দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ ফের পিছিয়েছে। এবারও পুলিশ প্রটেকশনের অভাবে তাঁকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে চট্টগ্রামে আনা যায়নি। (বৃহস্পতিবার) কক্সবাজার রেজিস্ট্রি অফিসের দুজনের সাক্ষ্য দেওয়ার দিন ধার্য ছিল।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে দুদকের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘ব্যাংকে থাকা আবদুর রহমান বদির অবৈধভাবে অর্জিত টাকার বিষয়ে কক্সবাজার সদর রেজিস্ট্রি অফিসের দুজনের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল আজ। সাক্ষীরাও এসেছিলেন। তবে আসামি বদিকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির না করায় সাক্ষ্যগ্রহণ সম্ভব হয়নি।’
আবদুর রহমান বদিকে চট্টগ্রাম পাঠাতে না পারা প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতকে অবহিত করে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ-আল-মামুন।
চিঠিতে বলা হয়, ‘বদিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করতে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে চাহিদা পাঠিয়ে পুলিশ প্রটেকশনের দল পাওয়া যায়নি। পরবর্তী ধার্য দিন কারা কর্তৃপক্ষকে জানাতে আদালতকে অনুরোধ করা হয়।’
দুদক সূত্র জানায়, ৪৩ লাখ ৪৩ হাজার ৯৯৪ টাকার তথ্য গোপন এবং ৬৬ লাখ ৭০ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালে আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলাটি করে দুদক। পরের বছর তদন্ত শেষে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। মামলার সময় আবদুর রহমান বদি টেকনাফ পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র ছিলেন। পরে তিনি উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে এলে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত থাকে। এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে দীর্ঘদিন পর ২০১৭ সালে মামলাটি সচল হয়।
২০২০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শুরু হয়। বিচারের আদেশের বিরুদ্ধে বদি পরে হাইকোর্টে যান। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে হাইকোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে দেন। পরে একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। সবশেষ গত ২৮ অক্টোবর এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ইসলামী ব্যাংকের টেকনাফ শাখার সাবেক দুই কর্মকর্তা।
এদিকে আদালত সূত্র জানিয়েছে, গত ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক কবির উদ্দীন প্রামাণিককে ঢাকা বিশেষ জজ আদালত-৯-এ বদলি করা হয়। গত ৩ ফেব্রুয়ারি তিনি চট্টগ্রামের কর্মস্থল ছাড়েন। বর্তমানে আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারকের দায়িত্বে আছেন চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. সাইফুল ইসলাম।
আবদুর রহমান বদির আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. রফিক সিভয়েস২৪’কে বলেন, ঢাকায় কোনো মামলা না থাকা সত্ত্বেও বদিকে সেখানে স্থানান্তর করা হয়েছে শুধুমাত্র হয়রানির জন্য। এর আগেও একবার একই কারণে তাকে চট্টগ্রামে আনা হয়নি। এখন কোর্টও নেই, বদিও নেই। সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী তারিখ এখনো দেওয়া হয়নি।
এর আগে, গত ১২ জানুয়ারি এই মামলায় তিনজন ব্যাংক কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিতে এসে ফিরে গিয়েছিলেন। সেসময়ও কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ-আল-মামুন কারণ হিসেবে পুলিশ প্রটেকশন না পাওয়ার বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছিলেন।
আবদুর রহমান বদি ইয়াবাসহ নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত। তিনি আওয়ামী লীগের টিকিটে মনোনয়ন পেয়ে কক্সবাজারে (টেকনাফ-উখিয়া) একাধিকবার সংসদ সদস্য ছিলেন।