শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:১১ পূর্বাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

কক্সবাজারে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানের আগমনে সাঁজ সাঁজ রব

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আমীর ডা. শফিকুর রহমানের পর্যটন নগরী কক্সবাজারে আগমন উপলক্ষে সাঁজ সাঁজ রব বিরাজ করছে। জেলা, উপজেলা জুড়ে চলছে উৎসবের আমেজ। ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা।

জেলা শহরের সব জায়গায় শোভা পাচ্ছে দৃষ্টিনন্দন তোরণ গেট, কর্মী সম্মেলনের আগে মাঠ পরিদর্শনসহ মোটর সাইকেল শোভাযাত্রা, মিছিল-মিটিংয়ে মেতে রয়েছেন নেতৃবৃন্দ। ইতিমধ্যে বিপুল সংখ্যক মোটরসাইকেলের র‌্যালী কক্সবাজার শহর, রামু, চকরিয়া, ঈদগাঁও, টেকনাফ, উখিয়া, রামুসহ বিভিন্ন উপজেলার মানুষকে আকৃষ্ট করেছে।

দীর্ঘ ১৬ বছর পর শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারী) কক্সবাজার সরকারী কলেজ মাঠে সকাল ৯ টায় শুরু হবে এই কর্মী সম্মেলন। এ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আমির ডাঃ শফিকুর রহমান। এতে আরো বক্তব্য রাখবেন, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আযাদ, মুহাম্মদ শাহজাহান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক আহসান উল্লাহ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর আমীর সাবেক এমপি আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম অঞ্চল টীম সদস্য মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় জামায়াত নেতৃবৃন্দ। সমাবেশ চলবে দুপুর ১ টা পর্যন্ত। সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন কক্সবাজার জেলা জামায়াতের আমীর চারবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী।

মাওলানা আনোয়ারী জানান, দীর্ঘ দেড় দশক পর ছাত্রজনতার গণ জাগরনে দেশের পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়েছে। ৮ ফেব্রুয়ারী জামায়াতের কর্মী সম্মেলন সফল করতে প্রথম বারের মতো কক্সবাজারে আসছেন আমিরে জামায়াত ডাঃ শফিকুর রহমান। বৃহৎ এই কর্মী সম্মেলনকে সামনে রেখে নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটা উচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে। লাখো মানুষের সমাগমের যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, সেটাকে সামনে রেখেই নেতা-কর্মীরা দিনরাত একযোগে কাজ করছেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কক্সবাজার জেলা সেক্রেটারী জাহিদুর রহমান বলেন, প্রথম বারের মতো আমিরে জামায়াতের কক্সবাজার আগমনে ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে। পর্যটন নগরীর ইতিহাসে সর্ববৃহৎ গন জমায়েত অনুষ্ঠিত হবে। তিনি সার্বক্ষনিক সময় উপস্থিত থেকে নেতাকর্মিদের বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছেন। বৃহৎ এই কর্মী সম্মেলন সফল করার ব্যাপারে জামায়াত নেতৃবৃন্দ জেলা-উপজেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সকলের সহযোগীতা কামনা করা হয়েছে।
সর্বশেষ কর্মী সম্মেলনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেছে কক্সবাজার জেলা জামায়াত।

