নিজস্ব প্রতিবেদক::
টেকনাফে অপহৃত মাদ্রাসাছাত্র ও প্রবাসীর ছেলে ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহ (৬) কে ২১ দিন পর কুমিল্লা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় মুক্তিপণের ৪ লাখ টাকা, অপহরণে ব্যবহৃত সিএনজি ও ৪টি মোবাইল ফোন উদ্ধার এবং অপহরণ চক্রের মাস্টার মাইন্ড আনোয়ার সাদেকসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রবিবার (৩১ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০ টায় থানা মিলনায়তনে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উখিয়া সার্কেল রাসেল পিপিএম।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, টেকনাফের মোচনী রেজিস্ট্রার ক্যাম্পের নাগু ডাকাতের ছেলে সাদেক (২১), মৃত আব্দুর শুক্কুরের ছেলে নাগু ডাকাত (৫৫), মো. আলীর স্ত্রী লায়লা বেগম (৫৫), মোহাম্মদ খানের স্ত্রী উম্মে সালমা (২৪), মৃত আবদুল শুক্কুরের ছেলে মোহাম্মদ হাশেম (২৭), সৈয়দুল হকের স্ত্রী খাতিজাতুল খোবরা (৩৫), নাগু ডাকাতের স্ত্রী আয়েশা বেগম (৩২), সাদের স্ত্রী হোসনে আরা (২০), নাগু ডাকাতের ছেলে রনি (১২), কক্সবাজারের ঝিলংঝার দক্ষিণ হাজীর পাড়ার জাফর আলমের ছেলে মো. নাসির আলম (২৮), মহেশখালীর কালামর ছড়ার মাইস্যা ঘোনার মনছুর আলমের ছেলে সালামত উল্লাহ প্রকাশ সোনাইয়া (৪৫),নয়াপাড়ার মৃত লালমিয়ার ছেলে জহির আহমেদ (৬৫), শামসুল আলমেমর ছেলে হাসমুল করিম তোহা (২০), সামিরাঘোনার ফরিদুল আলমের ছেলে মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ্ (১৯) ,মৃত রাহমত উল্লাহর ছেলে ফরিদুল আলম খান (৫২) সালামত উল্লাহর ওরফে সোনামিয়ার ছেলে আমির হোসেন ও কালামর ছড়ার সামশুল আলমের ছেলে তৌহিদুল ইসলাম তোহা।
তিনি জানান, গত ৯ মার্চ বেলা ১১ টার দিকে হ্নীলা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের পূর্ব পানখালী এলাকা হতে মাদ্রাসা আবু হুরায়রার ১ম শ্রেণীর ছাত্র ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা অপহরণ করে। শিশু অপহরণের খবর পেয়ে অপহৃত শিশুটি উদ্ধারের জন্য গুরুত্বের সাথে টেকনাফ মডেল থানা পুলিশ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
এসময় পুলিশ জানতে পারে যে, শিশু অপহরণের মাস্টারমাইন্ড আনোয়ার সাদেকের পরিকল্পনায় বাদীনির ভাড়াটিয়া পুরাতন রোহিঙ্গা নাছের এবং মাজুমার নেতৃত্বে উম্মে সালমা, শাহীন এবং সিএনজি ড্রাইভার নাসির আলম মাদ্রাসা হতে বাসায় যাওয়ার পথে শিশুটিকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। এর প্রেক্ষিতে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে সিএনজি ড্রাইভার নাছির এবং উম্মে সালমাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, অপহরণের সাথে আনোয়ার সাদেক, শাহীন, তোহা, নাগু ডাকাত, মধু, হোসনে আরা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা চক্রের সক্রিয় সদস্য। অপহরণকারীরা মুক্তিপণ আদায়ের কৌশল হিসাবে মহেশখালী থানার কালারমারছড়ার দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে অপহৃত শিশু ছোয়াদের মাকে বার বার মুঠোফোনে মাধ্যমে ২০ লাক টাকা মুক্তিপণ দাবি এবং এমনকি মুক্তিপণ না দিলে শিশুটি হত্যা করার হুমকি প্রদান করে। মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যে অপহৃত শিশুকে বিভিন্ন সময় নির্মমভাবে মারধর করে ছোয়াদের পরিবারের লোকজনদেরকে কান্নাকাটির শব্দ শোনাতো।
পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উখিয়া সার্কেল রাসেল ও অফিসার ইনচার্জ টেকনাফ মডেল থানার মো. উসমান গনি, পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মো. আব্দুর রাজ্জাক, এসআই সুদর্শন, এসআই মাসুদ ফয়সাল ও সঙ্গীয় অফিসার ফোর্স গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কক্সবাজার ও কুমিল্লা জেলার লালমাই থানার বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর অপহৃত শিশু ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহ, মুক্তিপণের ৪ লাখ টাকা, অপহরণে ব্যবহৃত সিএনজি ও ৪টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। ঘটনায় জড়িত ইতোমধ্যে অপহরণ চক্রের মাস্টার মাইন্ড আনোয়ার সাদেকসহ ১৭ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও অপহরণ চক্রের অন্যান্য সদস্যদের শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা।
এদিকে রমজান মাস শুরু হওয়ার পর থেকে বেড়ে গেছে অপহরণের হার। বিশেষ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন গ্রাম গুলোর বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছে। গত রমজানেও একই ভাবে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করতো।
এ ব্যাপারে টেকনাফ মডেল থানার মামলা নং- ২০/১৩৭, তারিখ-১০/০৩/২০২৪ইং, ধারা- নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০২০) এর ৭/৩০ রুজু করা হয়েছিল।
এদিকে, এক প্রশ্নের উত্তরে এসপি সার্কেল রাসেল জানান, অপহরণের ঘটনার সাথে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি কতিপয় অসাধু স্থানীয়রাও জড়িত রয়েছে। তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি অপহরণ রোধে শিগগিরই জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে মতবিনিময় করে জন সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সভা করা হবে বলেও জানান।
উল্লেখ্য, সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, গত ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ এর মার্চ পর্যন্ত সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের পাহাড় কেন্দ্রিক ১০৩টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে ৫২ জন স্থানীয় এবং ৫১ জন রোহিঙ্গা। এদের মধ্যে যারা ফিরে এসেছে তাদের বেশির ভাগই মুক্তিপণ দিয়ে ফিরতে হয়েছে।