কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে আরসা’র স্লীপার সেল শীর্ষ কমান্ডার মৌলভী হামিদ হোসেন,অর্থ সমন্বয়ক আবু তৈয়ব এবং ইন্টেলিজেন্স সেলের কমান্ডার ওসমান গনি’কে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, অস্ত্র ও এ্যামুনিশনসহ গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
রোববার (১৯ নভেম্বর) রাতে র্যাব-১৫ এর একটি আভিযানিক দল রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় উখিয়ার ১৭নং রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকা থেকে আরসার স্লিপার সেল ও ওলামা বডির অন্যতম শীর্ষ কমান্ডার মৌলভী হামিদ হোসেন প্রকাশ ওরফে ডাক্তার হামিদ, অর্থ সমন্বয়ক আবু তৈয়ব প্রকাশ ওরফে সোনা মিয়া এবং ক্যাম্প-৪ এক্সটেনশন এলাকা থেকে আরসা’র ইন্টেলিজেন্স সেলের কমান্ডার ওসমান গনি’কে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, অস্ত্র ও এ্যামুনিশনসহ তাদের আটক করা হয়।
সোমবার (২০ নভেম্বর) র্যাব-১৫ কক্সবাজার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।
এসময় তিনি বলেন, হামিদ গ্রাম্য ডাক্তারি পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তার বাবাও একজন গ্রাম্য ডাক্তার ছিলেন। এই পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষিত এবং স্থানীয় রোহিঙ্গাদের মাঝে প্রভাব থাকায় সে দ্রুত গ্রেফতারকৃত ওলামা বডির প্রধান সালমান মুরব্বীর অন্যতম সহযোগী হয়ে উঠেন এবং ওলামা বডির কার্যকরী সদস্য হন। এই সময় তিনি আরসা’র নতুন সদস্য নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথেও জড়িত ছিলেন। সালমান মুরব্বী গ্রেফতার হওয়ার পর হামিদ তার স্থলাভিষিক্ত হয়ে ওলামা বডির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং তার নেতৃত্বে তিনি স্লিপার সেল গঠন করে। তিনি ক্যাম্পে অবস্থানরত যুবক বয়সী ও শিক্ষিত রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে আরসা’য় যোগদানের জন্য কর্মী সংগ্রহ, নির্বাচিত কর্মীদের বিভিন্ন তথ্যাদি যাচাই বাছাই শেষে যোগ্য ব্যক্তিদেরকে আরসা’য় অন্তর্ভুক্ত করে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করতো এবং তাদের ভরণপোষণও চালাতো আরসার আর্থিক সহায়তায়। তিনি ৬০ জন নতুন সদস্য যুক্ত করেছে আরসায়।
র্যাব-১৫ অধিনায়ক বলেন, গ্রেফতারকৃত আরসা’র প্রধান অর্থ সমন্বয়ক আবু তৈয়ব প্রকাশ সোনা মিয়া প্রকাশ সোনালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প ৫,৬,৭ এর কমান্ডার আব্দুল হালিমের মাধ্যমে আরসা’র সক্রিয় সদস্য হয়ে উঠে। সে আরসা’র শীর্ষ সন্ত্রাসী ও আরসা প্রধান আতাউল্লাহ’র একান্ত সহকারী এবং অর্থ সমন্বয়ক নোমান চৌধুরী গ্রেফতারের পর আরসা’র অর্থ সমন্বয়কের দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন দেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের নিকট থেকে প্রতিমাসে ০৮/১০ লক্ষ টাকা হুন্ডির মাধ্যমে সংগ্রহ করে। এছাড়াও বৈদেশিক অনুদানসহ আরসা’র নিজস্ব তহবিল থেকে ৬ এবং ৭নং ক্যাম্পের মাঝামাঝি স্থানে ৩৮টি দোকান স্থাপন করে ভাড়া দেন এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন বাজারে দোকান থেকে প্রতিমাসে চাঁদা উত্তোলন করে থাকে।
তিনি আরও বলেন, আটক আরসা’র ইন্টেলিজেন্স সেলের কমান্ডার ওসমান গনির তথ্য-প্রযুক্তি এবং ইংরেজী ভাষায় তার বেশ দক্ষতা থাকায় তথ্য-প্রযুক্তির বিষয় দেখভাল করতো। এই সুযোগে সে ক্যাম্পে পরিচালিত এনজিও ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তথ্য আরসা’র শীর্ষ নেতাদের সরবরাহ করতো। পার্শ্ববর্তী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সার্বিক পরিস্থিতির খবরাখবর পৌঁছাতো। তাছাড়া বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে ক্যাম্পে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গতিবিধি লক্ষ রাখতো। কোন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা করলে গ্রুপের সদস্যরা গ্রুপে মেসেজ দিয়ে সকলকে সতর্ক করে দিতো।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মূর্তিমান আতঙ্কের নাম আরসা’র সন্ত্রাসী গোষ্ঠি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অধিকাংশ হত্যা, অপহরণ, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও মাদকসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে আরসা’র সন্ত্রাসীরা জড়িত। চলতি বছর কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আরসা’র শীর্ষ সন্ত্রাসী ও সামরিক কমান্ডার, গান গ্রুপ কমান্ডার, অর্থ সম্পাদক, আরসা প্রধান আতাউল্লাহ’র একান্ত সহকারী ও অর্থ সমন্বয়ক মোস্ট ওয়ান্টেড কিলার গ্রুপের প্রধান, ক্যাম্প কমান্ডার, ওলামা বডি ও টর্চার সেল এর প্রধানসহ ৭৩ জন আরসা’র সক্রিয় সন্ত্রাসীকে র্যাব-১৫ আটক করেছে।