৫ ফেব্রুয়ারী বিকাল ৪ টায় জেলা জামায়াতের নিজস্ব কার্যালয়ে আমির অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী জানান, কর্মী সম্মেলনকে সফল করার লক্ষ্যে আমরা ইতোমধ্যে জেলার প্রত্যেক উপজেলা-ইউনিয়ন-ওয়ার্ড-ইউনিট ভিত্তিক প্রস্তুতি কাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। আমরা আশা করছি ৮ তারিখের কর্মী সম্মেলনে লক্ষাধিক লোকের সমাগম হবে। এই জনসমাগমকে শান্তিপূর্ণ সুশৃঙ্খল ও নিরাপদের সাথে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আমরা জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসহ সকল অংশীজনের নিকট সহযোগিতা কামনা করছি। তারই প্রেক্ষিতে জেলা পুলিশের একটি টিম ৪ ফেব্রুয়ারি কর্মী সম্মেলনের স্থান পরিদর্শন করেছেন। কর্মী সম্মেলনকে যথাযথভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সরকারি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব ৬ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত থাকবে। এছাড়াও মেডিকেল টিম, এ্যাম্বুলেন্স, টেকনিক্যাল টিমসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এবারের কর্মী সম্মেলনে পুরুষ জনশক্তির পাশাপাশি আমাদের মহিলা জনশক্তিরাও অংশগ্রহণ করবেন। মহিলা জনশক্তির জন্য কক্সবাজার সরকারি কলেজের পাশে অবস্থিত ইলিয়াস মিয়া চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আলাদা বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা আশা করছি আমাদের নিজস্ব পুরুষ এবং মহিলা জনশক্তির পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক সাধারণ জনতা সম্মেলনে উপস্থিত হবেন। আয়োজিত কর্মী সম্মেলনকে শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও সুশৃংখলভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আবারো জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, ট্রাফিক বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগসহ সকল পক্ষের আন্তরিক ও নিরবচ্ছিন্ন সহযোগিতা কামনা করছি। যেহেতু লক্ষাধিক লোকের সমাবেশ সেহেতু রাস্তাঘাটে চলাচলের ক্ষেত্রে স্থানীয় বাসিন্দাদের ছন্দপতন হতে পারে, বিশেষ করে কক্সবাজারে আগত পর্যটক ভাই বোনেরা সাময়িক অসুবিধার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে পর্যটকসহ অন্যান্য মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা স্বাভাবিক ও সচল রাখতে ট্রাফিক পুলিশকে সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। এরপরেও সাময়িক অসুবিধা সৃষ্টি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। এম্বুলেন্স, সংবাদপত্র, ফায়ার সার্ভিস, ঔষধ সরবরাহসহ রাষ্ট্রীয় কাজে নিয়োজিত সকল যানবাহন কে স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিত করার জন্য আমরা সংগঠনের সকল পর্যায়ের দায়িত্বশীল ও নেতাকর্মীদের প্রতি আপনাদের মাধ্যমেও অনুরোধ করছি।
সাংবাদিকদের জানান, বিগত সাড়ে পনেরো বছর আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসনামলে সবচেয়ে বেশি নির্যাতন নিষ্পেষণ ও জেল জুলুমের শিকার হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শাসনামলে দেশে মানবাধিকার, ভোটাধিকার, গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক শিষ্টাচার ছিল নির্বাসিত। আওয়ামী লীগ জুলুমতন্ত্র কায়েম করে দেশের মানুষকে এক প্রকার জিম্মি করে রেখেছিল। ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে আমি ও ডামি মার্কা নির্বাচন করে জন মানুষের সাংবিধানিক অধিকার কে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছিল। গুম, খুন, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও টাকা পাচার করে দেশকে একটি বিভীষিকাময় ও বিশৃঙ্খল পরিবেশে ঠেলে দিয়েছিল। সর্বত্র বৈষম্য, বিভেদ ও জাতীয় ঐক্য বিনাশী কর্মকান্ড ছেয়ে গিয়েছিল। জনগণ দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, বিচার ব্যবস্থা নিয়ে আশাহত হয়েছিল। স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। এহেন প্রেক্ষিতে দেশের ছাত্রসমাজ কোটা সংস্কার আন্দোলনে তাদের অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বিরোধী মত ও পথ সহ্য না করার মানসিকতা লালনকারী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ ছাত্র আন্দোলনকে শুরু থেকেই দমনের চেষ্টা করে। আমাদের দেশের সাহসী ও অকুতোভয় তারুণ্য শক্তি আওয়ামী লীগের সকল রক্ত চক্ষু ও ভয়ভীতি উপেক্ষা করে তাদের দাবি আদায়ে অটল থাকে। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের সকল বাহিনীকে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তরুণ ছাত্র-জনতার ওপর লেলিয়ে দিয়ে আন্দোলন দমনের অপচেষ্টা করে। ছাত্রদের এই আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির সহ সকল রাজনৈতিক দল-মত ও আপামর জনসাধারণ সর্বাত্মক সমর্থন ও সহযোগিতা করে। অবশেষে ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সহ সকল মন্ত্রী, এমপি এবং তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় আবার অনেকেই আত্মগোপনে চলে যায়।
আওয়ামী লীগের সাড়ে পনেরো বছরে জামায়াতে ইসলামীর উপর যে ক্রেক ডাউন চালিয়েছে তাতে তারা মনে করেছিল জামায়াতের শিকড় উপড়ে ফেলা হয়েছে। আল্লাহর রহমত এবং জনগণের ভালোবাসার কারণে জামায়াতে ইসলামী তাদের ধারণা ভুল প্রমানিত করে এদেশের মানুষের কল্যাণে আবারো সর্বত্র সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। আমরা জনগণের কাছে দীর্ঘ সাড়ে পনেরো বছর যেতে পারিনি। আমাদের বক্তব্য-কর্মকান্ড দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি আমাদের প্রতিজ্ঞা ব্যাপকভাবে তুলে ধরতে পারিনি। ৫ আগস্ট গণ অভ্যুত্থানের ফলে যে নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে সেই পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে দেশের মানুষের নিকট জামায়াতে ইসলামীর কর্মকান্ড, দাওয়াত ও সমৃদ্ধ, উন্নত ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন তুলে ধরছি। ইতিমধ্যে আমীরে জামায়াত দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে গিয়ে বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশের রূপরেখা তুলে ধরছেন। তারুণ্যনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার কথা বলছেন। সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে বৈষম্য ও বিভেদ দূর করার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। সর্বোপরি বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে মর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার কথা বলছেন। তারই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে ৮ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজারে আমীরে জামায়াতের আগমন। আমরা আশা করছি আমীরে জামায়াত দেশ ও জাতির উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যের পাশাপাশি কক্সবাজারের লবণ, পর্যটন, চিংড়ি ও স্থানীয় কৃষিজ পণ্য উৎপাদন-উন্নয়ন ও রপ্তানি করার প্রয়োজনীয়তা জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরবেন। আমরা মনে করি কক্সবাজার থেকে যে পরিমাণ রাজস্ব সরকারের কোষাগারে জমা হয়, স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন মান উন্নয়নে সেই পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়না। পর্যটন রাজধানী বলা হলেও এখনো পর্যটন শিল্পকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যথাযথভাবে তুলে ধরা সম্ভব হয়নি। আমরা বিশ্বাস করি কক্সবাজারে উৎপাদিত লবণ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব। কিন্তু এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফার লোভে আমাদের লবণ শিল্পকে নস্যাৎ করে দিতে বিভিন্ন সময়ে সরকার কে বিদেশ থেকে লবণ আমদানির প্রক্রিয়ায় জড়িয়ে ফেলে। এ ব্যাপারে জাতীয় পর্যায়ে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আমরা এই সফরের মাধ্যমে আমীরে জামায়াতের সহযোগিতা কামনা করব।


আরো খবর: