ঢাকা, ১৪ নভেম্বর – ২০২২ সালে চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদান রাখায় ২৭ ক্যাটাগরিতে ৩২ বিজয়ীদের হাতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বলেন, ‘উপমহাদেশের চলচ্চিত্র বাঙালিদের হাতে গড়া।’
মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের আয়োজিত এক জমকালো অনুষ্ঠানে বিজয়ী শিল্পী ও কলা কুশলীদের মাঝে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২২ প্রদান শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় জাতির পিতার ছোট কন্যা এবং প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যখন ১৯৫৬ সালে মন্ত্রীত্ব পান তখন তিনি চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা ১৯৫৭ বিল সাধারণ পরিষদে পেশ করেন যা একই বছরের ৩ এপ্রিল পাশ হয়। উপমহাদেশের চলচ্চিত্র আসলে বাঙালিদের হাতে গড়া। আমাদের মাতৃভাষায় ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানা হয়, তারও প্রতিবাদ করেছিলেন সেই ১৯৪৭ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান।
শেখ হাসিনা বলেন, একসময় আমাদের অনেক সিনেমাহল ছিল। মানুষের বিনোদনের সুযোগ ছিল। ধীরে ধীরে সেসব বন্ধ হয়ে গেলে সিনেমা মালিকদের সাথে আমরা বসি। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ব্যাপারেও আমরা গুরুত্ব দেই। সিনেমাহলগুলোকে উন্নত করার প্রচেষ্টায় আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতায় এক হাজার কোটি টাকার একটা পূর্ণ অর্থায়ন তহবিলও গঠন করা হয়।
অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন সিনিয়র সচিব মো. হুমায়ুন কবির খন্দকার। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু।
এ বছর যুগ্মভাবে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয়েছে অভিনেতা খসরু ও চিত্রনায়িকা রোজিনাকে। দেশের বাইরে থাকায় খসরুর পুরস্কার নেন অভিনেতা আলমগীর। যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেয়েছে মুহাম্মদ আব্দুল কাইউম প্রযোজিত চলচ্চিত্র ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ এবং মো. তামজিদ উল আলম প্রযোজিত ‘পরাণ’।
‘হাওয়া’ চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের জন্য এবার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। অন্যদিকে যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন জয়া আহসান এবং রিকিতা নন্দিনী শিমু। ‘শিমু’ চলচ্চিত্রের জন্য এবার শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন সৈয়দা রুবাইয়াত হোসেন।
অন্যান্য ক্যাটাগরিতে আরও যারা পুরস্কার পেলেন-
সেরা প্রামাণ্য চলচ্চিত্র- বঙ্গবন্ধু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা- মো. নাসির উদ্দিন খান (পরাণ)।
শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী- আফসানা মিমি (পাপ পুণ্য) ।
শ্রেষ্ঠ খল অভিনেতা/অভিনেত্রী- সুভাশিষ ভৌমিক ( দেশান্তর)।
শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতা/অভিনেত্রী- মো. সাইফুল ইমাম (অপারেশন সুন্দরবন)।
শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী যৌথভাবে- বৃষ্টি আক্তার (রোহিঙ্গা) এবং মুনতাহা এমিলিয়া (বীরত্ব)।
শিশু শিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার- মো. ফারজিনা আক্তার (কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া)।
শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক- মাহমুদুল ইসলাম খান (পায়ের ছাপ)।
শ্রেষ্ঠ গায়ক- বাপ্পা মজুমদার (গান- এ মন ভিজে যায়, সিনেমা- অপারেশন সুন্দরবন)।
শ্রেষ্ঠ গায়িকা- আতিয়া আক্তার আনিসা (গান- এ শহরের পথে পথে, সিনেমা- পায়ের ছাপ)
শ্রেষ্ঠ গীতিকার- রবিউল ইসলাম জীবন (গান- ধীরে ধীরে তোর স্বপ্নে, সিনেমা- পরাণ)।
শ্রেষ্ঠ সুরকার: শওকত আলী ইমন (গান- এ শহরের পথে পথে, সিনেমা- পায়ের ছাপ)।
শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার- যৌথভাবে ফরিদুর রেজা সাগর (দামাল) এবং খোরশেদ আলম খসরু (গলুই)।
শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার- মুহাম্মদ আব্দুল কাইউম (কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া)।
শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা- এস এ হক অলিক (গলুই)।
শ্রেষ্ঠ সম্পাদক- সুজন মাহমুদ (শিমু)।
শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক- হিমাদ্রি বড়ুয়া (রোহিঙ্গা)।
শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক- আসাদুজ্জামান মজনু (রোহিঙ্গা)।
শ্রেষ্ঠ শব্দ গ্রাহক- রিপন নাথ (হাওয়া)।
শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা- তানসিনা শাওন (শিমু)।
শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান- মো. খোকন মোল্লা (অপারেশন সুন্দরবন)।
পুরস্কার হিসেবে নির্বাচিত সবাইকে দেয়া হয়েছে ১৮ ক্যারেট মানের ১৫ গ্রাম ওজনের সোনা দিয়ে তৈরি একটি পদক, পদকের একটি রেপ্লিকা ও এককালীন সম্মানী ও সম্মাননাপত্র। আজীবন সম্মাননার জন্য তিন লাখ, শ্রেষ্ঠ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রযোজক, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালকের জন্য দুই লাখ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছে এক লাখ টাকা করে।
আইএ/ ১৪ নভেম্বর ২০২৩