উখিয়ায় পাহাড় কেটে মাটি পাচার বন্ধ করতে গিয়ে ডাম্প ট্রাকের চাপায় নিহত বন কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ্জামান হত্যার ‘পরিকল্পনাকারি কামাল’সহ আরও দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১৫। এ ঘটনায় এ নিয়ে পুলিশ ও র্যাব চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
সোমবার (১৫ এপ্রিল) বিকালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে হত্যার ‘পরিকল্পনাকারি’ মো. কামাল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং সহযোগী হেলাল উদ্দিনকে উখিয়ার কোটবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন র্যাব-১৫ অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।
গ্রেপ্তার মো. কামাল উদ্দিন উখিয়ার হরিণমারা এলাকার শাহ আলমের ছেলে এবং হেলাল উদ্দিন তুতুরবিল এলাকার নূর আলম মাইজ্জার ছেলে।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) র্যাব-১৫ এর কক্সবাজার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন জানান, পাহাড় কেটে মাটি পাচার রোধে ধারাবাহিকভাবে অভিযান পরিচালনা করতেন নিহত বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে হরিণমারা এলাকায় স্থানীয় হেলাল, গফুর ও বাবুলের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে আসছিল। চক্রের অধীনে ১০-১২টি ডাম্পার ও কয়েকটি মাটিকাটা ড্রেজার রয়েছে। তারা রাতের অন্ধকারে বন কর্মকর্তাদের অগোচরে পাহাড়ের মাটি কেটে এনে প্রতি ডাম্পার ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা দরে বিক্রি করে থাকে। চক্রের হোতারা ২০০ থেকে ২৫০ টাকা রেখে বাকি টাকা ডাম্পারের মালিকদের গাড়ি ভাড়া ও শ্রমিক খরচ বাবদ পরিশোধ করে দেয়।
নিহত বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান হরিণমারা বন অঞ্চলের দায়িত্বপূর্ণ বিট কর্মকর্তা ছিলেন।
তিনি একজন সাহসী ও সৎ কর্মকর্তা হিসেবে সর্ব মহলে পরিচিত ছিলেন মন্তব্য করে র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘গত নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান অনেকগুলো অভিযান পরিচালনা করে পাঁচটি মাটি কাটার ড্রেজারসহ কয়েকটি ডাম্পার আটক করেছেন এবং সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের বিরুদ্ধে বন আইনে কয়েকটি মামলা দায়ের করেছেন। ফলে এই বন কর্মকর্তা এই অপরাধী চক্রের চক্ষুশূলে পরিণত হন এবং অপরাধীরা তাকে শায়েস্তা করার জন্য নানান পরিকল্পনা করে থাকে।
গত ২৯ মার্চ বন কর্মকর্তা সাজ্জাদ তার নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে বন বিভাগের আরও কয়েকজন সদস্য নিয়ে একটি অভিযান পরিচালনা করে পাহাড়ের মাটি বোঝাই করা অবস্থায় হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ড্রাইভার কামালের একটি ডাম্পার আটক করেন এবং এই ঘটনায় কামালসহ চারজনের বিরুদ্ধে বন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। ফলে কামালসহ অন্য আসামীরা বন কর্মকর্তা সাজ্জাদের উপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত হন। ফলে চক্রটি আরও কয়েকজন বন কর্মকর্তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।’
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘ওই পরিকল্পনা মতেই ৩১ মার্চ রাতে চালক বাপ্পি ও হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ড্রাইভার কামালসহ দুইজন হেল্পারকে সাথে করে সৈয়দ আলমের মালিকানাধীন একটি ডাম্পার নিয়ে পাহাড়ের মাটি কাটার উদ্দেশ্যে বের হন। ডাম্পারের মালিক সৈয়দ আলম বন কর্মকর্তাদের আগমনের উপর নজরদারি রাখার জন্য একটি দল বাজারে অপেক্ষা করতে থাকে। ইতোমধ্যে পাহাড় কাটার সংবাদ পেয়ে সাহসী বন কর্মকর্তা সাজ্জাদ বন বিভাগের আরেক সদস্য মো. আলীকে সাথে নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বাপ্পি ও কামাল মাটি বোঝাই ডাম্পার নিয়ে ফেরত আসার সময় স্থানীয় ফরিদ আহম্মদের দোকানের সামনে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে বন কর্মকর্তা সাজ্জাদকে আসতে দেখে। তখন ডাম্পারের ড্রাইভার বাপ্পির পাশে বসে থাকা কামাল পূর্ববর্তী ঘটনার আক্রোশের জেরে এবং পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক গাড়ি না থামিয়ে বন কর্মকর্তাকে গাড়ি চাপা দেওয়ার জন্য বাপ্পীকে নির্দেশ প্রদান করে। বাপ্পি গাড়ি না থামিয়ে মোটরসাইকেল আরোহী সাজ্জাদ ও তার সহযোগীকে গাড়ি চাপা দেয়। ফলে ড্রাম্পারের চাপায় মাথায় গুরতর আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলেই সাজ্জাদ মৃত্যুবরণ করেন এবং সাথে থাকা সহযোগী মোহাম্মদ আলী আহত হন।’
এ ঘটনায় বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী মো: শফিউল আলম বাদী হয়ে এজাহারনামীয় ১০ জন এবং অজ্ঞাত পাঁচজনকে আসামী করে উখিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় দুইজনই এজাহারনামীয় আসামী এবং দুইজনকে উখিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানান র্যাব অধিনায়ক।
এর আগে বনকর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামানকে হত্যার ঘটনার পরের দিন ১ এপ্রিল ছৈয়দ করিমকে এবং ৮ এপ্রিল চালক মো. বাপ্পীকে গ্রেপ্তার করে উখিয়া থানার পুলিশ।
উল্লেখ্য, নিহত মো. সাজ্জাদুজ্জামান কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বনবিটের বিট কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি মুন্সিগঞ্জ জেলার গজরিয়া উপজেলার মোহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে।
একই ঘটনায় আহত হন বনরক্ষী মোহাম্মদ আলী, সে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের ঝিমংখালী এলাকার আবুল মঞ্জুরের ছেলে।