অতিবৃষ্টি, বন্যা ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সম্প্রতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কক্সবাজারের জেলার হাজারো কৃষকের আবাদি জমি।
উখিয়ার মোহাম্মদ আলী মিয়া, ভারীবর্ষণে প্রান্তিক এই কৃষকের ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পরিবার নিয়ে আলীকে বিপাকে পড়তে হয়েছে, তবে আলীর দুঃখ কিছুটা হলেও হতে চলেছে লাঘব।
কৃষি পুর্নবাসন সহায়তা কর্মসূচির আওতায় খরিপ-২ মৌসুমে ক্ষতিগ্রস্ত কক্সবাজারের ৯ উপজেলার ১২ হাজার কৃষককে শীতকালীন সবজি চাষে বীজ,সার সহ নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে চকরিয়ার ৩ হাজার ৫ শত, পেকুয়ার ২ হাজার, কক্সবাজার সদরের ১ হাজার ৫ শত, রামুর ১ হাজার ৫ শত, টেকনাফের ১ হাজার, মহেশখালীর ১ হাজার, ঈদগাঁও এর ৫ শত, কুতুবদিয়ার ৫ শত ও উখিয়ার ৫ শত কৃষককে দেওয়া হবে বিশেষ এই প্রণোদনা।
৮ ধরনের শীতকালীন সবজি যথাক্রমে – টমেটো, মিষ্টি কুমড়ো, লাউ, মরিচ, ব্রকোলি, বেগুন, ফুলকপি ও বাঁধাকপির বীজ প্রদান করার পাশাপাশি তালিকাভুক্ত প্রতি ১ জন উপকারভোগী কৃষককে ১ বিঘা জায়গার জন্য উপকরণ ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নগদ ১ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
জেলায় এই প্রণোদনা কার্যক্রম বাস্তবায়নে তিন কোটি ছিয়াশি লক্ষ একচল্লিশ হাজার দুইশত টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপ পরিচালক ড. বিমল কুমার প্রামাণিক।
তিনি বলেন, ” বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে শুরু থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজারেও নানা প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। আশা করছি, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা প্রণোদনা কার্যক্রমের মাধ্যমে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সুফল পাবেন। ”
এছাড়াও উপকারভোগীদের তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে এক পরিবার থেকে একের অধিক যেনো কেউ অন্তর্ভুক্ত না হয় সেক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
উখিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিজাম উদ্দিন জানান, ” উপকারভোগীদের তালিকা প্রণয়ন করার কাজ চলছে, খুব শীঘ্রই উখিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে প্রণোদনা বিতরণ করা হবে। ”
প্রণোদনা প্রদানের পাশাপাশি শীতকালীন সবজির বীজ রোপণ ও পরবর্তীতে ফসল কর্তনের সময় প্রযোজ্যক্ষেত্রে উপকারভোগীদের সার্বিক সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান টেকনাফের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জাকিরুল ইসলাম।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বন্যায় এবার কম-বেশি দেশের ২৭ জেলা বন্যার কবলে পড়েছে এবং যার মধ্যে কক্সবাজার সহ ২৩টি জেলার ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বন্যায় মোট তিন লাখ ৭২ হাজার ৭৩৩ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত জমির মধ্যে ফসলি জমির পরিমাণ ২ লাখ ৮ হাজার ৫৭৩ হেক্টর।
কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ভয়াবহ বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষি পুনর্বাসনকে অগ্রাধিকার দিয়েছে সরকার। শুধু অগ্রাধিকারই নয়, নগদ ও উপকরণ সহায়তা নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার।