রেলপথে যাত্রীদের সেবা ও নিরাপত্তা দিয়ে প্রশংসা কুড়াচ্ছে ‘ট্রেনবালা’ তরুণীরা। মঙ্গলবার সকাল থেকে সুশিক্ষিত ট্রেনবালারা ঢাকা টু চট্টগ্রাম সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনেও যাত্রীসেবায় নিয়োজিত হয়েছেন।
গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে চালু হওয়া ঢাকা-কক্সবাজার রুটের ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ট্রেনে ট্রেনবালা নিয়োজিত করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
আগামী ১০ জানুযারি পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেন চালু হবে ঢাকা টু কক্সবাজার রুটে। ওই ট্রেনেও ট্রেনবালারা যাত্রীসেবার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। যাত্রীবান্ধব অভিজ্ঞতার সঙ্গে বিনয়ী, ভদ্রতায়ও তারা এগিয়ে আছেন।
তরুণীরা যাত্রীসেবায় বিশেষ ভূমিকা রাখছেন। কক্সবাজার ও সুর্বণ এক্সপ্রেস ট্রেনে এ সেবা চালু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী বলেন, ট্রেনের ভেতর যাত্রীসেবা ও নিরাপত্তায় ট্রেনবালা নামে পরিচিত তরুণীরা প্রশংসা কুড়াচ্ছেন। আমরা ইতোমধ্যে দুটি আন্তঃনগর ট্রেনে এ সেবা যুক্ত করেছি। মঙ্গলবার সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেন তারা দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, ১০ জানুয়ারি ঢাকা-কক্সবাজার রুটে পর্যটক এক্সপ্রেস নামক একটি ট্রেন চালু হবে। আমরা ওই দিন ট্রেন চালাতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত আছি। ৭৮৫টি আসন সংখ্যা নিয়ে ট্রেনটি কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন থেকে সকাল ৮টায় ছেড়ে ঢাকা পৌঁছবে বিকাল ৪টা ৩০ মিনিটে।
রেলওয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা থেকে ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে কক্সবাজারে পৌঁছবে বিকাল ৩টায়। নতুন এ ট্রেনটিতেও এই তরুণীরা যাত্রীসেবায় নিয়োজিত থাকবেন।
রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, এসব ট্রেনবালা খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া এসব তরুণী যাত্রীদের সেবায় যুক্ত থাকতে পেরে গর্ববোধ করছেন। এছাড়া বিনা টিকিটে যাত্রী তোলা বা অন্য কোনো অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকায় তাদের সেবায় যাত্রী ও রেল কর্তৃপক্ষও বেশ খুশি।
মঙ্গলবার সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনে করে সাফনান নামক এক তরুণী কমলাপুর স্টেশনে আসেন। তিনি জানালেন, তিনিসহ ১০ জন তরুণী ট্রেনটিতে করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন। যাত্রীদের সেবা প্রদানের পাশাপাশি বিশেষ করে নারী শিশুদের ওয়াশ রুমে আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেন। যাত্রীদের মালামাল রক্ষাসহ ট্রেনে মালামাল উঠানো থেকে নামানো পর্যন্ত তারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে এ পেশায় আসা তরুণীদের অনেকে জানান, সাধারণ ট্রেন যাত্রীরাও তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করছেন। চলন্ত ট্রেনে সেবার কাজ নিশ্চিত করতে চ্যালেঞ্জও রয়েছে। দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণ শেষে আমরা এ দায়িত্ব নিচ্ছি। তারা কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনে দিন-রাত যাত্রীসেবায় নিয়োজিত রয়েছেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ে অনবোর্ড ক্যাটারিং সার্ভিস প্রোভাইডার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও মেসার্স এসএ করপোরেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহ আলম যুগান্তরকে বলেন, আন্তঃনগর সব ট্রেনেই এসব তরুণীরা যাত্রীসেবায় নিয়োজিত থাকবে- রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এমনটাই জানিয়েছেন। নারী উন্নয়নে এ সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই প্রসংশনীয়। আমরা তরুণীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তারা অস্থায়ীভিত্তিতে কাজ করছে। তাদের সেবায় যাত্রীরা বেশ খুশি হচ্ছেন।
পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে মহাব্যবস্থাপক মো. নাজমুল হোসেন বলেন, আগামী ১০ জানুয়ারি ঢাকা টু কক্সবাজার পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেন চালু হবে। সেই ট্রেনেও এসব তরুণীরা যাত্রীসেবায় নিয়োজিত থাকবেন। তরুণীদের পোশাক থেকে শুরু করে ব্যবহার-সেবার ধরন সবই বিমানবালার মতো। আমরা বিমানবালার মতো তাদের প্রশিক্ষিত করে তুলছি।
রেলওয়ে মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. কামরুল আহসান বলেন, এসব তরুণী সর্বোচ্চ সেবা দিচ্ছেন। পর্যায়ক্রমে সব আন্তঃনগর ট্রেনে ‘ট্রেনবালা’ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর ফলে নারীদের একটি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।