্থান এবং উন্নত শিক্ষার সন্ধানে কানাডায় আসেন।

১৫ অক্টোবর ২০২৪। সাস্কাটুনের আকাশে তখন গোধূলির ছায়া। শহরের কোলাহল একটু থিতিয়ে এসেছে, সন্ধ্যার বাতাসে এক ধরনের বিষন্নতা মিশে ছিলো সেদিন। কিন্তু ‘হেরিটেজ ইন হোটেল অ্যান্ড কনভেনশন সেন্টার’-এর একটি কোণে তখন এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেছে। নন্দিতা নামের এক বাংলাদেশি মহিলা হোটেলের ছয়তলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছেন।

নন্দিতা ভট্টাচার্য মুনমুন, এক প্রাণবন্ত, শিক্ষিত, উচ্চাকাঙ্ক্ষী নারী। শ্রীমঙ্গলের পূর্বাশা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা শহরের প্রাইম ব্যাংক শাখার একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। কিন্তু জীবন তাঁকে নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছিল। ২০২২ সালের জুনে স্বামী অনুপ ভট্টাচার্য ও দুই সন্তানকে নিয়ে কানাডায় পাড়ি জমান তিনি।

সাস্কাটুনে আসার পর স্বপ্নের জীবন শুরু হয়েছিল। হেরিটেজ ইন হোটেল অ্যান্ড কনভেনশন সেন্টারে চাকরি নিয়েছিলেন নন্দিতা। কিন্তু কে জানত, এই চাকরিই তাঁর জীবনের শেষ অধ্যায় হয়ে উঠবে?

১৫ অক্টোবরের সকাল। প্রতিদিনের মতো নন্দিতা প্রস্তুত হয়ে স্বামীর সঙ্গে গাড়িতে বসেন। অনুপ তাঁকে হোটেলের সামনে নামিয়ে দিলেন, তারপর অফিসের দিকে রওনা দিলেন। হয়তো সেদিন তাঁদের মধ্যে ছোটখাট কথোপকথন হয়েছিল- “বিকেলে আসবো নিয়ে যেতে।” নন্দিতা হাসিমুখে মাথা নাড়লেন। কে জানত, এটিই হবে তাঁদের শেষ দেখা।

পুলিশ জানায়, নন্দিতা ছয়তলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে গেছেন। কিন্তু কেউ কিছু দেখেনি। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, তিনি শুধুমাত্র স্টোররুমের দিকে যাচ্ছেন, কিন্তু তারপর? আর কোনো ফুটেজ নেই! প্রশ্ন ওঠে- ছাদে ওঠার অনুমতি ছিল কেবলমাত্র হোটেলের রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের কাছে, তাহলে নন্দিতা কীভাবে সেখানে গেলেন? আইন অনুযায়ী, সিসিটিভি নেটওয়ার্ক পুরো হোটেলে বিস্তৃত থাকার কথা। কিন্তু এ হোটেলে তা ছিলো না। নানান প্রশ্ন ওঠে এ মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে। নানান তদন্ত শেষে দুই সপ্তাহ পর সাসকাটুন পুলিশ জানায়, নন্দিতা ছয়তলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছেন।

তদন্ত চলমান থাকলেও, অনেকেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এই ঘটনার বিষয়ে আরও স্বচ্ছ ও গভীর তদন্ত পরিচালনার আহ্বান জানান। নন্দিতার পরিবার, বন্ধু-বান্ধব এবং উদ্বিগ্ন কমিউনিটির সদস্যরা সত্য জানতে চাইছেন। স্পষ্ট ব্যাখ্যার অভাব, হারিয়ে যাওয়া ফুটেজ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা কেবল সন্দেহ আরও গভীর করেছে যে, তার মৃত্যুর পেছনে হয়তো আরও বড় কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে।

অনুপ যখন বাড়ি ফিরলেন, দুই সন্তান তখন অপেক্ষায় ছিল। “মা কোথায়?” ছোট্ট কণ্ঠস্বরগুলো যেন তার হৃদয় চূর্ণবিচূর্ণ করে দিল। কীভাবে বলবেন যে, মা আর কখনো ফিরবে না!



আরো খবর: