সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৭ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

মাসোহারায় চলছে আট সিন্ডিকেটের হাজারের অধিক অবৈধ ডাম্পার! উখিয়ায় থামানো যাচ্ছে না পরিবেশ ধংসের মহাযজ্ঞ

সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার :
আপডেট: বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৪

উখিয়ায় প্রভাবশালী আট সিন্ডিকেটের হাজারো অধিক অবৈধ ডাম্পার নিয়মিত বন ও পাহাড় কাটার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। মাসিক হাজার টাকা মাসোহারায় চলছে এসব অবৈধ গাড়ী। ফলে অদক্ষ চালক ও বেপরোয়া গতির ডাম্পারের চাপায় পিষ্ট হয়ে নিয়মিত প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। চিহ্নিত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়ায় থামানো যাচ্ছে না পরিবেশ ধংসের মহাযজ্ঞ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিদিন এক হাজারের বেশি অবৈধ ডাম্পার উখিয়ার ইটভাটা গুলোতে মাটি ও কাঠ বোঝাই, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মালামাল পরিবহণ, ধানী জমির টপ সয়েলসহ বন ও পাহাড় কেটে পরিবেশ ধংস করছে।

এখন এসব অবৈধ ডাম্পার মালিক সিন্ডিকেট থেকে নিয়মিত মাসোহারা আদায়ের কাজ করছে উখিয়ার মামুন, রাজা পালং-এর লাল ভুট্টো এবং কোটবাজারের শরীফ। আগে এই কাজ করত সলিম উল্লাহ । আদায়কৃত চাঁদার বেশির ভাগ দিতে হয় শাহপুরী হাইওয়ে পুলিশ ফাড়িতে।

চাঁদা নেওয়ার বিষয়ে জানতে শাহপরী থানা হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হাসান এর (01833459533) নাম্বারে একাধিকবার চেষ্টা করেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

উখিয়া বন রেঞ্জ অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত তিন বছরে পাহাড় কাটার সময় মাটি চোরসহ অন্তত ১৫ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। গত ২০২১ সাল থেকে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ২৯০টির মামলা হয়েছে। তৎমধ্যে ১৯৩টি জ্ঞাত আসামীযুক্ত। বাকী গুলো অজ্ঞাত।

বন বিভাগ বলছে, গত এক বছরে পাহাড় কাটার অভিযোগে অন্তত ১৯টি অবৈধ ডাম্পার জব্দ করে মামলা দেওয়া হয়েছে।

বিভিন্ন সময় বন ও পাহাড় কাটা প্রতিরোধ করতে গিয়ে একাধিক সরকারি কর্মকর্তা হামলার শিকার হয়েছে। তৎমধ্যে উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী সফিউল আলম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আল মামুন, আলী আহমদ প্রমুখ। সর্বশেষ গত ৩১ মার্চ ভোর রাতে পাহাড় কাটার সময় বাধা দেওয়ায় দুছড়ি এলাকায় বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান (৩০) ডাম্পার চাপা দিয়ে পিষ্ট করে হত্যা করেছে পাহাড় খেকোরা।

এ ঘটনায় রোববার রাতে উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক ৬ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। যার মামলা নং- ০১, তারিখ- ০১/০৪/২০২৪ইং।
মামলার আসামিরা হলেন, উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের পশ্চিম হরিণমারা এলাকার মোহাম্মদ কাশেমের ছেলে ও ডাম্পার ট্রাকটির চালক মো. বাপ্পী (২৩), একই এলাকার সুলতান আহম্মদের ছেলে ছৈয়দ আলম ওরফে কানা ছৈয়দ (৪০) ও তার ছেলে মো. তারেক (২০), রাজাপালং ইউনিয়নের তুতুরবিল এলাকার নুরুল আলম মাইজ্জার ছেলে হেলাল উদ্দিন (২৭), হরিণমারা এলাকার মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে ছৈয়দ করিম (৩৫), একই এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে আনোয়ার ইসলাম (৩৫), আব্দুর রহিমের ছেলে শাহ আলম (৩৫), হিজলিয়া এলাকার ঠান্ডা মিয়ার ছেলে মো. বাবুল (৫০), একই এলাকার ফরিদ আলম ওরফে ফরিদ ড্রাইভারের ছেলে মো. রুবেল (২৪) এবং হরিণমারা এলাকার শাহ আলমের ছেলে কামাল উদ্দিন ড্রাইভার (৩৯)।

এই মামলায় অনেক অপরাধীকে রহস্যজনক কারনে আসামী করেন নি মামলার বাদী। যারা বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদকে হত্যার সাথে জড়িত। এমন কি ঘাতক ড্রাইভার বাপ্পির পাশের সিটে বসে বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদকে চাপা দিয়ে হত্যা করার নির্দেশদানকারীকেও। সাজ্জাদকে হত্যার সময় বাপ্পী চালিত ডাম্পার ছাড়াও আরো ২ টি ডাম্পার ছিলো যেগুলোও সাজ্জাদকে হত্যার কাজে সহযোগীতায় করার জন্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলো। তার মধ্যে একটি গাড়ীতে করে গফুর তার নিজেই মাটির টানছিলো। অপরটি ছিলো হেলাল ড্রাইভার পিতা:ডর মনিয়া এর গাড়ী। এই ৩ ডাম্পার গাড়ী নিয়ে ত্রি-মূখী গাড়ী চাপা দিয়ে সাহসী বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদকে হত্যা করার নীল নকশা তারা তৈরি করে ছিলো বলে স্থানীয় একাধিক সুত্রে জানা গেছে।

বিট কর্মকর্তা হত্যাকান্ডের ঘটনায় ছৈয়দ করিম নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপরাপর আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ শামীম হোসেন।

জানতে চাইলে অবৈধ ডাম্পার মালিকের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের বিষয়ে ওসি কিছুই জানেন না। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন, সত্যতা পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

একজন ডাম্পার মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, স্থানীয় ভিলেজার ও হেডম্যানদের ম্যানেজ করেই তারা অবৈধ ডাম্পার চালাচ্ছে। রাজাপালং এর লাল ভুট্রোই স্থানীয় প্রশাসনের নামে ডাম্পার মালিক ও পাহাড় কর্তনকারীদের নিকট থেকে চাঁদা উত্তোলন করেন। বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদ হত্যা মামলার ৮ নং আসামি বাবুলের নিকট থেকে ‌র‌্যাবকে ম্যানেজ করে দেওয়ার কথা বলে লাল ভুট্টো ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া অভিযোগ পাওয়া গেছে। সকল পাহাড় খেকো সিন্ডিকেটের তালিকা লাল ভুট্রো কাছে রয়েছে।

অবৈধ ডাম্পার মালিকদের মধ্যে রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকার গফুর কোম্পানি, বদিউল আলম, শাহ আলম, সৈয়দ আলম, হেলাল ড্রাইভার ( ১), কামাল উদ্দিন ড্রাইভার, তাকিয়া, শাহজাহান মেম্বার, আনোয়ার, সৈয়দ হোসেন, শহীদুল্লাহ, তাহের কোম্পানি, মোহাম্মদ হেলাল (২), রেজাউল হাসান, বজলিবড় মোহাম্মদ,শাহ আলম।

তুতুরবিল এলাকার আলাউদ্দিন, হাশেম, জামাল, কামাল, নুরু, রবিউল হাসান, সরোয়ার, শাহ আলম, আবু তাহের, নুরুল আলম।

হাজিরপাড়া এলাকার মোঃ হিরু, আলমগীর, মোঃ শফি। পুকুরিয়া এলাকার মোস্তাক ও নাসির।
ফলিয়াপাড়া এলাকার নুরু মাঝি, ইব্রাহিম, নূর মোহাম্মদ, পুতু কোম্পানি। বঙ্গমাতা কলেজ এলাকার রবিউল হাসান রবিন।

জালিয়াপালং জুন্মাপাড়ার রুবেল, সোনাইছড়ির হেলাল ও সরোয়ার। চোয়াংখালি এলাকার মৌলভী রফিক। হলদিয়াপালং স্বপন শর্মা রনি, শাহজাহান মেম্বার।

এ ব্যাপারে উখিয়া প্রেসক্লাব সভাপতি বলেছেন, অবৈধ ডাম্পার সিন্ডিকেট প্রশাসনের চিহ্নিত। এরা কালো টাকার প্রভাব এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে রাতদিন বন ও পাহাড় কাটছে। তালিকা করে এসব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নিলে উখিয়া উপজেলার বসবাসযোগ্য পরিবেশ রক্ষা করা কঠিন হবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)র উখিয়া শাখার ইমরান খান বলেছেন, বালু মহালের নামে খাল ইজারা বন্ধ করা জরুরী। কারণ খালে কোন বালি নেই। তাই ইজারার নামে বন-পাহাড় কাটছে। এতে পরিবেশ নষ্টের সাথে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।

উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম বলেন, সীমিত সংখ্যক জনবল নিয়ে সরকারের বনসম্পদ রক্ষার্থে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি। কখনো কারো সাথে আপোষ করিনি বলে বারবার হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হচ্ছে। যার ফলে সাজ্জাদের মতো একজন সৎ অফিসারকে প্রাণ দিতে হয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।


আরো খবর: