বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:০৮ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

২০২৪ সালের নির্বাচন নিয়ে যে সত্য স্বীকার করলেন বিদায়ী সিইসি

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


ঢাকা, ০৫ সেপ্টেম্বর – বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যক্তির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে, দলের সঙ্গে নয়। নির্বাচন মূলত একদলীয় হওয়ার কারণে কারচুপি বা সরকারিভাবে প্রভাবিত করার প্রয়োজনও ছিল না।

বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনে পদত্যাগের ঘোষণার আগে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

লিখিত বক্তব্যে বিদায়ী সিইসি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচন সেনাসমর্থিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই নির্বাচনে বিএনপি সংসদে মাত্র ২৭টি এবং আওয়ামী লীগ ২৩০টি আসন পেয়েছিল। নির্বাচন বিতর্কের উর্ধ্বে ছিল না। নিরাপদ প্রস্থান বিষয়ে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে সেনাসমর্থিত অসামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দরকষাকষির বিষয়টি প্রকাশ্য ছিল। সে প্রশ্নে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের অবস্থানও গোপন ছিল না।

তিনি আরো বলেন, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচন সংবিধানমতে দলীয় সরকারের অধীনে হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ অনেক দলই অংশগ্রহণ করেনি। ফলে সেই নির্বাচনও ২০২৪ সালের অনুরূপ অন্তর্ভুক্তিমূলক ছিল না। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করে। আসন পেয়েছিল মাত্র ৬টি। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ২৫৮টি। মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে বর্তমান কমিশনের অধীনে। ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৮টি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো সেই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে। নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়নি। কমিশন বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য একাধিকবার আহ্বান করা সত্বেও তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করার বিষয়টি দলের নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিষয়।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন স্থগিত বা বাতিল করে দেওয়ার মতো কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি ছিল না। সেই কারণে অনেকেই কমিশনকে দোষারোপ করছেন। নির্বাচন কখন কী কারণে কতদিনের জন্য স্থগিত করা যাবে তাও সংবিধানে সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। অতীতে কখনোই কোনো কমিশন নির্বাচন বাতিল করে দিয়ে পদত্যাগ করেননি। সম্প্রতি ভেঙে দেওয়া সংসদের ২৯৯টি আসনে নির্বাচন প্রার্থীদের মধ্যে ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে হয়েছে। দলের মধ্যে নয়। ২৯৯টি আসনে ১৯৬৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।

বিদায়ী সিইসি আরো বলেন, নির্বাচন নিষ্পন্ন করা অতিশয় কঠিন একটি কর্মযজ্ঞ। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হওয়ার সকল দোষ বা দায়-দায়িত্ব সকল সময় কেবল নির্বাচন কমিশনের উপর এককভাবে আরোপ করা হয়ে থাকে। একটি কমিশন না হয় অসৎ বা পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে। কিন্তু সব সময় সব কমিশনই অসৎ বা পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে না। কমিশন বিভিন্ন কারণে নির্ভেজাল গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে অক্ষম বা অসমর্থ হতে পারে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় কেবল কমিশনের পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে অবাধ, নিরপেক্ষ, কালো টাকা ও পেশিশক্তি-বিবর্জিত এবং প্রশাসন-পুলিশের প্রভাবমুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করা যাবে না। নির্বাচন পদ্ধতিতে দুর্ভেদ্য মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও আচরণে এবং বিশেষত প্রার্থীদের আচরণে পরিবর্তন প্রয়োজন হবে।

সংবাদ সম্মেলনেই পদত্যাগপত্র সই করে নির্বাচন কমিশন সচিব শফিউল আজিমের হাতে তুলে দেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। এ সময় নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান ও মো. আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। তবে বেগম রাশিদা সুলতানা ও মো. আনিছুর রহমান উপস্থিত ছিলেন না।

২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পেয়েছিল কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। ৫ বছরের জন্য রাষ্ট্রপতি তাদের নিয়োগ দিলেও মাঝপথেই দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হলো তাদের। কাজী হাবিবুল আউয়ালের পাশাপাশি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, বেগম রাশিদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও মো. আনিসুর রহমানও পদত্যাগ করেছেন।

এই কমিশনের অধীনে সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আওয়ামী লীগ টানা চারবারের মতো জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। এরপর থেকে শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগ পাওয়া রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কর্মকর্তারা পদত্যাগ করছেন নয়তো তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হচ্ছে।

সূত্র : ডেইলি বাংলাদেশ


আরো খবর: