শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:২৪ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

ঢাকা উত্তরের আতিকুল ছিলেন পরিবারিক দুর্নীতি-সিন্ডিকেটের জনক

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪


ঢাকা, ১৮ অক্টোবর – গত পাঁচ বছরে ‘দুর্নীতির আখড়া’ হয়ে উঠেছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশেনের (ডিএনসিসি) নগর ভবন। এখানে ছিল সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের ‘পারিবারিক সিন্ডিকেট’। ভাগনে-ভাতিজাকে উপদেষ্টা বানিয়েছিলেন তিনি। মেয়ে ছিলেন ডিএনসিসির অবৈতনিক চিফ হিট অফিসার। এসব নিয়োগে তিনি নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেননি।

গত বুধবার রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএস থেকে ডিএনসিসির বরখাস্ত মেয়র আতিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
অভিযোগ রয়েছে, মেয়র থাকাকালে তিনি ডিএনসিসির ঠিকাদারি কাজ দিয়েছেন কমিশন নিয়ে। বদলি-পদোন্নতিও হয়েছে একইভাবে। চলেছে নিয়োগ বাণিজ্য। অন্যায় কাজে সম্মতি না দেওয়ায় নগর ভবন ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে একাধিক কর্মকর্তাকে।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান আতিকুল। এর পর গত ১৮ আগস্ট রাতে তিনি নগর ভবনে প্রবেশ করলে খবর পেয়ে এলাকাবাসী সেখানে জমায়েত হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে পেছনের দরজা (ফায়ার এক্সিট) দিয়ে পালিয়ে যান তিনি। পরদিনই তাঁকে বরখাস্ত করে ডিএনসিসিতে প্রশাসক নিয়োগ করে সরকার। আতিকের ঘনিষ্ঠরাও এর পর থেকে পলাতক।
ডিএনসিসির প্রথম মেয়র আনিসুল হকের আকস্মিক মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে প্রথম মেয়র হন আতিকুল ইসলাম। ওই পরিষদের মেয়াদ শেষে ২০২০ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আবার মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। এর পর আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পুরোদমে সক্রিয় হন এই ব্যবসায়ী নেতা।

পারিবারিক সিন্ডিকেট
২০২২ সালে আতিকুল ইসলাম ভাতিজা ইমরান আহমেদ ও ভাগনে তৌফিক আহমেদকে তাঁর উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেন। কিছু দিন পর তাঁর মেয়ে বুশরা আফরিন হন ডিএনসিসির চিফ হিট অফিসার। একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার পক্ষ থেকে তাঁকে এই নিয়োগ দেওয়া হয়। চিফ হিট অফিসারের পরামর্শে নগরীর তাপমাত্রা হ্রাসে বিভিন্ন আইল্যান্ডে গাছ লাগায় ডিএনসিসি। কিছু সড়কে গাড়ি থেকে পানি ছিটানোর (কৃত্রিম বৃষ্টি) কাজে খরচ করা হয় প্রায় ২ কোটি টাকা।
২০২৩ সালে শক্তি ফাউন্ডেশনকে সবুজায়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেন আতিকুল। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক হুমায়রা ইসলাম সম্পর্কে তাঁর শ্যালিকা। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মেয়রের ভাই তোফাজ্জল হোসেন, ভাতিজা ইমরান এবং মেয়ে বুশরা আফরিনও যুক্ত ছিলেন। আর ভাগনে তৌফিক ও এপিএস ফরিদের দায়িত্ব ছিল ঠিকাদারি কাজের ভাগবাটোয়ারা ও কমিশন আদায়। মেয়র থাকাকালীন আতিকুল যেখানেই যেতেন, তাঁর সফরসঙ্গী হতেন তৌফিক।

সড়কবাতির প্রকল্পে অনিয়ম
রাতের ঢাকায় আলো ছড়াতে ইউরোপ থেকে আনা হয় ৫০ হাজার সড়কবাতি। বলা হয়েছিল, এসব বাতি ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করবে। এমনকি আধুনিক এসব বাতি কেন্দ্রীয় তদারকির মাধ্যমে জ্বালানো-নেভানো যাবে, অকেজো হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানা যাবে। ১০ বছরের ওয়ারেন্টিযুক্ত বাতিগুলো লাগানোর পরের পাঁচ বছর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের। কোনো বাতির আলো ৭০ শতাংশে নেমে এলে সেটি বদল করার শর্ত ছিল চুক্তিতে। কিন্তু ডিএনসিসির সড়কে শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে নিম্নমানের সিএফএল বাতি। যদিও ৩৬৯ কোটি ১৪ লাখ ৩২ হাজার টাকায় কেনা দুই ধরনের ৪৮ হাজার ৮১২টি বাতির প্রতিটির দাম পড়েছে ৩৮ হাজার ৫০০ টাকা। লাগানোর মাসখানেকের মধ্যে সেগুলো বিকল হতে শুরু করে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আর বদলে দেয়নি। এ ব্যাপারে নীরব থেকেছে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। তখন চাউর হয়, প্রতিটি বাতির প্রকৃত দাম ছিল আসলে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এই প্রকল্পে লুটপাট হয়েছে বিপুল অর্থ।

সূত্র: সমকাল
আইএ/ ১৮ অক্টোবর ২০২৪



আরো খবর: