জাকার্তা, ০২ নভেম্বর – দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৪। বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব নুসা টেংগারা প্রদেশে এই ভূমিকম্প আঘাত হানে।
অবশ্য ভূমিকম্পের জেরে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া শক্তিশালী এই কম্পনের জেরে সুনামি সতর্কতাও জারি করা হয়নি। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব নুসা টেংগারা প্রদেশে ৬.৪ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে বলে ইউরোপীয়-ভূমধ্যসাগরীয় সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএমএসসি) জানিয়েছে।
তবে ইন্দোনেশিয়ার ভূতাত্ত্বিক সংস্থা (বিএমকেজি) বৃহস্পতিবারের এই ভূমিকম্পের মাত্রা ৬.৩ বলে জানিয়েছে। এছাড়া কম্পনের ঘটনায় কোনও ধরনের সুনামির শঙ্কা নেই বলেও জানিয়েছে তারা।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল পূর্ব নুসা টেংগারা প্রদেশের রাজধানী কুপাং থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে উপকূলীয় এলাকায় ভূপৃষ্ঠ থেকে ২৫ কিলোমিটার (১৫.৫ মাইল) গভীরে।
রয়টার্স বলছে, বৃহস্পতিবারের এই ভূমিকম্পে পূর্ব নুসা টেংগারা প্রদেশের বেশ কয়েকটি শহরে তীব্রভাবে কম্পন অনুভূত হয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির কোনও খবর পাওয়া যায়নি।
কুপাংয়ের অ্যাস্টন হোটেলের কর্মচারী স্যামুয়েল মালোহানা বলেন, হোটেলের অতিথিরা ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। পরে প্রায় ১০০ জন অতিথি তাদের কক্ষ ছেড়ে হোটেলের সামনে জড়ো হন।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু এখন তাদের বেশিরভাগই তাদের ঘরে ফিরে এসেছেন এবং হোটেলে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।’
অন্যদিকে বার্তাসংস্থা এপি বলছে, ইন্দোনেশিয়ার মেটিওরোলজি, ক্লাইমাটোলজি এবং জিওফিজিক্যাল এজেন্সির ভূমিকম্প ও সুনামি কেন্দ্রের প্রধান ড্যারিওনো বলেছেন, বেশ কয়েকটি শহর ও গ্রামে তীব্রভাবে কম্পন অনুভূত হওয়ায় শক্তিশালী এই ভূমিকম্পটি অনেকের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।
ড্যারিওনো বলেছেন, তিনি কুপাংয়ের আঞ্চলিক প্রধানের অফিসে হালকা ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট পেয়েছেন।
এপি বলছে, সংস্থাটি ভূমিকম্পের প্রাথমিক মাত্রা রিখটার স্কেলে ৬.৬ বলে জানিয়েছিল। যদিও পরে তারা সেটি সংশোধন করে ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্প ছিল বলে জানায়। ভূমিকম্পের পর মাত্রার প্রাথমিক পরিমাপের তারতম্যের বিষয়টি সাধারণ।
অন্যদিকে মার্কিন ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ইন্দোনেশিয়ায় আগাত হানা এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬.১।
উল্লেখ্য, এশিয়ার বৃহত্তম দ্বীপদেশ ইন্দোনেশিয়ার জন্যসংখ্যা সাড়ে ২৭ কোটির বেশি। ভূতাত্ত্বিক অবস্থার কারণে নিয়মিতই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে ভূমিকম্প, অগ্নুৎপাত ও সুনামির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটে থাকে।
এর আগে গত বছরের ২১ নভেম্বর ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম জাভা প্রদেশে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে প্রাথমিকভাবে ৫৬ জনের প্রাণহানির তথ্য জানানো হয়। পরে এই ভূমিকম্পে প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩১০ জনে। আহত হয়েছিলেন আরও বহু মানুষ।
এছাড়া ২০০৯ সালে পাদাংয়ে শক্তিশালী ৭ দশমিক ৬ মাত্রার এক ভূমিকম্প আঘাত হানে। সেই সময় প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে এক হাজার ১০০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং আহত হন আরও অনেকে। এছাড়া ভূমিকম্পে বাড়িঘর ও বিভিন্ন স্থাপনাও ধ্বংস হয়ে যায়।
তারও আগে ২০০৪ সালে সুমাত্রার উপকূলে ৯ দশমিক ১ মাত্রার মাত্রার ভয়াবহ একটি ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্পের পরপর আঘাত হানে সুনামি। তখন ওই অঞ্চলে ভূমিকম্প ও সুনামির কারণে ইন্দোনেশিয়ায় ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল।
মূলত প্রশান্ত মহাসাগরের তথাকথিত ‘রিং অব ফায়ারে’ ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান হওয়ায় দেশটিতে প্রায়ই ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির সক্রিয়তা দেখা যায়। এখানে টেকটোনিক প্লেটগুলোর সংঘর্ষ ঘটে। শুধু ইন্দোনেশিয়া নয়, জাপানসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সব দেশই এ কারণে ভূমিকম্পের অত্যধিক ঝুঁকিতে আছে।
সূত্র: ঢাকা পোস্ট
আইএ/ ০২ নভেম্বর ২০২৩